কুরআন শরীফ।
কুরআন শরীফ (আরবি: القرآن আল্ক্বুর্’আন্ “আবৃত্তিটা”) মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এটি একটি আসমানী গ্রন্থ। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) – এর নিকট অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সুরা বা অধ্যায় আছে। আয়াত বা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৬,২৩৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবর্তীর্ণ হয়। মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবর্তীর্ণ পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম বাণীবাহক আদম (আঃ) থেকেই শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। তবে কুরআনে কোনও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই।
আরবি ব্যাকরণেকুরআন শব্দটি মাসদার তথা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি قرأ ক্বরা‘আ ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে যার অর্থ পাঠ করা বা আবৃত্তি করা। এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই শব্দটির মিটার বা “মাসদার” (الوزن) হচ্ছে غفران তথা “গুফরান”। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, غفر নামক ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে “ক্ষমা করা”; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা হলো غفران, এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং আরেকটি অর্থ হচ্ছে একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
অবশ্য এ নিয়ে সংশয় রয়েছে যে, এই শব্দটি আসলেই আরবি ভাষার মূল থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে নাকি সিরিয়াক থেকে এসেছে। এই সংশয়টি প্রথম উত্থাপন করেন জার্মান সেমিটিক বিশেষজ্ঞ থিওডর নোলদেকে। তিনি ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে Geschichte des Qorâns (কুরআনের ইতিহাস) নামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে আরবি কুরআন শব্দটি সিরিয়াক ভাষায় ব্যবহৃত বিশেষ্য পদ ܩܪܝܢܐ qeryānâ (কেরিয়ানা) থেকে এসে থাকতে পারে। সিরিয়াক ভাষার এই শব্দটি আবার সিরিয়াক ক্রিয়াপদ ܩܪܐ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে যার অর্থ পাঠ করা বা আবৃত্তি করা। সম্বন্ধে সবচেয়ে আধুনিক মতগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টোফ লুক্সেনবার্গ কর্তৃক প্রদত্ত মত। লুক্সেনবার্গের মতে কুরআন প্রকৃতপক্ষে একটি সিরিয়াক লেকশনারি ছিলো।
সংজ্ঞা
এটি আল্লাহর কালাম বা বক্তব্য, যা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি একটি মু’জিযা, এর সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সূরার ক্ষেত্রেও। এটি লিপিবদ্ধ আছে এবং আমাদের কাছে এটি মুতাওয়াতির বর্ণনায় এসে পৌঁছেছে। এর পঠনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করি এবং সুরা ফাতেহা দিয়ে এর শুরু এবং সুরা নাস দিয়ে এর সমাপ্তি।
কুরআনের গড়ন
কুরআনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১১৪টি সুরা রয়েছে। সকল সূরা মিলিয়ে মোট আয়াতের (আয়াত আরবি শব্দ, এর সাহিত্যিক অর্থ নিদর্শন) সংখ্যা প্রায় ৬২৩৬ (মতান্তরে ৬৩৪৮, সকল বিসমিল্লাহ্কে আয়াত হিসেবে গণনা করে)।প্রত্যেকটি সূরার একটি নাম রয়েছে। নামকরণ বিভিন্ন উপায়ে করা হয়েছে; তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত কোনো শব্দকেই নাম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়া এমন নামও পাওয়া যায়, যা সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয়নি, যেমন: সুরা ফাতিহা, ফাতিহা শব্দটি সূরার কোনো স্থানে নেই। সূরাগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট সজ্জা রয়েছে। এই সজ্জাটিও কুরআনের মতো এখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত রয়েছে। সজ্জাকরণ তাদের অবতরণের ধারাবাহিকতা অনুসারে করা হয়নি। বরং দেখা যায় অনেকটা বড় থেকে ছোট সূরা অনুযায়ী সাজানো; অবশ্য এটিও পুরোপুরি সঠিক নয়, প্রকৃত সজ্জার কারণ কারও জানা নেই। অনেক ক্ষেত্রে বড় সূরাও ছোট সূরার পরে এসেছে। তবে একটি সূরা বা তার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারাবাহিকতার সাথেই অবতীর্ণ হয়েছিলো। এই সজ্জাটি মুখস্থকরণের সুবিধার সৃষ্টি করেছে।
সূত্র : ইসলামিক সোর্স।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা