ব্রেইন টিউমারের জন্য সাত বছর আগে দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেন মেইজি। এই তরুণীকে আবার বই পড়ার ব্যবস্থা করে দিল এক চশমা। সেই বিশেষ ধরনের চশমা দিয়ে এবারের হে উৎসবে বই পড়ে দেখালেন মেইজি। জানাচ্ছেন কাজী ফারহান হোসেন পূর্ব
২০১২ সালে রুটিনমাফিক চোখ পরীক্ষা করাতে যান যুক্তরাজ্যের ১৬ বছরের মেইজি ম্যাক এডাম। পরীক্ষা পর ডাক্তার জানান, মেইজির বাঁ চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। এমআরআই স্ক্যানের রিপোর্টে দেখা যায়, মেইজির অপটিক নার্ভের ওপর একটি টিউমার হয়েছে, যা তার প্রায় সবটুকু দৃষ্টি শক্তিই কেড়ে নিচ্ছে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তাঁর ডান চোখেরও দৃষ্টি শক্তি কমতে কমতে একটি ছোট্ট অস্বচ্ছ বিন্দুতে পরিণত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে ‘টানেল ভিশন’। আর সেই সঙ্গে মেইজি হারায় পৃথিবীর রং দেখার আনন্দও।
হাল ধরল গিভ ভিশন
‘গিভ ভিশন হল’ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বাধাগুলো দূর করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গবেষণা করা হয়। একই সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন ডিভাইসও তৈরি করে থাকে তারা। তাদের ডিভাইসগুলোর মধ্যে ‘সাইট প্লাস গগলস’ উল্লেখযোগ্য। এ বছরের মে মাসে তারা বিবিসির প্রযুক্তিবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ক্লিক’-এর আমন্ত্রণ পায়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক স্পেন্সার কেলি এমন একজনের সাক্ষাৎকার নিতে চান, যিনি কিনা প্রথমবারের মতো সাইট প্লাস ব্যবহার করবেন। গিভ ভিশন কালক্ষেপণ না করে যুক্তরাজ্যের হেয়ারফোর্ডের দ্য রয়াল ন্যাশনাল কলেজ ফর দ্য ব্লাইন্ড (আরএনসি)-এ চলে যায়। সেই কলেজের ছাত্রী মেইজিকে বেছে নেওয়া হয় সেই সাক্ষাৎকারের জন্য। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয় হেয়ারফোর্ডশায়ারের এবারে সাহিত্যবিষয়ক উৎসব ‘হে ফেস্টিভাল’-এ।
বই পড়া গেল ছয় বছর পর
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক স্পেন্সার কেলি গগলসটা ঠিক মতো কাজ করছে কি না তা মেইজির কাছে জানতে চাইলে মেইজি জানান, কেলির মাইক্রোফোন, হাসি ও শার্টের বোতামগুলো দেখতে পাচ্ছেন। এ ছাড়া দর্শক সারিতে বসে থাকা লাল জ্যাকেট পরিহিত এক মহিলাকেও দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান। এরপর তাঁকে তাঁর অত্যন্ত প্রিয় বই জে কে রোলিংয়ের ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন’ পড়তে দেওয়া হয়। বইটির প্রথম বাক্য পড়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন মেইজি। একই সঙ্গে সঞ্চালকসহ অনুষ্ঠানে অতিথিরাও হয়ে পড়েন আবেগাপ্লুত।
সাইটপ্লাসের কলকবজা
সাইটপ্লাস একটি আধুনিক ডিজিটাল ম্যাগ্নিফায়ার ও বাইনোকুলার হিসেবে কাজ করে। গিভ ভিশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও স্ট্যান কারপেনকো বলেন, এ প্রযুক্তি মূলত স্বল্পদৃষ্টির অন্ধদের জন্য উপযুক্ত। বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিভাইসটি রেটিনার কার্যকরী অংশে আলো পাঠিয়ে স্বল্পদৃষ্টির মানুষকে চারপাশ আরো স্পষ্টভাবে দেখার সুযোগ করে দেয়। তাদের প্রথম দিককার চশমাগুলোতে একটি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেটে স্মার্টফোন বসানো থাকে। সেই স্মার্টফোনটি তার ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে চোখের যে অংশগুলো এখনো সুস্থ আছে সেখানে আলো পাঠায়। তা ছাড়া গগলসটিতে একটা রিমোট কন্ট্রোল লাগানো থাকে, যার মাধ্যমে স্মার্টফোনের তোলা ছবিগুলোকে নড়াচড়া করিয়ে জুম, কন্ট্রাস্ট, ব্রাইটনেস ইত্যাদি করা যাবে।
এ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের বড় বড় চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়তই নিজেদের গগলসের ডিজাইন নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে এই ভারী গগলসকে যথাসম্ভব সাধারণ চশমার আকারে নিয়ে আসা।
আগামী বছর সাধারণ চশমার মতো হালকা একটা সংস্করণ বাজারে আসবে। লন্ডনের মুরফিল্ডস আই হসপিটালের সাহায্যে এই ডিভাইসটি তৈরি করবে গিভ ভিশন।
সাইট প্লাসের দাম?
তিন লাখ ২২ হাজার টাকায় কেনা যাবে সাইট প্লাস। সঙ্গে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি ও সফটওয়্যার আপগ্রেডের সুবিধাও থাকবে। আর ভাড়া নিতে চাইলে প্রথমে ৫৩ হাজার টাকা দিতে হবে। পরের প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা করে সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে।
NB:this post is copied from kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা