রাজধানী ঢাকায় ক্রমেই বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। সম্পদের পাহাড়ের ওপরে বসে আছেন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। ধনী-গরিবের আয়ের এই বিপুল বৈষম্য কুরে কুরে খাচ্ছে রাজধানীবাসীর শারীরিক ও মন। এমনই তথ্য সামনে এসেছে সাম্প্রতিকতম এক গবেষণায়।
ঢাকা শহরের মানুষদের অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিস বা বিআইডিএস। সোমবার প্রতিষ্ঠানের এক অনুষ্ঠানে সেই গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন প্রধান গবেষক জুলফিকার আলী। তাতে জানা গিয়েছে, রাজধানীর ৭১ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন। আর ৬৮ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত।
চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে ঢাকা শহরের ১২ হাজার ৪৬৮ মানুষের ওপরে সমীক্ষা চালিয়েছেন বিআইডিএস-এর গবেষক দল। তাতে দেখা গিয়েছে, রাজধানীর মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের আয় পুরো শহরের বাসিন্দাদের মোট আয়ের ৪৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় মোট আয়ের ১ শতাংশের কম।
শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের ৩.৫ শতাংশ মানুষ এখনও তিন বেলা খেতে পান না বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
বিআইডিএস আয়োজিত দুই দিনের সম্মেলনের গতকাল ছিল শেষ দিন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা দেশে আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়ন করতেই হবে। এ ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতি উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী ১০ বছর যদি ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়, তাহলে দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব।
ঢাকায় বসবাসরত মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ বায়ুদূষণজনিত রোগে ভুগছে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ৮ শতাংশ। সরাসরি বায়ুদূষণজনিত কারণ নয়, কার্ডিয়াক সমস্যায় ভুগছে ৮ শতাংশ আর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ১.৩ শতাংশ। বায়ুদূষণ পরোক্ষে এ দুটি রোগে আক্রান্ত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ এসেছে বরিশাল বিভাগ থেকে। ঢাকায় আসা মানুষের প্রায় ২১ শতাংশ এসেছে বরিশাল বিভাগ থেকে। তবে গত পাঁচ বছরে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ এসেছে কিশোরগঞ্জ থেকে। এরপর আছে বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ভোলা।
আইএলওর সাবেক স্পেশাল অ্যাডভাইজর ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া তাদের দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে; সঙ্গে বৈষম্য কমিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রাজিলেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে; কিন্তু বৈষম্য কমানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৈষম্যও বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক।
সাম্প্রতিকতম অন্য এক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরগুলির তালিকায় স্থান ঢাকার স্থান উপরের দিকে। এক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান নিচের দিক থেকে তিন নম্বর। পরিবেশ, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, শিক্ষা খতিয়ে দেখে এই তালিকা তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরে ১৪০টি দেশ নিয়ে এই তালিকা তৈরি করেছে লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটে (ইআইইউ)। সবচেয়ে খারাপ শহরের তালিকায় এক নম্বর দামাস্কাস। লাগোস আছে দ্বিতীয় স্থানে। এর পরেই ঢাকার স্থান।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা