ভাড়াটিয়া পরিষদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আগামী ১লা জানুয়ারি ২০২০ সাল থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিসহ সারাদেশে বাড়ি ভাড়া ও দোকান ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে ভাড়াটিয়ার পরিষদের সভাপতি মোঃ বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, বছরের প্রথম মাস এলেই বাড়িওয়ালারা বাড়িভাড়া বৃদ্ধির একটি অলিখিত নিয়ম চালু করে। ইতিমধ্যে, ২০২০ সালের জানুয়ারী মাস থেকে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির জন্য নোটিশ ভাড়াটিয়াদের নিকট প্রদান করা হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক একেক বাসার ধরণ অনুযায়ী অস্বাভাবিক ভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। অনেক জায়গায় বছরে একাধিকবার বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। আর যারা আমরা ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতে বাধ্য তাদের এই নির্মম অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। নিজেদের কর্মস্থল এবং বাচ্চাদের স্কুল-কলেজের জন্য হলেও ভাড়া বৃদ্ধিতে আমরা থাকতে বাধ্য হই।
তিনি বলেন, এই ভাড়াবৃদ্ধির হেতু হিসেবে তাদের কাছে অনেকগুলো মনগড়া কারণ থাকে। যে সকল কারণ দেখিয়ে ভাড়া বৃদ্ধির অনৈতিক কাজকে নৈতিক করার চেষ্টা করে তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে, ১) বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। ২) সার্ভিস চার্জ। ৩) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল বৃদ্ধি। ৪) লিফটের চার্জ। ৫) জেনারেটরের তেলের দাম বৃদ্ধি। ৬) সিঁড়ি মোছার জন্য বুয়ার বেতন। ৭) দারোয়ানের বেতন ইত্যাদি। মোট কথা ভাড়াটিয়াদের জিম্মি করে করে বাড়িওয়ালা প্রতিবছর তাদের মন মতো ও সুবিধা মতো ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। সেই সাথে এডভান্স বা অগ্রিম ভাড়া নেয়ার একটি প্রথা এই বাড়িওয়ালাদের মধ্যে চালু আছে। বাড়িওয়ালারা যুক্তিহীনভাবে বাড়ি ও দোকান ভাড়ার অগ্রিম নিয়ে থাকে। আর বাসা ভাড়া নেওয়ার পর তাদের এই নির্যাতনের পরিমাণ যেন আরো বেড়ে যায়। রাত ১০-১১ টার মধ্যে গেইট বন্ধ, বাড়ির ছাদে উঠা যাবে না, বাসায় বেশি মেহমান আসা যাবে না আর আসলেও বেশিদিন থাকা যাবে না, সময়মত পানি না দেওয়া, ভাড়া দিতে ১-২ দিন দেরি হলে রাস্তা-ঘাটে অপমানজনক কথা বলা, ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া না দেয়া, ভাড়ার রশিদ না দেয়া, বাসার কোন রিপেয়ারিং থাকলে সেটা করে না দেয়া, পর্যাপ্ত সিকিউরিটি না থাকা ইত্যাদি। এইভাবে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির উর্ধ্বগতির চাপে ও তাদের নির্যাতনে আমরা যারা সাধারণ ভাড়াটিয়া তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছি। আর যদি কোন ভাড়াটিয়া এই ভাড়াবৃদ্ধির প্রতিবাদ করে এবং বর্ধিত ভাড়া দিতে অস্বীকার করে সেইক্ষেত্রে এই বাড়িওয়ালাগণ খারাপ ব্যবহার করে এবং জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে থাকে। বিনা নোটিশে তাৎক্ষণাৎ বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেয়। সাধারণত বাড়িওয়ালারা এলাকার প্রভাবশালী লোক হওয়ায় ভাড়াটে গুন্ডা-মাস্তান দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং রাস্তা-ঘাট, জনসম্মুখে অপমান করে থাকে।
ভাড়াটিয়ার পরিষদের সভাপতি বলেন, আমরা যারা সাধারণ ভাড়াটিয়া আয় সীমাবদ্ধ, এই সীমাবদ্ধ আয়ের টাকা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই অনেক কষ্ঠসাধ্য, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ, চিকিৎসা খরচসহ প্রভৃতি খরচ বৃদ্ধির পরেও এই বাড়িওয়ালাদের অত্যাচারে আমরা হিমশিম খাই। আমাদের আয়ের প্রায় ৬০-৭০% টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণের কোন পথ পাচ্ছি না। আমরা আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, এই বাড়িভাড়া বৃদ্ধি রোধে হাইকোর্টের দেওয়া রুলের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রজ্ঞাপন জারির দাবি করছি।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জান্নাত ফাতেমা, কেন্দ্রীয় নেতা শেফালী হোসেন, মোঃ মোস্তফা, জামাল শিকদার প্রমুখ। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, রাজনীতিবিদ দীপু মীর, শিক্ষক নেতা সামছুল আলম, শ্রমিক নেতা তপন সাহা প্রমুখ নেতৃবন্দ।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা