নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচারের ঘটনার শিকার নারীর স্বীকারোক্তিই যথেষ্ট। মঙ্গলবার ( ৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর -১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে প্রশাসন,নাগরিক সমাজ,পেশাজীবী ও সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃায় একথা বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।
মতবিনিময় সভার সভাপতি সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী নির্যাতনের মূল কারণ নারীর অধ:স্তনতা। এখনো নারীরা মানুষ হিসেবে সমাজে স্বীকৃত নয়। অধ:স্তনতার কারণ হলো পুরুষতান্ত্রিকতা। যা নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই রয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক অবকাঠামোর মধ্যে পুরুষতান্ত্রিকতা রয়েছে। সহিংসতা প্রতিরোধে মহিলা পরিষদ তরুণদের যুক্ত করতে কাজ করছে। শিক্ষা ব্যবস্থাযও নানা অসংগতি আছে। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইন প্রয়োগেও অসংগতি আছে। আইন সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য কাজ করতে হবে। নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচারের ঘটনার শিকার নারীর স্বীকারোক্তিই যথেষ্ট। নারী নির্যাতন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এটিই প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে নারী আন্দোলন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে, আজ সফলও হয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা এখনও ক্রমবর্ধমান। সহিংসতা প্রতিরোধ করতে এবং জেন্ডার সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে হলে সমাজে প্রচলিত জেন্ডার বৈষম্যমূলক রীতিনীতির পরিবর্তন করতে হবে, বৈষম্যমূলক আইনের সংশোধন ও দ্রত বাস্তবায়ন করতে হবে। জেন্ডার সংবেদনশীল পাঠ্যসূচি তৈরি করতে হবে।
সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেকোনো বয়সের নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন যুগের দাবি।
প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম বলেন, যথাযথ সেবা নারীরা পায় না। নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এটি নারীর প্রতি সহিংসতার এক ধরণের রূপ। পত্রিকার খবর অনুযায়ী প্রায় ১৫০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ইউনিসেফ এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে নির্যাতনের শিকার মায়ের প্রতি ছেলে সন্তানেরা সহানুভুতিশীল। তাদের এই ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে। মেয়েরা উপার্জন করছে কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অধিকার নেই। এ বিষয়ে পুরুষরদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এ্যডভোকেসী আন্দোলন আরো জোরদার করা প্রয়োজন। প্র্রচলিত ধর্ষণের অপরাধ সংক্রান্ত আইন যুগোপযোগী নয়। এটির পরিবর্তন করতে হবে। ধর্ষণের সংজ্ঞা বৈশ্বিকভাবে পরিবর্তিত হলেও বাংলাদেশের আইনে পরিবর্তিত হয়নি। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে ২০০৯ সালের মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের প্রণীত গাইডলাইন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি ডাইরেক্টর (হসপিটাল-২) ডা. মো: ইউনূস আলী বলেন, ঘরের ভেতরেও নারী নির্যাতন হচ্ছে। ছেলেবেলা থেকে নানারকম বৈষম্য এর মাধ্যমে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি নির্যাতন করা হয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। মূল্যবোধের পরিবর্তন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সালাহ্ উদ্দিন কাউসার বলেন, ধর্ষণই শুধুমাত্র নির্যাতন নয়। নারী নির্যাতনের ব্যাপ্তি বহু। বাংলাদেশে মানসিকভাবে নির্যাতনের বেশিরভাগ দিকটি উপেক্ষিত। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারমুখী কার্যক্রম আরো বেশি করতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধি অ্যাড. সেলিনা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বাইরে বা ঘরে কোথাও নারীরা আজ নিরাপদ নয়। নিজের অভিভাবকের কাছে ও সে নিরাপদ নয়। ঘর থেকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আইনের পরিবর্তন করতে হবে।
ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ এর সামিনা শিপ্রা বলেন নারীরা শারীরিক, মানসিক, আর্থিকভাবে যে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা অনেকেই বুঝতে পারে না। ঘটনা মেনে নেয়ার মত মানসিকতা রয়েছে নারীদের। সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য সোচ্চার হতে হবে।
জাতীয় আইন সহায়তা প্রতিষ্ঠানের অ্যাড. হালিমা খাতুন বলেন নারী নির্যাতনের ঘটনায় অনেকেই আপোষ করছে নিরাপত্তাহীনতার কারনে। এর ফলে অপরাধী শাস্তি পাওয়া থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার এবং পুলিশ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে দায়িত্বপালন করতে পারেনা।
সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং কর্মকর্তাসহ ৭০ জন উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আক্তার।
আরও পড়ুন : খাদ্য মন্ত্রণালয়কেই খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা