ঢালিউডে একসময় নায়ক–নায়িকার সংখ্যা ছিল অনেক। ছবিও তৈরি হতো অসংখ্য। ক্রমশ কমতে কমতে এখন নায়কের সংখ্যা হাতের কড়েতে গোনা যায়। আর না গুনেও বলে দেওয়া যায় তাঁদের হাতে থাকা ছবির সংখ্যা। এমনকি নায়কদের মধ্যে যিনি ‘নাম্বার ওয়ান’, এখন বছরে তাঁর মুক্তি পায় গড়ে মাত্র ৫টি ছবি। নায়িকাদের তা–ও পায় না। এক বছরে নায়ক রাজ্জাকের মুক্তি পেত ৮ থেকে ১০টি সিনেমা। কোনো কোনো বছর আরও বেশি। সেটা ষাটের দশকের কথা। মুক্তির পাশাপাশি ডজনখানেক ছবির শুটিংও চলত একই সময়ে। সে সময় ছিলেন আরও একঝাঁক নায়ক-নায়িকা। তাঁরাও বসে থাকতেন না। আশি থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বছরে নায়ক আলমগীরের মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা ছিল গড়ে ৮ থেকে ১০টি। সে সময় বছরে মোট ২০ থেকে ২২টি ছবির শুটিং চলত তাঁর। তখনকার দিনে নায়কদের মধ্যে ছিলেন ওয়াসিম, ফারুক, সোহেল রানা প্রমুখ। নায়িকা কবরী, শাবানা, ববিতাদের কাজের পরিমাণ ছিল প্রায় একই রকম। নব্বই দশক থেকে শুরু করে ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত ইলিয়াস কাঞ্চন, নাঈম, মান্না, সালমান শাহ, রিয়াজ, ওমর সানী, ফেরদৌস, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমারাও অনেক কাজ করেছেন। সেই তুলনায় এখনকার নায়ক–নায়িকাদের কাজের পরিমাণ খুবই কম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢালিউডে অনেক দিন ধরেই দুঃসময় চলছে। তিন-চার বছর ধরে অবস্থা হয়েছে আরও ভয়াবহ। কমছে সিনেমার সংখ্যা ও প্রেক্ষাগৃহ। এতে তারকাদের কাজের পরিমাণও কমে গেছে। চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হিসেবে তারকাদের হাতে যে পরিমাণ কাজ থাকা দরকার, সেটা নেই। ফলে তাঁদের পেশা ক্রমশ একটি অনিশ্চিত পেশায় পরিণত হচ্ছে। আরিফিন শুভ, বাপ্পী, সাইমন, নিরব, ইমন, সিয়াম, অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, পরীমনি, বুবলী, নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা মিম, পূজা চেরীসহ দ্বিতীয় সারিতে থাকা জায়েদ খান, শিপন, আইরিন, শিরিন শিলা, মিষ্টি জান্নাতেরাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। এঁদের মধ্যে কোনো কোনো তারকার বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা হাতে গোনা ৪ বা ৫টা। কোনো কোনো তারকার মাত্র ১টি। গত বছর শাকিব খানের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সংখ্যা ৫। এ বছর এখন পর্যন্ত ২টি। শুটিং চলছে আরও ২টি ছবির। অন্যদিকে গত বছর মাত্র দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে আরিফিন শুভর। এ বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায় তাঁর একটি ছবি। একটির শুটিং চলছে, অন্য একটির শেষ হয়েছে। পেশাদার শিল্পীর জন্য এই সংখ্যা অতি নগণ্য বলে মনে করেন তিনি। শুভ বলেন, ‘আমাদের এই পেশা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত পেশায় পরিণত হয়েছে। অনেক তারকার হাতেই কাজ নেই।’
গত বছর দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে সিয়ামের। এ বছর ১টি। শুটিং চলছে দুটির। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘দিন দিন কাজের জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। সিনেমা নেই, হল নেই। অন্য কোথাও কাজ করি না। এভাবে এখানে কত দিন টিকে থাকব, জানি না।’ গত বছর চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করার পর ছোট পর্দা ছেড়েছেন তিনি। কিন্তু এখানকার কাজের পরিমাণ টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সিয়াম। ২০১৭ সালে পরীমনির মুক্তি পেয়েছে ৫টি ছবি, গত বছর ১টি এবং চলতি বছর ১টি। তিনিও হতাশ। পরীমনি বলেন, ‘এখন গণহারে কাজ করছি না। ভালো চিত্রনাট্য ও পরিচালকের কাজ করতে চাই। কিন্তু সে রকম কাজের সংখ্যা কয়টা?’ এ প্রসঙ্গে নায়ক ও প্রযোজক আলমগীর বলেন, ‘আমরা যখন কাজ করেছি, তখন সব নায়ক–নায়িকার হাতেই অনেক ছবি থাকত। এখন সিনেমা কম হচ্ছে। এতে পেশাটি অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শাকিবের পারিশ্রমিক বেশি। কম কাজ করলেও তাঁর পুষিয়ে যায়। কিন্তু অনেক শিল্পীর কাজ কমে গেছে। তাঁরা কী করবেন? হয়তো পাশাপাশি কিছু করে চালিয়ে নিচ্ছেন।’ পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘কাজ কমে যাওয়ায় এখন অনেকেই স্টেজ শো, বিজ্ঞাপন, ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন। তবে দেশে আরও সিনেপ্লেক্স হলে পেশাটির অনিশ্চয়তা কেটে যেতেও পারে।’
NB:This post is copied from prothomalo
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা