ফজলুল বারী
সিলেট সিটিতে বিএনপি থেকে নির্বাচিত একজন মেয়র আছেন। তিনি জানেন মেয়রকে সরকারের সঙ্গে-সরকারের অধীনে কাজ করতে হয়। নির্বাচিত হলেও মেয়রকে সরকারের মাধ্যমে শপথ নিয়ে কাজ করতে হয় সরকারের সমর্থনে। সরকারকে দাবড়ানো মেয়রের কাজ নয়। সম্ভবও নয়। কারন সরকার যে কোন মূহুর্তে যে কোন মেয়রকে বরখাস্তও করতে পারে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিএনপির দুই প্রার্থী শুরু থেকেই নির্বাচনে ভুল ঔদ্ধত্যপূর্ন বক্তব্য নিয়ে হাঁটছেন। যা নির্বাচনের পরিবেশ অহেতুক উত্তপ্ত-উত্তেজক করা হচ্ছে। এই ভুল বিএনপিকেই পোড়াবে। কারন তাদের প্রথম কাজ ছিল মানুষকে ভোটে ফেরানো। পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলে মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। পরিস্থিতি উত্তেজক হয়ে উঠলে ভোটকেন্দ্র হাহাকার করবে ভোটারের জন্যে। যা সবার জন্যেই ক্ষতিকর হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি ঘাটতি হলো ভুল স্বীকার করেনা। এরা সারাক্ষন প্রতিপক্ষের ভুল খোঁজে। নিজের ভুল দেখেনা বা নিজেরা যে ভুল করতে পারবে সেটিও ভাবেনা! ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে যখন উত্তর-দক্ষিন দু’ভাগে ভাগ করা হয় তখন বিএনপি এর বিরোধিতা করেছিল। অথচ ঢাকার যে জনসংখ্যা এখানে সিটি কর্পোরেশনের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া উচিত। সিডনিতে সিটি কর্পোরেশনের সংখ্যা ১৪ টি। নতুন নির্বাচনে বিএনপির দুই প্রার্থীর একজন তাবিথ আউয়াল আগেও নির্বাচন করেছেন। পানামা দুর্নীতি নথিতে তার নাম এসেছিল। তিনি যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সেই নির্বাচনে বিজয়ী আনিসুল হক দেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন। ঢাকা দক্ষিনের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাবা সাদেক হোসেন খোকা স্বনামখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা মেয়র ছিলেন। কিন্তু তিনি জমিদার ছিলেননা। দুর্নীতির মামলার বিচার এড়াতে তিনি আমেরিকা চলে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু ইশরাক গোপনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। তিনি যে বিশাল সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন তা তার বাবা’র দুর্নীতির উত্তরাধিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সাদেক হোসেন খোকার লাশ দেশে আনা হয়। ইশরাকের উচ্চারনে সে কৃতজ্ঞতা নেই।
বিএনপি ঘোষনা দিয়েছে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের কোন আস্থা নেই। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশন কত খারাপ তা প্রমান করতে তারা নির্বাচনে যোগ দিয়েছে। এরমানে নির্বাচনে জনগনের ম্যান্ডেট নিতে হয় একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যে তারা নির্বাচনে এসেছে! অথচ স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনে যে কারও অংশ গ্রহনের মূল লক্ষ্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সংস্থার মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা মেটানো। হেং করেঙ্গা তেং করেঙ্গা করতে কারও সিটি নির্বাচনে নয় জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। এসব করা মানে ভোটারদের ঠকানো। কারন ভোটে জিতলেতো তারা এভাবে কাজ করতে পারবেনা। পূর্বসূরীদের মতো তাবিথ-ইশরাকও যদি আওয়ামী লীগকে অন্তঃসারশূন্য দল ভাবেন তাহলেতো বলতে হবে তারাও বোকার স্বর্গে আছেন। মুজিব বর্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগের উজ্জ্বল এক সময়ে তারা নির্বাচন করছেন। আর তারা এমন এক দলের ব্যানারে নির্বাচন করছেন যে দল এই মুজিবকেও মুছে দিতে বোকার মতো নানা কাজ করে করে নিজেরাই এখন মুছে যেতে বসেছে। বুদ্ধিমান হলে তাবিথ-ইশরাক আচরনে কথায় এমন প্রক্রিয়া চালাবেন যাতে নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ন থাকলেই তাদের ভোটাররা ভোট দিতে যাবেন। নইলে বাসায় বসে সবাই টিভি দেখবেন।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত দু’জনের কথাবার্তা ইতিবাচক। ভোটাররা নেগেটিভ শুনতে শুনতে বিরক্ত। ঢাকার যেমন ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, এই মহানগরীর যত জঞ্জাল-উচ্চ দ্রব্যমূল্য এসব সরকারি দলের প্রার্থীদের নির্বাচনে পোড়াবে। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে সরকারিদলকে ভোটারদের ডোর টু ডোর যাতায়াত আরও বাড়াতে হবে। কিন্তু কিছু ভুল দিয়ে শুরু করেছে শাসকদল। ওবায়দুল কাদের প্রথম বলেছেন, এই নির্বাচনে হারলেও সরকারের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বেনা বা সরকার পরিবর্তন হবেনা। শুরুতেই এসব হেরে যাবার কথা কেনো? না দলের দুই প্রার্থী হেরে যাবার মতো? এরপর ওবায়দুলল কাদের বললেন বিএনপির মহাসচিব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসাবে কেনো পারবেননা? এতোদিন ধরে ক্ষমতায় থেকে এটি বড় শিশুতোষ কথা হয়ে গেলোনা? নির্বাচন বিধিতে আছে কোন মন্ত্রী-এমপি-মেয়র এরা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে পারবেননা। বিধি জেনে কিভাবে এমন আবদার করেন ওবায়দুল কাদের? আর বিধি জেনে কিভাবে তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমুকে নির্বাচনী দায়িত্ব দেয়া হয়েছে? তারাতো এমপি। নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমদ বলেছেন এমপি হিসাবে তারা নির্বাচনের প্রচারনায় যাবেননা। অফিসে বসে কাজ করবেন। দায়িত্বশীলদের এ আরেক শিশুতোষ কথাবার্তা। সরকারি দলের নেতাদের এমন শিশুতোষ কথাবার্তা নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত-ভোটারদের সামনে প্রার্থীদের হেয় করবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা