বাসস
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আজ (বাংলাদেশ সময়) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনী জে. ব্লিংকেনের মধ্যে টেলিফোনে আলাপকালে তারা এই আগ্রহের কথা জানান।
এ সময় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থনীতি জোরদার, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় বের করার ব্যাপারে আলোচনা করেন।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দুই নেতার মধ্যে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের একটি টেকসই সমাধান এবং শ্রম ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মানের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়।’
এতে আরো বলা হয়, ব্লিংকেন ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী উপলক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে অভিনন্দন জানান।
বাইডেন প্রশাসন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. মোমেন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরের জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসি’র উদ্দেশে রওয়ানা হন।
সফরের আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কোন সুনির্দিষ্ট ইস্যু নেই। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনার পাশাপাশি, মার্কিন নতুন প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ধারাবাহিক বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা ওয়াশিংটনের সাথে একটি গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। এর আগে, মোমেন আশা প্রকাশ করেন যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নতুন প্রশাসন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের ইস্যুটি ‘গুরুত্বের’ সাথে নেবে। কারণ এটা বাংলাদেশ-মার্কিন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে একটি ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের পাশাপাশি ভালো যোগাযোগ সুবিধার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) এবং হাইটেক পার্কে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ স্বাগত জানান।
উভয় পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে অধিক সুবিধা নিতে পারে এবং দেশে বিপুল পরিমাণ বিশেষ করে আইসিটি, জ্বালানি, ওষুধ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা দেয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মোমেন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে মানবিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর পর্যাপ্ত রাজনৈতিক চাপ দেয়ার বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
মিয়ানমারের কিছু ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি অর্থনৈতিক অবরোধ এবং জিএসপি সুবিধা বাতিলের মতো আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে উৎসাহিত করেন।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিংকেন দশ লাখের বেশী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং এতে সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়টির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পূর্ণ মনোযোগ রয়েছে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্লিকেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বস্ত করেন।
মোমেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। জলবায়ু বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জন কিররির সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতির হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন তাদের জলবায়ু এজেন্ডা আরো সম্পৃক্ত হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আসছে কোপ২৬ চলাকালে এবং এর আগে দুই পক্ষকে জলবায়ু ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে।
ড. মোমেন আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রন জানান।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদারে নতুন প্রশাসনের কাছে পৌঁছাতে মোমেন বর্তমানে সরকারী সফরে ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
আলোচনায় দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রী অর্থনৈতিক, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা কার্যক্রম এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো গভীরতর করার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় নিয়ে কথা বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “দুই নেতা বার্মা (মিয়ানমার), রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং শ্রম ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের গুরুত্বের বিষয় আলোচনা করেন।”fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা