বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ট্রাক ছেঁড়া টাকার কুচি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। গভীর রাতে বগুড়া পৌরসভার ট্রাকে করে এগুলো শাজাহানপুর উপজেলার একটি ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার বেলা বাড়লে স্থানীয় জনতার নজরে আসে সেগুলো। মুহূর্তেই বস্তা বস্তা টাকা পড়ে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে ভীত হয়ে টাকার কুচিগুলো রাতের আঁধারে ফেলে দেওয়া হয়েছে—এমন গুজবে সেখানে উত্সুক মানুষের ঢল নামে।
এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকার বর্জ্য বলে পুলিশ নিশ্চিত করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এগুলো না পুড়িয়ে কেন খোলা স্থানে ফেলে দেওয়া হলো সে ব্যাপারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার যুগ্ম ব্যবস্থাপক মো. শাজাহান জানান, ফেলে দেওয়া টাকার টুকরোগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার বাতিলকৃত, অপ্রচলনযোগ্য নোটের পাঞ্চ করা টুকরো। এগুলো মেশিন দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে, যা কখনোই জোড়া লাগানো যাবে না।
বগুড়া পৌরসভাকে এই ছেঁড়া টাকাগুলো ধ্বংস করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এ ধরনের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে পৌরসভার মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হবে।
বগুড়া পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা রাফিউল আবেদীন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার যুগ্ম ব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত পত্রে তাদের বাতিলকৃত, অপ্রচলনযোগ্য নোটের পাঞ্চ করা টুকরো পৌরসভার বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠি অনুযায়ী পৌরসভার ট্রাকে করে নোটের টুকরো ফেলে দেওয়া হয়।
তারা আগে কখনো এ ধরনের বর্জ্য অপসারণ করেনি। যার কারণে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে, না পুঁতে ফেলতে হবে—সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। যার কারণে উল্লিখিত এলাকার ভাগাড়ে টাকার বর্জ্যগুলো ফেলা হয়।
নোটের টুকরো নিয়ে যাওয়া ড্রাইভার মাসুম জানান, আগের রাতে তাঁরা বগুড়া পৌরসভার তিনটি ট্রাকে ৩৫ বস্তা করে মোট ১০৫ বস্তা বর্জ্য ওই স্থানে ফেলেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, গভীর রাতে কে বা কারা শাজাহানপুর উপজেলার বাগবাড়ী সড়কে জালশুকা খাউড়া ব্রিজের পাশে খালের পারে ভাগাড়ে স্তূপাকারে ছেঁড়া টাকাগুলো ফেলে রেখে যায়। সকালে অনেকে দেখতে পেয়ে বস্তায় ভরে ওই ছেঁড়া টাকাগুলো জ্বালানি হিসেবে নিয়ে যায়।
এ সময় উত্সুক জনতাকে ঠেকাতে সেখানে পুলিশি পাহারা দেওয়া হয়।
আরেক স্থানীয় জানান, কুটি কুটি করা হোক আর বাতিল হোক, একসঙ্গে এতো টাকা আমি জীবনেও দেখিনি। আমার মা-বোন আর স্ত্রীও দেখেনি। তাই তাদের দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি। পরে শুকিয়ে এসব জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করব।
খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী মণ্ডল জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি জানতে পেরে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ছেঁড়া টাকার বর্জ্য থেকে দুই বস্তা নমুনা হিসেবে নিয়ে যায় তদন্তের জন্য।
উদ্ধার করা টুকরো টাকাগুলোর মধ্যে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট আছে বলেও জানান পুলিশের এক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জগন্নাথ ঘোষ জানান, পরিবেশ দূষণ হওয়ার কারণে এগুলো পোড়ানো হয়নি। ১০০ টাকা থেকে হাজার টাকা নোট পাঞ্চড ও শ্রেডেড টুকরো বর্জ্য আকারে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকে এখনো প্রায় আড়াই শ বস্তা বর্জ্য রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে ফেলা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ আগস্ট এক স্মারকে বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়ার যুগ্ম ব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান বগুড়া পৌর মেয়রকে একটি চিঠি দেন। এতে বাতিল ও অপ্রচলনযোগ্য নোটের পাঞ্চড ও শ্রেডেড টুকরো বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি বলা হয়, এ কাজে একটি নির্দিষ্ট ডাস্টবিন স্থাপন করার।
এরই মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন একটি উপায়ে টাকার বর্জ্য অপসারণ করছে জানিয়ে এ কাজে পৌরসভার নিজস্ব পরিবহন কাজে লাগানোর কথা বলা হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ছেঁড়া টাকার বর্জ্য পড়ে থাকার ঘটনাটি গুজবে পরিণত হয়ে লাখ লাখ টাকার নতুন নোট বস্তায় বস্তায় পাওয়া গেছে—এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তথ্যটি সঠিকভাবে যাচাই না করে অনেকে এই টাকাকে কালো টাকা আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে দেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, কাজটি এভাবে করে পৌরসভা ঠিক করেনি। বিষয়টি খোঁজ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ছেঁড়া টাকার নমুনা পুলিশ সংগ্রহ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্জ্য হলেও রাতে সবার অলক্ষ্যে এসব টাকা এভাবে বিলে ফেলা ঠিক হয়নি। তাছাড়া ছেঁড়া টাকার বর্জ্য ফেলার ঘটনা এটিই প্রথম বলে ধারণা তাদের।
এ কাণ্ডে বগুড়াসহ দেশব্যাপী একটি গুজব রটানোর পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে অভিমত দেন তারা।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা