যত ভালো ওপেনারই হোক নতুন বলের ঝড়-ঝাপটা সামলানো একটু কঠিন। ইনিংসের শুরুতে এ ঝড় সামলানোর পর তামিম ইকবালের আরেকটু ধৈর্যশীল হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ জেমি সিডন্স।
২০০৭ থেকে ২০১১—এ চার বছর বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন সিডন্স। তামিম, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের অন্য ধাপে নিয়ে যাওয়ার পেছনে অস্ট্রেলিয়ান এ কোচের রয়েছে অসামান্য অবদান। এর আগে তামিম নিজেই একবার বলেছেন, ব্যাটিংয়ে তাঁর এখনকার সব সাফল্যের ভিত গড়া সিডন্সের হাতেই। কিন্তু সেই তামিম এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন।
ব্যাটিংয়ে ছন্দটা আর নেই। কোনোমতে হয়তো শুরুটা পাচ্ছেন, কিন্তু টিকতে পারছেন না। এক প্রান্ত আগলে টানতে পারছেন না ইনিংস। প্রশ্ন উঠেছে নিম্নমুখী স্ট্রাইকরেট নিয়েও। বিশ্বকাপে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজেও ব্যাট হাতে দিতে পারছেন না সামনে থেকে নেতৃত্ব। যে তামিম গত কয়েক বছর ধরে ছিলেন আস্থার জায়গা, ভালো শুরু পেতে যাঁর বিকল্প ছিল না, এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন দলে তাঁর জায়গা নিয়ে।
গত বিশ্বকাপে তামিমের ব্যাটিং গড় ছিল ত্রিশের (২৯.৩৭) নিচে। শ্রীলঙ্কায় সিরিজের দুই ম্যাচে তাঁর স্কোর ০ ও ১৯। শুধু তাই নয়, তাঁর মতো একজন ওপেনার শেষ ছয় ইনিংসেই হয়েছে বোল্ড আউট। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে তামিমের ব্যাটিং টেকনিক নিয়েও। নিজের এ বাজে সময়ে সাহায্যের জন্যই সিডন্সের সঙ্গে সম্প্রতি যোগাযোগ করেছেন তামিম। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির দল সাউথ অস্ট্রেলিয়ার কোচের দায়িত্বে থাকা সিডন্সও সাবেক শিষ্যের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত।
ক্রিকইনফোকে সিডন্স বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা সিরিজে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত তামিমকে স্বচ্ছন্দই লেগেছে। প্রথম ম্যাচে সে একটি অসাধারণ ইয়র্কার (লাসিথ মালিঙ্গার) শিকার হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে সে যে শট খেলে আউট হয়েছে, সেটি খেলার দরকার ছিল না। সে বলের ওপর (চড়াও) গিয়ে খেলার চেষ্টা করছে যেটি দরকার নেই। এক-দুই করে নিয়ে স্কোর সচল রাখছে। তবে সে কিছুটা ধৈর্যও হারাচ্ছে।’
দ্বিতীয় ম্যাচে ইসুরু উদানার অফ স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে স্কয়ার কাট খেলতে গিয়ে প্লেড অন হন তামিম। প্রয়োজনীয় ফুটওয়ার্ক ছাড়াই শটটি অনেকটা জোর করেই খেলার চেষ্টা করার মাশুল দিতে হয়েছে এ ওপেনারকে। তামিমের স্কোর তখন ৩১ বলে ১৯। স্বাভাবিক গতিতে রান তুলতে না পারার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টাতেই ওই শট খেলেছেন তামিম। সিডন্স মনে করেন তামিম ঠিক এ জায়গা এসেই ধৈর্য হারাচ্ছেন। ‘দলগুলো তাঁকে ভালো বল করছে এবং বাউন্ডারি মারতে দিচ্ছে না। তাকে আরেকটু ধৈর্যশীল হতে হবে, খেলাটা আরেকটু গড়াতে দিতে হবে। প্রথম ২০ ওভারের মধ্যে সব রান করার চেষ্টা না করে তাঁর পুরো ৫০ ওভার খেলার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত’—বলেন সিডন্স।
এমনিতে তামিমের ব্যাটিংয়ে বড় কোনো খুঁত দেখছেন না ৫৫ বছর বয়সী এ কোচ। তবে দু-একটি হালকা পরিমার্জনের পরামর্শ দিয়েছেন, ‘তামিম (ব্যাটিংয়ের) কৌশলগত দিক থেকে ঠিকই আছে। আমি হলে হয়তো তার সামনের পা আরেকটু সোজা করতাম। কিন্তু এমনিতে তাকে অন্যান্য সময়ের মতো দুর্দান্তই লেগেছে।’ সিডন্সের পরামর্শ পেতে শ্রীলঙ্কা সিরিজের ফুটেজ তাঁকে পাঠিয়েছিলেন তামিম। সিডন্স নিজেই জানিয়েছেন, এ সিরিজের প্রায় প্রতিটি ডেলিভারিই তিনি দেখেছেন।
তামিমের সোজা পায়ে খেলা নিয়ে সিডন্স যে কথা বলেছেন সে ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে। নতুন বলে স্বাভাবিকভাবেই সুইং থাকে। এ অবস্থায় সামনের পা আড়াআড়ি নিয়ে বলের ওপর গিয়ে খেলার চেষ্টা করলে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ভেতরে ঢুকলে এলবিডব্লিউর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সিডন্স অবশ্য এসব নিয়ে কথা বলেননি। সাবেক শিষ্য উইকেটে কীভাবে বেশিক্ষণ টিকতে পারবেন, সেই পথ বাতলে দিলেন তিনি, ‘প্রথম ১০ ওভার তাঁকে পারি দিতে হবে। এরপর বলের মুভমেন্ট কম হবে। তখন সে ইনিংস গড়তে পারবে। অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেংথের বলও খেলতে পারবে।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে তামিম বলেছিলেন, নিজের ওপর চাপটা তিনি টের পাচ্ছেন। সিডন্স মনে করেন, স্বাভাবিক প্রত্যাশার চাপ নেওয়া নয় তামিম নিজের ওপর অত্যধিক চাপ নিয়ে ফেলছেন। আর তাঁর সাবেক শিষ্যটি কিছুটা দুর্ভাগ্যের শিকারও হচ্ছেন বলে মনে করেন সিডন্স, ‘ব্যাটিংয়ে ওপেন করা কঠিন। মাঝের ওভারগুলো থেকে বল তখন বেশি মুভ করে। তখন টিকে থাকা কঠিন হলেও তামিম অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের হয়ে এ কাজে সফল। প্লেড অন আর কয়েকটা ভালো ডেলিভারি মিলিয়ে আমার মনে হয় সে কিছুটা দুর্ভাগ্যেরও শিকার।’
সিডন্সের পরামর্শ তো পেয়েছেন তামিম। কাল সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এবার সেটি মাঠে ফলানোর পালা।
NB:This post is copied from prothomalo.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা