অনলাইন ডেস্ক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় করোনা সংক্রমণ বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে সামাজিক দূরত্ব না মানা, আবদ্ধ জায়গায় যথেষ্ট ভেন্টিলেশন (বায়ু চলাচল) কম থাকা, জনসংখ্যা অনুপাতে টিকার আওতায় কম আসা এবং দেশ ও বিদেশ থেকে ঢাকায় বেশি লোকের আগমন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই নগরে ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষের সতর্ক আচরণের প্রবণতা কম, ফলে অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ রুখতে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ছিল, তা নেয়নি সরকার। এটি রোধে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন।
করোনাসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৮ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায় আক্রান্ত ৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ১৪৪ জনের। আর ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ২৪৯ জন এং মারা গেছে ১২ হাজার ৫২৪ জন।
দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। এই ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে জানুয়ারিতে। এই মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ জুন-জুলাইতে দেখা দিলেও আগস্টে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। সে মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৪ জন। ফেব্রুয়ারিতেও মোট শনাক্তের অর্ধেক ছিল ঢাকা বিভাগে।
প্রথম ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয় এপ্রিলে। সেই মাসেও ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ শনাক্তের অর্ধেক হয়েছিল ঢাকায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘মৃত্যুর কারণ ভিন্ন হতে পারে। তবে ঢাকায় সংক্রমণের উচ্চ হারের কারণ হলো এই বিভাগের জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিনিয়ত দেশ ও দেশের বাইরে থেকে লোক ঢাকায় চাকরির জন্য আসা-যাওয়া করছে। এদের অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এখানে ভাসমান লোক অনেক বেশি। এ ছাড়া এই সংক্রমণ রোধ করার জন্য যেমন উদ্যোগ নেয়ার দরকার ছিল, সেটা হয়নি।
‘এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গুরুতর অসুস্থ হলেই লোকজন ঢাকার হাসপাতালে আসছে। এসে সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না। শয্যাসংকটের কারণে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। সেই জন্য ঢাকায় এসে মৃত্যুটা বেশি।
‘এ ছাড়া ঢাকায় অফিস-আদালতে এসি রুমের কারণে বাইরের বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। আবদ্ধ জায়গায় বিয়ে-সাদি বেশি হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারমাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘দেশে করোনার প্রথম থেকে শুরু করে তৃতীয় ঢেউয়ে এসেও অন্যান্য জায়গার চেয়ে ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি। এর কারণ রাজধানী শহরে জনসমাগম বেশি। ফলে শুধু ঢাকা নয়, বিশ্বের অন্যান্য রাজধানী যেমন দিল্লি, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, ব্রাজিলের রিওডিজেনিরোতেও বেশি।
‘মূলত জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় ভাইরাসটির ট্রান্সমিশন বেশি হয়েছে। ঢাকার ক্ষেত্রে তাই ঘটছে। আর আবদ্ধ জায়গা, যেখানে বাতাস প্রবাহিত হয় না, যেমন- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মল, অফিস, চেম্বারে রোগটি ছড়াতে সহায়ক পরিবেশ পায়।’
বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘ঢাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান কারণ করোনার নতুন নতুন ধরন ও উপধরন। কারণ ডেল্টা, ওমিক্রন বা এর সাব-ভ্যারিয়েন্ট যেটাই বলা হোক, সেগুলো দ্রুত ছড়ায়। ঢাকায় ঘনবসতি হওয়ায় সংক্রমণ সহজেই ত্বরান্বিত হয়। তা ছাড়া করোনার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, আক্রান্তরা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
‘কিন্তু যেখানে ভেন্টিলেশন কম অর্থাৎ আবদ্ধ জায়গায় ভাইরাসটির ঘনত্ব বেড়ে যায় আর আরেকজন যখন নিঃশ্বাসের তা মাধ্যমে নেয়, তখন সহজেই আক্রান্ত হয়। কারণ মানুষের সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা জীবাণুর ভাইরাল লোডের উপর নির্ভর করে। ফলে খোলা জায়গা থেকে বদ্ধ ঘরে বায়ু প্রবাহ না থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এ জন্য সবাইকে মাস্ক পরা, ভেন্টিলেশন সুবিধায় থাকা, দ্রুত টিকা নেয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরত্বরোপ করতে হবে।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা