বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্য। এটি দেশকে ও মানুষকে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিবে। সরকার, নাগরিক সমাজ ও সর্বসাধারণের সচেতনতাই পারে এই পরিস্থিতিকে পাল্টে দিতে। আর খাদ্য দূষণকারীদের দূর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত করে কঠোর আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিশ^ খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক আয়োজিত বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য ঃ বর্তমান অবস্থা ও করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
আলোচনায় বলা হয়েছে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে ৮২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করা হয়। এতে গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ ডিডিটি, এলড্রিন, ক্লোরডেন, হেপ্টাক্লোর এবং অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়। এসব রাসায়নিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাকসবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সীসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সীসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব। হলুদ ও লবণে সীসাসহ আরো কিছু ধাতব উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলো চকচকে ও ভারী করা হয়।
গোলটেবিলে বক্তারা বলেন, মানুষসহ সকল প্রাণ সত্তার জন্য নিরাপদ খাদ্যের জোগানের ভেতর দিয়ে ভবিষ্যতের নির্মল পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় চাই সকল স্তরের এক সমন্বিত জাগরণ। আমাদের চারপাশের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত ও বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের জোগান দেয়া সত্যিই এক দুরূহ জটিল কাজ। কিন্তু আমাদের সকলের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এবং ভবিষ্যতের নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যের জোগান জরুরি।
বক্তারা আরো বলেন, একজন ভোক্তা ও ক্রেতা হিসেবে প্রথমত আমরা খাদ্যটাকে নিরাপদ দেখতে চাই। নিরাপদ মানে ক্ষতিকর ও বিপদজনক রাসায়নিকমুক্ত খাদ্য। এ অবস্থায় খাদ্য উৎস ও উৎপাদনস্থলকেই প্রথমত নিরাপদ করাটা জরুরি। তারপর থাকছে খাদ্য সরবরাহ, পরিবহন, বিপণন, মজুতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবেশন। জমির মাটি থেকে খাবার থালা অবধি খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি। খাবার নিরাপদ কীনা এ নিয়ে নিয়মিত খাদ্য পরীক্ষাটাও জরুরি। আমরা যেমন খাবারে কোনো ভেজাল চাই না, আবার ফরমালিন-কার্বাইড বা ক্ষতিকর কোনো উপাদান খাবারে মিশে থাকুক তাও চাইনা।
আলোচনায় বলা হয়েছে, অতি মুনাফালোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটর যান, নৌ যান ও কলকারখানার পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেল, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, কৃত্রিম হরেমান ব্যবহার করছে। কৃষিজাত পণ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। মিষ্টিতে কাপড়ের রং প্রয়োগ করা হয়। শুটকি মাছ সংরক্ষণে ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোর ব্যবহার করা হয়। এইসব রাসায়নিক মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এবং মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহার দেশের জনস্বাস্থ্যকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কৃষিপণ্যকে কীটনাশক থেকে রক্ষা করা গেলে মানুষ অনেকটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিলে আলোচনা করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ, ৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: খালেদ শওকত আলী, অ্যাড মাহবুবুল আলম তাহিন, বারসিকের সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলম, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, কবি কামরুজ্জামান ভূইয়া, যুব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো: শহীদুল্লাহ, শাকিল ওসমান. প্রাকৃতিক কৃষির দেলোয়ার জাহান, বস্তিবাসী নেত্রী ঝুমুর বেগম আলম প্রমূখ।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা