তাসকিনা ইয়াসমিন : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর তথ্য মধ্যে দেশে ৪৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এরমধ্যে ২ জন চিকিৎসক আছেন। দেশে জনপরিসরে সংক্রমণ হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরমধ্যেই আজ শুক্রবার সারাদেশের মসজিদে জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে এখন সাধারণ ছুটি চলছে। তারমধ্যেই মানুষ দিব্যি বাজারে যাচ্ছে। আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছুটি দেয়নি। তার কর্মীরা অফিসে যাচ্ছে। চলছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। এরমধ্যে করোনা ভাইরাসের মতো অদেখা দৈত্যকে মোকাবেলা করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সরকারকে লড়াই করতে হবে এমনটিই বলছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং গবেষক আফসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, চীন ছাড়া অন্যান্য দেশগুলো অত্যন্ত বিপর্যস্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেইক্ষেত্রে আমরা সরকারের ব্যাপারে বলতে পারি সরকার অন্যদেশের মতোই করছে। গত এক মাসে যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া প্রয়োজন ছিল, যেগুলো নিলে মানুষের লাভ হতো, অনেকক্ষেত্রে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটা জিনিস সরকার বুঝতে পারছে না। এই যে সংখ্যাগুলো সরকার দিচ্ছে এগুলোর ব্যাপারে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এটা কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটা ভারতেও হচ্ছে। বিশ্বাস করতে চাইছে না মানুষ যে এত কম রোগী। এই কারণে যে বিদেশ থেকে যারা এসেছে তাদের ১০ ভাগের বেশি মানুষের টেস্ট হয়নি। যদি টেস্ট এত কম হয় তাহলে বলতে পারি না আমরা যে আসলে বাকিদের কি হচ্ছে।
আফসান চৌধুরী বলেন, আমরা সবসময় যে কথাটা বলি, উদ্দেশ্য ভাল হতে পারে কিন্তু দক্ষতা না থাকলে ঐ উদ্দেশ্য দিয়ে কিছু লাভ হবেনা। আমাদের সরকারের এখন সেটা হচ্ছে বড় বিষয় যে, দক্ষতাটা আছে কিনা! এর সাথে সাথে যুক্ত হচ্ছে, ১০ টা ল্যাবরেটরির কথা বলেছে। তিনটা চালু হয়েছে। সাতটা এখনও হয়নি। এটা যদি সিভিলিয়ানরা না পারে তাহলে সেনাবাহিনীকে বলুক।কিন্তু সেখানে সরকার অতটা আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। বা সরকার যতটা চটজলদি কাজ করা উচিত সেটা করছে না। আবার সরকার কিছূ কাজ করছে যার কারণে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।
ডাক্তারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে কেন তারা ডাক্তারকে জেল, জুলুম, ফাঁসির ভয় দেখাচ্ছে এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা কিন্তু মানুষ গ্রহণ করেনি। মানুষ বলতে পারে যে ডাক্তাররা যত্ন করে না ইত্যাদি। কিন্তু না চিকিৎসা করলে থানায় খবর দিন। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য কথা। পরে সরকার এটা প্রত্যাহার করেছে। দ্বিতীয়ত, গণমাধ্যমের উপরে নজরদারি করার জন্য উপসচিব নোটিশ দিয়েছে। উপসচিব কোন দায়িত্ব পালন করেছে যে সে এখন গণমাধ্যমের উপর এসে মাতবরি করবে। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। যার ফলে আবার সেই নোটিশ প্রত্যাহার করেছে। তৃতীয়ত, মিটফোর্ডের যিনি প্রধান ছিলেন, বলেছিলেন পয়সার অভাবে মাস্ক দিতে পারব না। তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনটা খুব মৌলিক বিষয় জনপরিসরে আসছে। এখন যেহেতু মানুষ বাড়িতে বসে আছে আর কিছু করার নেই। সরকারের প্রশাসন, সরকারের জনব্যবস্থাপনার দিকে মানুষের নজর এখন অনেক বেশি। সেইক্ষেত্রে সরকার কিন্তু সেই দক্ষতাটা এখনও দেখাতে পারেনি।
সরকারকে সবার দিকে সমান দৃষ্টি দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গরীব মানুষ সম্পর্কে যা বলছে, রাশেদ তিতুমীর বলেছে, ব্যাংকের মাধ্যমে গরীব মানুষকে সহায়তা করতে হবে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর মালিকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ বলল যে, আমরা কিছুতেই বন্ধ করতে পারবনা। এরপর যখন সরকার তাদেরকে টাকা দিল তখন তারা বলল বন্ধ করতে পারব। এটা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়, তাহলে বিজিএমইএর অবস্থানটা কি? পাবলিক তো এখন চিন্তা করা শুরু করেছে, বিজিএমইএ বড় না পাবলিক বড়। এই ধরণের সংবাদগুলো সরকারের কার্যকারণের মধ্য দিয়ে আসছে। সরকার যদি সিদ্ধান্তগুলো সবলভাবে না নেয় তাহলে মানুষ প্যানিক করবে। প্যানিকের কারণে মানুষ জিনিসপত্র কিনে নিয়েছে। তারা তিনমাস, ছয় মাসের জিনিস কিনেছে। এরপর তো ধ্বসটা নামবে। সারা দুনিয়াতে এই পরিচালনা করাটা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে এসে গেছে। এখন পর্যন্ত সরকার বাজারের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কিছু করছে। বিলাতে বলা হচ্ছে, রেশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য। আমাদের সরকার কি এগুলো নিয়ে ভাবছে। এখন কিন্তু দায়টা সরকারের প্রমাণ করার।
চিকিৎসকদের কেন পিপিই দেয়া হয়নি এ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সারা দুনিয়া জেনে গেছে। তার সরকারের বলার সুযোগ নেই যে, প্রস্তুত নয়। ডাক্তারদের জন্য পিপিই সরকারের ছিলনা। এখন বলা হচ্ছে পিপিই এসে যাবে। কীটগুলো ছিল না। দেড় হাজার ছিল। আজকে কিছু কীট এসেছে। জন পর্যায়ে সংক্রমণ হয়েছে এটা নিশ্চিত। সরকার এখন বলছে আমরা জানি না যে এটা কোত্থেকে এসেছে। তার মানে জনপর্যায়ে সংক্রমণ হয়েছে। জনপর্যায়ের সংক্রমণ হলে তো টেস্টগুলো করতে হবে। এই সরকার কথন থেকে এই টেস্টগুলো করবে। যতটা দৃঢ়তার সঙ্গে সবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার সরকার সেটা এখনও নিচ্ছেনা। দ্বিতীয়ত, প্রাচীনপন্থি আমলারা সাধারণত ধান্দাবাজী করতে ব্যস্ত। একে ধরব, তাকে জেলে নিয়ে যাবে। এটা যে এখনকার সময়ে কেউ করছে না বা করা যাবেনা। যারা করছে তারা অন্যান্য ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা এই ধরণের ধান্দাবাজী করছে। ইন্ডিয়ান নাগরিকদের পুলিশ পেটাচ্ছে। রাস্তায় যে থাকবে তাদের পেটাও। কিন্তু ডাক্তারকে কেন পেটাবে? যদি ডাক্তাররা বলে যে, আমরা রোগী দেখবনা। তখন কি করবে? দুজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে তাদেরকে বরখাস্ত করেছে। সরকারের আর কোন কাজ নেই। ফেসবুকে কে পোস্ট দিয়েছে এগুলো দেখার জন্য সরকার লোক রেখেছে? সরকারের কাছে এই ধরণের আচরণ আশা করা যায়না। আমি আবারও বলছি এই দেশের জনশক্তি হচ্ছে প্রধান শক্তি সরকারের। সরকারের রাজনৈতিক দলও নেই, আমলা নেই, কেউ নেই। তাদেরকে যদি সরকার সঙ্গে না নিয়ে রাখতে পারে তাহলে এই লড়াই জেতা যাবে না। পৃথিবীতে অন্য যায়গাতে যেটা খুব প্রকটভাবে আসছে যেখানে সিদ্ধান্তগুলো সবাই মিলে নিচ্ছে এবং প্রয়োগ করতে পারছে তারা জিতে যাচ্ছে। যারা পারছে না তারা বিপদে পড়ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভাল উদাহরণ।
আফসান চৌধূরী বলেন, আমরা স্বাস্থ্যখাতে যে ক্ষতিটা হচ্ছে তা আমরা জানিনা। অন্যটা হচ্ছে, আর্থিক খাতকে বাঁচাতে হবে। শুধূ বিজিএমইএর স্বার্থ দেখলে চলবে না। সবার স্বার্থ দেখতে হবে।