ফেসবুকে একটি পোষ্ট বেশ শেয়ার হচ্ছে। এই পোষ্টে ১০টি ছবি রয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে হাতে মোটা একটি টাকার বান্ডিল নিয়ে রাস্তায় গরীবদের মধ্যে টাকা বিলি করছেন এক ব্যক্তি আর তাকে ঘিরে রেখেছে অনেক মানুষ।
আর একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে নতুন একশো টাকার নোট পড়ে রয়েছে গাড়ির পেছনে রাস্তায়। সেগুলো কুড়িয়ে নিতে হুড়োহুড়ি করছেন অনেকে।
গরীবদের সাহায্য করতে গিয়ে ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় গাড়ি থেকে টাকা ছিটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো: ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে।
সেজন্য শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সমালোচনার শিকার হচ্ছেন তিনি।
ছবিগুলো তুলেছেন জাতীয় দৈনিক নিউএজ পত্রিকার সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ। রাস্তা থেকে টাকা কুড়ানোর একটি ছবি ছাপাও হয়েছে পত্রিকাটিতে।
ঘোষ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতায় যে পোষ্ট দিয়েছেন সেটি শেয়ার হয়েছে পাঁচশ’র বেশি। তার পোষ্টের নিচে কমেন্টগুলোতেই সমালোচনার একটি চিত্র পাওয়া যায়।
আহমেদ আতিফ আবরার লিখেছেন, “এতো রাজাদের আমলের সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব।” আজফার-ই-আলম লিখেছেন, “টাকা পয়সা সম্মান ঠিকই পাইছে কিন্তু বিবেক বুদ্ধিটা পায় নাই।”
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষক আলী রিয়াজের এ সম্পর্কিত একটি পোষ্টও শেয়ার হয়েছে প্রায় পাঁচশ মতো। সেই পোষ্টের নিচে কমেন্ট করে আজাদ আবুল কালাম লিখেছেন, “আমরাতো মধ্যযুগ অতিক্রম করতে পারিনি!”
এম শেহাব উদ্দিন লিখেছেন, “আমাদের সমাজে কিছু মানব প্রাণী অর্থ ও ক্ষমতায় উচ্চ হয়েছে কিন্তু মানবতা ও বিবেকের দিক দিয়ে উচ্চ হতে পারেনি।”
এত উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা যেভাবে অর্থ বিলি করেছেন তার পদ্ধতির কারণে মূলত সমালোচনা উঠেছে। এই অর্থের উৎস কি সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে?
বাংলাদেশে উন্নয়ন নিয়ে সরকার যে গর্ব করছে রাস্তা থেকে টাকা কুড়ানোর এই দৃশ্য আসলে বাংলাদেশে দারিদ্রের চিত্র তুলে ধরছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সিইও শাহ মো: ইমদাদুল হক বলছেন, তিনি সেদিন গাড়ি নিয়ে সায়েন্স ল্যাব এলাকা পার হচ্ছিলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ রয়েছে তাই বেকার বসে থাকা দরিদ্র মানুষজনকে তিনি কিছু অর্থ সহায়তা দেবেন বলে সেদিন গাড়ি থামিয়েছিলেন।
তিনি বলছেন, “ওইখানে অনেক মহিলারা দাঁড়ানো ছিল। সেখানে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ছিল যার কাছে পরিচয় দিয়ে আমি সাহায্য চাইলাম। তিনি আশপাশে রাউন্ডে থাকা একটি গাড়িকে ডাকলেন। একটা লাইন তৈরি করার চেষ্টা করলাম।
প্রথমে সবাই রাস্তার মাঝখানে মিডিয়ানের উপর দাঁড়িয়েছিল। আমি টাকা দিতে শুরু করলে কিছুক্ষণের মধ্যে লাইন ভেঙে আমাকে ঘিরে ধরল সবাই।”
তিনি বলছেন, “চারবার সবাইকে লাইনে দাড় করানোর চেষ্টা করলাম, প্রত্যেকবার তারা এসে ঘিরে ধরে আমাকে। এক পর্যায়ে সেই পুলিশ অফিসার আমাকে বললেন স্যার চলে যান আপনি। এভাবে দিতে পারবেন না। কিন্তু আমি তারপরও দিতে চেষ্টা করলাম।”
তিনি বলছেন, একপর্যায়ে তিনি গাড়িতে উঠে যান। ছবিতে দেখা যাচ্ছে লোকজন তার গাড়ি ঘিরে ধরে গাড়ির জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
“আমি আট হাজার টাকার মতো দিয়েছি এভাবে। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি কাত করে ফেলছে এমন অবস্থা। যখন অবস্থা বেগতিক দেখলাম তখন হাতে যে বাকি টাকা ছিল সেগুলো রাস্তায় ফেলে দিয়েছি।”
ইমদাদুল হককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি আর একটু পরিকল্পিতভাবে এই অর্থ বিলি করতে পারতেন কিনা।
তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজের ব্যক্তিগত অর্থ দান করতে গিয়েছিলেন সেদিন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
তবে তিনি ইন্দ্রজিত কুমার ঘোষের সমালোচনা করে বলেছেন, “সে শুরু থেকেই ছবি তুলেছে। সে সব দেখেছে যে আমি চারবার লাইন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শুরুর দিকের ছবি একটাও না দিয়ে সে বেছে ওই নেগেটিভ ছবিটাই ছাপিয়েছে।”
ইন্দ্রজিত কুমার ঘোষও ইমদাদুল হক যে চিত্র দিয়েছেন তেমন বর্ণনাই দিয়েছেন। তবে তিনি বলছেন, “টাকাগুলো পড়ে গেল, সে ফেলে দিল, নাকি কেউ থাবা দিয়ে ফেলে দিয়েছে সেটা আমি নিশ্চিত না। আমি সব ধরনের ছবি ফেসবুকে দিয়েছি। আমি বলিনি সে টাকাটা ছুঁড়ে ফেলেছে।”
যদিও ছাপা হওয়া ছবির ক্যাপশনে তেমনটাই লেখা। ঘোষ বলছেন, “অনেকে ছবি দেখে না বুঝে রিঅ্যাক্ট করছে। আমি আমার পোষ্টে বিষয়টা ক্লিয়ার করবো।”
তবে সরকারি একজন কর্মকর্তা গাড়ি থেকে যেভাবে রাস্তায় নেমে মোটা বান্ডিল হাতে নিয়ে অর্থ বিলি করছেন সেটিকে বিত্তের দম্ভ বলেও সমালোচনা হচ্ছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা