অনলাইন ডেস্ক
উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও বাংলালিংক নামে তরমুজ চাষ করেন একই ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা গ্রামের মো. মুস্তাকিম ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের আমজাত হোসেন। চাষের প্রথম বছরই ওই দুই কৃষক ব্যাপক সফলতা পান। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি থেকে যাবতীয় খরচ বাদে ৪ লাখ টাকার উপর তাদের আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্মাম সৌদি আরবের একটি পুষ্টিকর ও মিষ্টি জাতের ফল। এরইমধ্যে সাম্মাম ফলটি স্থানীয় মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ফলের বাহিরের অংশ হলুদ আর ভিতরের অংশ লাল। বীজ বপনের দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সাম্মাম গাছে ফল আসে। তিন মাসের মধ্যে এ ফল পরিপক্ক হয়। এ ফলটি জমির মাটির মধ্যে ও মাচা তৈরি করে চাষ করা যায়।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সিও আছে এই ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি। উপজেলার আদমপুর গ্রামে মো. মোস্তাকিম ও আমজাদ হোসেন সাম্মাম ফল, তরমুজসহ নানা প্রকার সবজি আবাদ করতে ২৬ বিঘা জমি বার্ষিক চুক্তিতে তারা ইজারা নেন। সেখানে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প নামে একটি খামার গড়ে তুলেন। ওই কৃষি প্রকল্পের মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে আড়াই বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। বাকি জমিতে তারা নানা প্রকারের সবজি চাষ করেন। আদমপুর গ্রামে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সাম্মাম ফল আর তরমুজের ক্ষেত। যে দিকে দৃষ্টি যায় সাম্মাম আর তরমুজ চোখে পড়ছে। সড়কের পাশে কৃষি প্রকল্প হওয়ায় আগত ছোট-বড় সবার নজর কাড়ছে। এরই মধ্যে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। একদিকে গাছের পরিচর্যা অন্যদিকে তরমুজ ও সাম্মাম ফল কাটা শুরু হওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে বিক্রিতে এই দুটি ফলে লাভ বেশি হওয়ায় এরইমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতে শুরু করছেন। এখান থেকে তারা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। তবে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় বেজায় খুশি কৃষক।
কৃষক মো. আমজাত হোসেন জানায়, সাম্মাম ফলটি মূলত সৌদি আরবের হলেও তারা ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় পদ্ধতিতে চারা করে আবাদ করেন। আড়াই বিঘা জমির মধ্যে সাম্মাম ফল ও ১২ বিঘা জমিতে বাংলা লিংক জাতের তরমুজের প্রায় ১৫ হাজার চারা রোপন করা হয়।
সাম্মাম ফল প্রতি ১০ গ্রাম বীজ দিয়ে ১৫ শতক জমি করা যায়। একই ভাবে তরমুজও। প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ চাষ করতে সেচ, বীজ, চারা রোপন, জমি ইজারা, পরিচর্যা, সারসহ অন্যান্য খরচ হয় তাদের প্রায় ৭ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে দেড় লাখ টাকার সাম্মাম ফল বিক্রি করা হয়েছে। আর ৫০ হাজার টাকার উপর বিক্রি হয়েছে তরমুজ। তিনি আশা করছেন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জমির বেশীভাগ সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি হবে। সাম্মাম ফলটি সব মিলিয়ে বিক্রি হবে ৪ লাখ টাকার উপর। আর তরমুজ বিক্রি হবে ৭ লাখ টাকার ও বেশী। খরচ বাদে এই দুই ফল থেকে ৪ লাখ টাকার উপর আয় হবে বলে তারা আশা করছেন।
কৃষক মো. মোস্তাকিম বলেন, সাম্মাম ফলের তেমন একটা রোগ বালাই নেই, গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়। আর এ ফল গাছের সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি আরো জানান, একেকটি সাম্মাম ফল দেড় থেকে দুই কেজির উপরে হয়। প্রতি কেজি সম্মাম ফল পাইকারি দেড় শ এবং খুচরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। পাশাপাশি তরমুজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, মূলত সাম্মাম ফলটি সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে। আমাদের মাটি এ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষক মোস্তাকিম ও আমজাদ হোসেন সাম্মামের পাশাপাশি তরমুজ ও দেশীয় পদ্ধতি চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছেন ।
তিনি আরো বলেন, ফলন ভালো করতে সার্বিক ভাবে তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করছি শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ ফল বিক্রি করে তারা অনেক লাভবান হবেন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা