চারদিকে এখন শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ শিহরন। শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
বৃহস্পতিবার পঞ্চমীর সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন। বোধন শেষে শুক্রবার থেকে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়েই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক দুর্গাপূজা। শুক্রবার মহাষষ্ঠী। দশমীতে দুর্গা বিসর্জন।
পূজায় কোনও ধরনের সহিংস হামলার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের কোনও গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে নেই। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের কন্ট্রোল রুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স থাকবে। পূজায় কোনো সহিংসতার আশঙ্কা নেই। তারপরও কোথাও হামলা হলে সেটি মোকাবিলার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।’
মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীতে এবার ১০টি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। এ বছর মোট পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩৭টি।
সাধারণত শুক্লাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হয়ে থাকে। তবে এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন হবে। পুরাণ অনুসারে, শরতকালে ভগবান রামচন্দ্র দুর্গাপূজা করেন রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে। তখন তিনি অকালে বোধন করেন বলে এটিকে অকালবোধনও বলা হয়ে থাকে।
বোধন শব্দের অর্থ চৈতন্যপ্রাপ্ত বা জাগরণ। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অন্যতম আচার।
শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান থাকলেও বসন্তে অর্থাৎ চৈত্র মাসে যে বাসন্তীপূজা হয় তাতে বোধনের প্রয়োজন হয় না।
মূলত অকালবোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে-মন্দিরে সন্ধ্যায় করা হবে বন্দনাপূজা করা হবে।
আর এই পূজার পরেই শুক্রবার ষষ্ঠী তিথি থেকে তীর-ধনুক, চক্র-গদা, খড়গ-কৃপাণ, কল্যাণ ও ত্রিশুল হাতে শক্তিরূপী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে স্থান নেবেন মণ্ডপে-মন্দিরে।
দশহস্তে অস্ত্রে সজ্জিত ত্রিনয়ণী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক খুলে যাবে ও জেগে উঠবেন দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দশভূজা দেবী দুর্গা। শুরু হবে বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ এবং দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস শেষে মাতৃরূপে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঠাই করে নেবেন বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি দিয়ে কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যে আসা মা দুর্গা। মূলত দুর্গাপূজা হয় আশ্বিনের শুক্লা ষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত।
এ সময় ভক্তরা মেতে উঠবে আরাধনায়, ঢাকে পড়বে কাঠি আর ধূপের ধোঁয়া ও ঢাক-ঢোলের সঙ্গে দেবী দুর্গার ভক্তিতে সরব হয়ে উঠবে পূজা মণ্ডপ। চলবে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত। ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের দশমী এবার মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর)। দশমীতে দুর্গা বিসর্জন।
বোধনের আগেই শেষ হবে শেষ তুলির আঁচড়, পড়ানো হবে প্রয়োজনীয় অলংকার। নিপুন শিল্পকর্মে শুধু মা দুর্গাই নয়, জেগে উঠবেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিক সহ অন্যান্য দেবতারাও।
পূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন থিম নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত বিশাল বিশাল প্যান্ডেলের কাজে থাকা কারিগররাও। কাজের দক্ষতা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পাশাপাশি ডেকোরেটররা এখন ব্যস্ত আলোকসজ্জা নিয়েও।
বাঙ্গালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে মুড়ি, নাড়ু, মিষ্টি বানানোর ধুম। প্রতিটি বাড়িতেই উৎসবের আবহ যেনো দশভূজা মাকে বরণ করে নিতে না থাকে কোনো কমতি।
পাঁচদিন ব্যাপী এই উৎসব শেষে দেবীদুর্গা যখন ঘোড়ায় চড়ে বিদায় নেবেন মর্ত্য থেকে তখন ভক্তকূল বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনীকে শ্রদ্ধাভরে এগিয়ে দিবেন কৈলাশের পথে আর বলবেন, ‘ আসছে বছর, আবার হবে’।
বছরব্যাপী অপেক্ষার পালা শেষ করে শারদোৎসবের আগমনী সুর এখন বাঙালি সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে। পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা