আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন
দুর্নীতিবিরোধী ‘শুন্য সহনশীলতা’র প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার ( ৯ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপনকালে টিআইবির এই দাবি জানিয়েছে। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন: দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের মুট কোর্ট সোসাইটি (ডিইউএমসিএস) এর সাথে যৌথভাবে দুর্নীতিবিরোধী মুট কোর্ট প্রতিযোগিতা; দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার এবং কার্টুন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে টিআইবির অনুপ্রেরণায় ৪৫টি অঞ্চলে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক (স্বজন), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) এবং ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপ এর সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে র্যালি, সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তথ্য মেলা, গণশুনানিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১১টায় টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষিত গণমাধ্যম জবরদখল’ শীর্ষক একটি আলোচনা এবং দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম। এ সময় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক আফসান চৌধুরী ও জুলফিকার আলি মাণিক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, ড. সুরাইয়া বেগম, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, সাংবাদিক তালাত মামুন, শাকিল আহমেদ, রিয়াজ আহমেদ, রেজওয়ানুল হক রাজা, আলমগীর স্বপনসহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির ন্যায়পাল অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
এ সময় আলোচকরা বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ এখন অনেক বেশি। এর মধ্যেই সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। তাই আগামীতেও ভয় ভীতির উর্ধ্বে থেকে সাংবাদিকদের কাজ করে যেতে হবে। সাংবাদিকতাকে আদর্শিক জায়গা থেকে গ্রহণ করে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পূর্ণ পেশাগত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এসময় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষ করে এই দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ঝুঁকিটা বেশি। এর মধ্য দিয়েই সাংবাদিকদের টিকে থাকতে হবে। চাপের মুখে থেকেও সাংবাদিকতার মান ও নৈতিকতার সাথে আপোষ না করে নিজেদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের মাধ্যমে পেশাগত উৎকর্ষ সাধন নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা শেষে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন সাংবাদিককে এই পুরস্কার দেয়া হয়। প্রিন্ট মিডিয়া- আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে যশোরে দরিদ্র মায়েদের জন্য সরকারের মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দায়িত্বে অবহেলাসহ নীতিমালায় দূর্বলতা নিয়ে প্রকাশিত ৭ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য যৌথভাবে পুরস্কার অর্জন করেন যশোরের দৈনিক গ্রামের কাগজের চিফ রিপোর্টার এম. আইয়ুব, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোতাহার হোসাইন ও ফয়সাল ইসলাম, স্পেশাল করেসপনডেন্ট দেওয়ান মোরশেদ আলম, স্টাফ রিপোর্টার স্বপ্না দেবনাথ, মিনা বিশ্বাস, এস এম আরিফুজ্জামান ও উজ্জল বিশ্বাস। প্রিন্ট মিডিয়া- জাতীয় ক্যাটাগরিতে ‘তিতাসে কেজি মেপে ঘুষ লেনদেন’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পুরস্কার অর্জন করেন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ও সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম হারুন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া- প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের ঋণ বিষয়ক দুর্নীতি ও অনিয়ম ’ শিরোনামে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরে প্রচারিত তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার লাভ করেন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সিনিয়র রিপোর্টার ও সাংবাদিক ইকবাল আহসান। আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া- প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘অনুসন্ধান’ টিম।
একইদিন বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের জয়নুল গ্যালারিতে ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ২০১৯’ এর পুরস্কার ঘোষণা এবং বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত কার্টুনিস্টদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়। একইসাথে পুরস্কার বিজয়ী ও নির্বাচিত কার্টুন নিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ড্যানিশ অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড অব মিশন রেফিকা হাইতা, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ড অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড অব মিশন ও ডিরেক্টর অব কোঅপারেশন সুজানে মুয়্যেলার এবং ডিএফআইডির গভর্ন্যান্স অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ ইউসুফ। আরো উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার বিচারক কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবিব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
১৪তম ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০১৯ এর ‘ক’ বিভাগে (১৩-১৮ বছর) ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ মশিউর রহমান মাহিন, পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আইজায়া ট্রিপ্লেন্ড হেভেন ও নাটোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান লুবনা। আর ‘খ’ বিভাগে (১৯-২৫ বছর) ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল মালিক নোবেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক বিন কামাল ও সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মমি-ত-উর-রহমান। উভয় গ্রুপের বিজয়ী তিনজনকে যথাক্রমে ৭৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। এছাড়া দু’টি বিভাগ থেকে মোট ৩৫ জন কার্টুনিস্টকে বিশেষ মনোনয়ন দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এছর দু’টি বিভাগে ২৫৪ জন কার্টুনিস্টের আঁকা মোট ৪৭৮টি কার্টুন জমা পড়ে।
কার্টুন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত মোট ৫৮টি কার্টুন নিয়ে আজ ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের জয়নুল গ্যালারি-১ এ প্রদর্শনী চলবে। প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে সন্ধ্যা ০৭টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা