কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ আবারও সভাপতি
খাদ্য মন্ত্রণালয়কেই খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বুধবার ( ৪ ডিসেম্বর) খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার জাতীয় সম্মেলন ২০১৯-এর উদ্বোধনী একথা বলেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফএর চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
ঢাকার বাংলাদেশ ইনঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রধান মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, নাগরিক সমাজের দায়িত্ব সরকারকে তার অঙ্গীকার মনে করিয়ে দেয়া। আমরাও তাই খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছি, যা আমাদের সাংবিধানিক ও সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
ইতিমধ্যে খাদ্যমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, আমরা তার কার্যকারিতা দেখতে চাই। আইন প্রণীত হলে, আমরা বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে, তাও দেখব।
পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেন, চালসহ বেশকিছু খাদ্যপন্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ অনেকের জন্য অনুসরণীয়। খাদ্যের পাশাপাশি পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্যও এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক নজর রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, ২০০১ সালে রাজস্থানে খাদ্যাভাবে দলিত মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং অবশেষে ২০১৩ সালে ভারতের মতো একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেও খাদ্য নিরাপত্তা আইন তৈরি হয়েছে। এর অধীনে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে বাজারমূল্যের চেয়ে কম মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরকম আইন বাংলাদেশে হলে প্রয়োজনে আমরাও মামলা করতে পারব। সেজন্য নাগরিকদের দিক থেকে ক্রমাগত সংগ্রামের বিকল্প নেই।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির ফলে দারিদ্র্যের হার হ্রাস এবং সামগ্রিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা ত্বরান্বিত হলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে না। দেশে একটি ভাল খাদ্যনীতি থাকলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
বক্তারা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ত্বরান্বিত করার অন্যতম কৌশল ‘এনএসএসএস’-এর আলোকে প্রতিবছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনীয় সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না।
তারা বলেন, ধান ও অনেক ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত দশ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ। দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার ‘পুষ্টিকর খাদ্য’ নিশ্চিত করতে হলে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের চাহিদা। খাদ্য মন্ত্রণালয়কেই এ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’-এর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগী এবং যুব প্রতিনিধিসহ সাত শতাধিক প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে।
সম্মেলনে আরও বক্তা ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।
আরো বক্তব্য রাখেন আইসিসিওর দেশীয় প্রতিনিধি সাকেব নবী, কেয়ার বাংলাদেশের সহকারী দেশীয় পরিচালক প্রবোধ দেবকোটা প্রমুখ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান শাহীন আক্তার ডলি এবং নেটওয়ার্কের বক্তব্য উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে অনুষ্ঠিত সাংগঠনিক অধিবেশনে উপস্থিত বিস্তারিত আলোচনা শেষে পুনরায় ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদকে সভাপতি ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট নেটওয়ার্কের নতুন জাতীয় কমিটি গঠিত হয়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে খাদ্য অধিকার আইনের যে খসড়া সরকার বরাবর প্রদান করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, তার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, আইনে অধিকারগুলো বর্ণিত থাকবে, অধিকার লঙ্ঘিত হলে আদালতে যাওয়া যাবে। খসড়ায় উৎপাদকের অধিকার, ভূমির অধিকার, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের দায়িত্ব, স্বার্থের সংঘাত নিরসনে মন্ত্রণালয় ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবে না, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের সাথে সমন্বয় প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, খাদ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পাশাপাশি খাদ্যের অপচয় রোধ করাও আমাদের সবার দায়িত্ব। মৌসুম ভেদে খাদ্যের সংকট দেখা দেয় এবং তখন মূল্যও বাড়ে। সেসময় আতংক ছড়িয়ে আমরাই আরো মূল্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করি। সামর্থ্যবানরা এসব ব্যাপারে সচেতন হলে দরিদ্র মানুষই উপকৃত হবে, পর্যাপ্ত খাদ্য পাবে।
নেটওয়ার্কের বক্তব্য উপস্থাপনকালে কানিজ ফাতেমা বলেন, ২০১৫ সালে ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলনে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য . . . প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সরকার তার অবস্থানে অনড় থাকবে” ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে খাদ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘খাদ্য অধিকার আইনের অবয়বটা যদি আমাদের সমাজের কোনো আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে তা প্রণয়নে জান দিয়ে হলেও আমি চেষ্টা করব’। সে উদ্দেশ্যে নেটওয়ার্কের উদ্যোগে খসড়া খাদ্য অধিকার আইনের প্রস্তাবনার কাজ শেষ পর্যায়ে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে দেশবাসীকে খাদ্য অধিকার আইন উপহার দেয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং খাদ্যমন্ত্রীর সক্রিয় উদ্যোগ ও নীতি-নির্ধারকদের অংশগ্রহণে এ প্রক্রিয়া অচিরেই কার্যকর হবে বলে আশা করি।
আরও পড়ুন : উদয় সমাজ কল্যাণ সংস্থার ১২তম ওয়াজ মাহফিল শুরু হচ্ছে ৬ ডিসেম্বর
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা