অনলাইন ডেস্ক
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার প্রায় সব সবজিচাষি এখন সর্বস্বান্ত। এদিকে এবারের মৌসুমে ঘাটতি থাকায় সামনের মৌসুমের সবজি উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানান চাষিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সবজি চাষাবাদ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাশাপাশি পুষ্টির অভাব দেখা দেবে। এই সমস্যা দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা করে তাঁদের প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে সবজি চাষে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
সবজিচাষিদের এমন ভয়াবহ সংকটকালে কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি সবজিচাষিদের সবজি বিক্রি এবং তাঁদের ঘাটতি নিরসনে কোনো প্রকার তদারকি করছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
যদিও প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজার ফসলের মাঠে কৃষকের ফসলের খোঁজ নিতে আসার কথা থাকলেও কালেভদ্রেও তাঁদের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
মৌসুমি সবজি যেমন কলা, বেগুন, টমেটো, শসা, লাউ–কুমড়া, লেবুসহ নানা সবজি নষ্ট হচ্ছে খেতে। বিভিন্ন স্থানীয় বাজারগুলোতে লকডাউন থাকায় কৃষক তাঁর পণ্য নিতে পারছে না, পাশাপাশি বাজারে পাইকার না থাকায় ন্যায্য দামও পাচ্ছেন না চাষিরা।
বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে সবজি চাষ করে বিক্রি করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া এবং এনায়েতপুর ইউনিয়নে অন্তত ১ হাজার ৫০ একর জমিতে সবজির চাষা হয়েছে; যা বিক্রি না হওয়ায় এবং বাজারমূল্য না থাকায় কোটি টাকার বেশি লোকসানের মুখে পড়েছেন সবজিচাষিরা।
রাঙ্গামাটিয়া আর পাহাড় অনন্তপুর এবং এনায়েতপুরের গোপীনাথপুর ও ফুলতলায় উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। এখানকার সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা কিনে নিয়ে যান।
এবার করোনাভাইরাসের কারণে এবং স্থানীয় কিছু পাইকারের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ তাঁদের। তাঁরা বলেন, বাজারে নিলে করলা দুই টাকা কেজি, কলা ও বেগুন কেউ এক টাকা করেও কেনে না।
কোনো সবজি বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। সব সবজি পচে যাচ্ছে খেতে। এদিকে মৌসুমও শেষ। তাই সামনের মৌসুমে নতুন সবজি চাষের টাকাও তাঁদের হাতে নেই। সরকার ঋণসহায়তা ও প্রণোদনা না দিলে সবজির আবাদ করা সম্ভব নয়।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলাটির মৌসুমি সবজি উৎপাদনের জন্য দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে আলু, হলুদ, রসুন, কলা, শিম, বরবটি, করলা, বেগুন, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজির চাষ হয় এ জনপদে। প্রতি সপ্তাহে উপজেলার কালাদহ, গোপীনাথপুর, বাবুগঞ্জ ও ফুলবাড়িয়ায় সবজির বড় হাট বসে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা আসেন সবজি কিনতে।
এখন করোনার প্রভাবে পাইকার না আসায় এবং বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন থাকায় স্থানীয় পাইকারেরা সবজি কিনছেন না। এর মধ্যে আবার স্থানীয় পাইকারদের সিন্ডিকেট করার অভিযোগও করছেন কৃষকেরা।
উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের পাহাড় অনন্তপুরের সবজিচাষিদের ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী বলেন, রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের একটি বড় অংশের মানুষের সবজি চাষের ওপর তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করে। বিশেষ করে পাহাড় অনন্তপুরে প্রচুর মৌসুমি সবজির আবাদ হয়।
এবার করোনার প্রভাবে চাষিরা খুবই বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। তাঁরা বাজারে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সব প্রান্তিক সবজিচাষিকে সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় আনা প্রয়োজন এবং সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা।
তবে উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে লেবুর জন্য জনপ্রিয়। ফুলতলা গ্রামের লেবুচাষিরা শুরুত লেবুর দাম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও স্থানীয় কিছু সিন্ডিকেটের কারণে দাম ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে বলে জানান ফুলতলার একজন লেবুচাষি।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার উপজেলায় ১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে শুধু সবজি। এর মধ্যে করলা চাষ হয়েছে ২৬০ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে শসা, লাউ, বেগুন, কুমড়াসহ অন্যান্য সবজির চাষ হয়েছে।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে আমরা সবজিচাষিদের ব্যাপারে গাইডলাইন পাইনি, তবে ক্ষতিগ্রস্ত সবজিচাষিদের অবস্থা খুবই খারাপ। সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। কেননা কৃষকেরা সবজি চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশে খাদ্যঘাটতিসহ পুষ্টিহীনতার একটা বড় সংকট দেখা দিতে পারে।’
জেসমিন নাহার আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে শুধু চাল, ডাল আলু ইত্যাদি দিতে দেখছি। বর্তমানে ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে যদি কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে কৃষকেরা অন্তত তাঁর পণ্যের ন্যায্য দাম পেতে পারেন।’
পৃথিবীতে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশও। সবকিছু বন্ধ থাকায় পণ্যের দাম না পাওয়ায় গ্রামের প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছনে।
দ্রুত সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত সবজিচাষিদের তালিকা করে তাঁদের প্রণোদনা এবং সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে সবজি চাষে আবারও উদ্বুদ্ধ করে তোলা দরকার।
fblsk
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা