অনলাইন ডেস্ক
২০১৯ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে লর্ডসে খেলে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তার একমাত্র সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন বাংলাদেশেই। তার হৃদয়ের খুব কাছেই বাংলাদেশ আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জাতীয় দলের হয়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। খেলেছেন বিপিএলও। তবে এবার তার বাংলাদেশে আসার কারণ ভিন্ন। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছেন।
লিস্ট এ ক্রিকেটে ১১৪০২ রান করা হাফিজ এবারের লিগ খেলবেন মোহামেডানের হয়ে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম, এজাজ আহমেদ, সেলিম মালিক, শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদিরা ঢাকা লিগে এক সময় নিয়মিত খেলেছেন। তাইতো ঢাকা লিগের ঐতিহ্য, প্রতিদ্বন্দ্বীতা সম্পর্কে সব জানা ৪১ বছর বয়সী হাফিজের। সেই ঝাঁজ নিতেই এবার বাংলাদেশে এসেছেন। মোহামেডানের জার্সি পাওয়ার পর কথার ঝাঁপি খুলে দেন হাফিজ।
‘সত্যি বলতে, এই ঐতিহাসিক ক্লাবের অংশ হতে পেরে আনন্দিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে যতবারই এসেছি ততবারই এই ক্লাবের কথা শুনেছি। মানুষের মুখে মুখে এই ক্লাবের নাম। আমি যখন প্রস্তাব পেয়েছি সাব্বির ভাইয়ের কাছ থেকে, আমি অ্যাভেইলেভেলও ছিলাম… মনে হলো এই ঐতিহাসিক ক্লাবটির অংশ হওয়ার এটাই সুযোগ এবং এখানকার ভালোমানের ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা নেওয়া উচিত। আমি জানি এখানে সব সময়ই দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়। এখানে আসা এবং বাংলাদেশের কিছু আন্তর্জাতিক ও তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ ও চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছি।’
ঢাকা লিগে আবাহনী ও মোহামেডানের উত্তেজনা নিয়ে অনেক গল্প আছে। বিদেশী ক্রিকেটাররাও দেশের এই দুই ক্লাবের প্রতিদ্বন্দ্বীতা সম্পর্কে জানেন। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা প্রায়ই লিগে অংশগ্রহণ করতেন বলে তাদের মুখে সব সময়ই ক্লাব ক্রিকেটের লড়াইয়ের প্রশংসা ছুটত। আবাহনী মোহামেডানের দ্বৈরথ অজানা নয় হাফিজেরও।
`আমি এটা নিয়ে প্রচুর শুনেছি। কিন্তু কখনো অভিজ্ঞতা হয়নি। প্রথমবার আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এসেছি। আমি আগেও বলেছি যতবার এসেছি, শুনেছি ঢাকা লিগের প্রতিদ্বন্দ্বীতার কথা। মোহামেডান ঐতিহাসিক দল। এখানের মানুষ ক্রিকেটের প্রতি আবেগপ্রবণ। ভক্ত, সমর্থকরাও পাগল। তারা প্রত্যেকবার এই দলকে জিততে দেখতে চায়। আমি সত্যিই ঢাকা লিগ উপভোগ করতে চাই।’
মোহামেডানে হাফিজ সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন, মিরাজকে। আন্তর্জাতিক সূচিতে ব্যস্ত থাকায় শুরুর দিকে ৫-৬ ম্যাচে তাদের পাওয়া যাবে না। তাতে খুব বেশি চিন্তিত নন হাফিজ। বরং জায়গা পাকাপাকি করার জন্য তরুণদের বড় সুযোগ দেখছেন তিনি।
‘আমরা বেশ কিছু খেলোয়াড়কে শুরুতে পাচ্ছি না। তারা সফরে গেছে। তবে দ্রুতই তারা আবার ফিরে আসবে। আমি মনে করি তরুণদের নিজেদের মেলে ধরার এবং সামর্থ্য দেখানোর সেরা সুযোগ। পাশাপাশি অন্য দলগুলোও নিজেদের তরুণ ক্রিকেটারদের উঠিয়ে আনতে বড় সুযোগ পাচ্ছে। দল হিসেবে আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব। দলে কিছু আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ও আছে…আপনি সৌম্যর কথা বললেন, তাকে আমরা পাচ্ছি। আমরা প্রত্যেকে জানি সে কতটা প্রতিভাবান। সঙ্গে আরো কয়েকজন ভালো খেলোয়াড়ও আছে। তাদের সঙ্গে মোহামেডানে আনন্দ নিয়ে খেলতে মুখিয়ে আছি।’ সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করতে অপেক্ষায় থাকবেন তা বলতে দ্বিধা করেননি হাফিজ,‘তারা বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো খেলোয়াড়। আমি তাদেরকে খুব উচুঁতে মূল্যয়ন করি। তারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং বড় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমরা প্রতিপক্ষ হয়ে অনেকবারই খেলেছি। এবার একই দলে খেলার সুযোগ হয়েছে এবং একই জার্সিতে একই দলকে জেতানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছি যা সত্যিই খুব উপভোগ্য হবে।’
মোহামেডান এবার আটঘাট বেঁধে শিরোপা জিততে মাঠে নামছে। ঢাকা লিগে মতিঝিল পাড়ার দলটি সবশেষ শিরোপা জিতেছিল ২০০৯-১০ মৌসুমে। হাফিজকেও সেজন্য দলে ভিড়িয়েছে। তবে এখনই শিরোপার কথা চিন্তা না করে মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দিতে চান তিনি।
‘আপনি চ্যাম্পিয়ন হবেন তা বলে দিতে পারবেন না। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি আমাদেরকে মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আমি আগাম ঘোষণা দিয়ে কোনো কিছু করতে পছন্দ করি না। আমি মাঠে পরিশ্রম করি। দলগতভাবে ভালো খেলতে মুখিয়ে আছি। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করবো এবং সঠিক স্প্রিট নিয়ে খেলবো। আমরা সঠিক কাজ করছি কিনা সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি নিজেদের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করি তাহলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকবে।’
২০১৯ সালের পর পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট খেলা হয়নি হাফিজের। অবসর নেওয়ায় খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এবার মোহামেডান প্রস্তাব দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে লুফে নেন। তার বিশ্বাস, এখনো ক্রিকেটে অনেক কিছু দেওয়ার তার আছে। সঙ্গে তরুণদেরও সাহায্য করতে চান।
‘ক্রিকেটের প্রতি আমার অনুপ্রেরণা বেশ সহজ; খেলা এবং উপভোগ করে যাওয়া। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছি সত্য কিন্তু আমি অনুভব করি আমার ভেতরে এখনও ক্রিকেটে দেওয়ার অনেক কিছু আছে। পাশাপাশি আমি এমন একটি প্রক্রিয়ায় থাকতে চাই যেখানে তরুণ ক্রিকেটাররা জানতে পারবে কিভাবে ক্রিকেটটা এগিয়ে নিতে হয়। আমি প্রত্যেককে সাহায্য করতে চাই যাদের শেখার আগ্রহ আছে। তারা যদি কেউ কিছু চায় অবশ্যই আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত। সত্যি বলতে, আমি ক্রিকেটটা উপভোগ ও আবেগের জন্যই খেলছি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের উত্তেজনা অনুভব করতেই আসলে এবার এখানে আসা।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা