অনলাইন ডেস্ক
জানা যায়, রয়টার্সের প্রধান ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি আফগানিস্তান গিয়েছিলেন সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াইয়ের ছবি তুলতে। তিনি আগেও একাধিকবার দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে গিয়েছিলেন পেশাগত কাজে। মৃত্যুর আগে কয়েকদিন ধরে কান্দাহার প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করছিলেন ৩৮ বছর বয়সী এ ভারতীয়।
গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন এক্সামিনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান যোদ্ধারা কান্দাহারে পাকিস্তান সীমান্ত দখল করতে গেলে তাদের ঠেকাতে রওয়ানা দেয় আফগান বাহিনী। তখন সরকারি ফৌজের কনভয়ে উঠে পড়েন দানিশও। তাদের সঙ্গেই সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান তিনি।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সীমান্ত থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে আফগান বাহিনীর ওপর প্রথম হামলা চালায় তালেবান। এতে আফগান বাহিনীর কনভয় দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় আর আফগান কমান্ডারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান দানিশ। তিনজন আফগান সেনার সঙ্গে তিনি অন্য দিকে ছিটকে পড়েন। তার শরীরে স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে। আফগান সেনারা তাকে স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
কিন্তু দানিশ এবং আফগান বাহিনীর তিন সেনা মসজিদে আশ্রয় নেয়ার এ খবর পৌঁছে যায় তালেবানের কাছে। তাদের একটি দল মসজিদ আক্রমণ করে। ভেতরে ঢুকে তারা দানিশকে আটক করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দানিশকে যখন তালেবান ধরে নিয়ে যায় তখন তিনি জীবিতই ছিলেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে তাকে হত্যা করে তালেবান, একই পরিণতি হয় সঙ্গে থাকা তিনজনের। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারান আফগান বাহিনীর কমান্ডারসহ বাকি সেনারাও।
মার্কিন প্রতিবেদকের দাবি, দানিশের মরদেহের যে ছবি পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, হত্যার আগে তার মাথার কাছে একাধিকবার আঘাত করা হয়েছে। তারপর গুলি করে গোটা শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে এ ধরনের আঘাত থাকতে পারে না।
দানিশের মৃত্যু নিয়ে অবশ্য ভারত সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কিছুদিন আগে একটি ভারতীয় গণমাধ্যমও দানিশের মৃত্যু নিয়ে একই দাবি করেছিল। মৃত্যুর পরে আফগান সরকারের সহায়তায় দানিশ সিদ্দিকির মরদেহ দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয়। ভারতীয় রাজধানীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় কবর দেয়া হয়েছে তাকে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, দানিশের মৃত্যুর তদন্ত হওয়া দরকার। তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের বিরোধী। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সাংবাদিককে এভাবে হত্যা করা যায় না।
২০১০ সালে রয়টার্সে শিক্ষানবিশ ফটোসাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন দানিশ সিদ্দিকি। এর ছয় বছরের মধ্যেই ইরাকের মসুলে যুদ্ধের ছবি তুলতে যান তিনি। ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের ছবিও তোলেন তিনি। ২০১৯-২০ সালে হংকংয়ে বিক্ষোভ, ২০২০ সালে দিল্লির দাঙ্গার ছবি তুলেও প্রশংসিত হন এই ফটোসাংবাদিক। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সংকটের চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিলেন দানিশ।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা