জাপানে তাণ্ডব চালাল টাইফুন হাগিবিস। এখনও পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নিখোঁজ রয়েছেন ১৭ জন। নিরাপদ স্থলে সরানো হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। ঝড়ের জেরে ভূমিধস ও নদীতে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
গত ৬০ বছরে জাপানের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় মনে করা হচ্ছে এটিকে।
রোববার সকালে ঝড় কিছুটা দুর্বল হলেও তার জেরে ধ্বংস কিছু কম হয়নি। বাতিল করতে হয়েছে রাগবি বিশ্বকাপের আরও একটা ম্যাচ। প্রবল বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে জাপানের নাগানোতে। চিকুমা নদীর জলোচ্ছ্বাসের জেরে আশপাশের এলাকা জলমগ্ন। বাড়ির তিনতলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছে বন্যার পানি।
উদ্ধারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে জাপানের সেনাবাহিনী। বাড়ির ছাদে বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে টাওয়েল নেড়ে বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গিয়েছে দুর্গতদের।
নাগানো শহরের এক জরুরি পরিষেবা বিভাগের অফিসার ইয়াসুহিরো ইয়ামাগুচি জানিয়েছেন, ‘এক রাতে আমরা ৪২৭টি বাড়ির ১,৪১৭ জনকে সরিয়েছি। আরও কত বাড়ি বন্যা কবলিত তা এখনও স্পষ্ট নয়।’ আকাশপথে তোলা ফুটেজে দেখা গিয়েছে, নাগানো শহরে কাদাজলে প্রায় অর্ধেক ডুবে রয়েছে বুলেট ট্রেন।
হাগিবিসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত যানচলাচল। টোকিয়োর বহু ট্রেন ও বুলেট ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। স্তব্ধ বিমান পরিষেবাও।
সকাল থেকে এলোপাথাড়ি হাওয়া বাড়ির ছাদগুলিকে খেলনার মতো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। জাপানের ‘শিবা’ প্রদেশের বাসিন্দাদের মনে গত মাসের টাইফুনের স্মৃতি এখনও দগদগে। তারই মধ্যে শনিবার সকাল থেকে টের পাওয়া যাচ্ছিল আরেক টাইফুন ‘হাগিবিস’-এর পদধ্বনি।
অবশেষে স্থানীয় সময় সন্ধে সাতটা নাগাদ জাপানের ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ল সে। হাগিবিসের জেরে ইতিমধ্যেই জাপানের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, বন্যাকবলিত। টোকিয়ো সংযোগকারী সমস্ত উড়ান রোববার সকাল পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।
সরকারের তরফে প্রায় ৬ লক্ষ বাসিন্দাকে এলাকা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব মতো ৮৭০ মাইল এলাকা জুড়ে এগোতে থাকা ওই টাইফুনের জেরে তীব্র ঝোড়ো হাওয়া বইবে। এই ঝড়ের কেন্দ্রে ঘণ্টায় প্রতি ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দপ্তরের।
টোকিওর হানেদা এবং চিবা’র নারিতা বিমানবন্দর মোট এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে।
শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাগবি বিশ্বকাপের দু’টি ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। টুর্নামেন্টের ৩২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ম্যাচ বাতিল করা হলো।
শনিবারে জাপান গ্রাঁ প্রি’র ফর্মুলা ওয়ান কোয়ালিফাইং রেইসও স্থগিত করা হয়েছে।
গত মাসেই টাইফুন ফাক্সাই জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে বাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। ঐ টাইফুনে ৩০ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয় যার অধিকাংশই এখনো মেরামত করা হয়নি।
ফিলিপিনের তাগালগ ভাষায় হাগিবিস অর্থ ‘গতি।’ ১৯৫৯ সালে টাইফুন ভেরা’র পর থেকে এটিকেই জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় মনে করা হচ্ছে।
টাইফুন ভেরার সময় বাতাসের বেগ ঘন্টায় ৩০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল এবং ঐ ঝড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহত অথবা নিখোঁজ হয়।
১৯৫৮ সালে যে টাইফুনের জেরে প্রায় ১২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, তীব্রতায় হাগিবিস তার সমকক্ষ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ বার হতাহতের সংখ্যা অত হবে না বলেই আশা তাঁদের। কারণ জাপান আবাসন তৈরি ও বিপর্যয় সতর্কতা ব্যবস্থা নির্মাণের ব্যাপারে অত্যন্ত কড়াকড়ি অনুসরণ করে। ফলে এ বার আগে থাকতেই বাসিন্দাদের সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জাপান টাইমস।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা