মনোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় মহিন উদ্দিন নামের এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার পর মৃত্যুর ঘটনাকে করোনায় আক্রান্তে মারা গেছে বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোপ পাওয়া গেছে।
রোববার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের কৈয়ারধারী গ্রামে মহিনের স্ত্রী রুবিনা আক্তার ও মাতা মনকির বেগমসহ এলাকাবাসী সূত্র এ দাবি করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, মহিন উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদার দ্বীন ইসলামের অধীনে মহিন উদ্দিন ও আমিনুল ইসলাম রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। বেশ কিছুদিন ধরে পাশ্ববর্তী কাদঘর গ্রামের বশির কন্টাক্টরের ছেলে মোঃ জাহিদ তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। এক পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা আদায় করে নেয় বলে আমিনুল ইসলাম দাবি করেন। আরও চাঁদার দাবিতে গত ৩১ মার্চ মঙ্গলবার মোটর সাইকেল আরোহী মহিন উদ্দিন ও আমিনুল ইসলামকে আটক করে জাহিদ তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করে। এ সময় জাহিদ কিল-ঘুষি মেরে মহিন উদ্দিনের বুকে মারাত্মক জখম করে। পরে জাহিদ, মহিন উদ্দিনের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি রেখে দেয়।
কয়েকদিন পর টাকা পাবে দাবি করে জাহিদ মহিন উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী রুবিনা আক্তারকে হুমকি দেয়। হামলার ঘটনার পর মহিন উদ্দিন শরীরে ব্যথা নিয়ে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়। এক পর্যায়ে ৮ এপ্রিল বুধবার ভোররাতে মহিন উদ্দিনের মৃত্যু হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পরই কুচক্রী মহল চাঁদাবাজ জাহিদকে বাঁচাতে মহিন উদ্দিনের করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন আতঙ্কের মধ্যেই মহিন উদ্দিনের নমুনা সংগ্রহ করে। এ সময় প্রশাসনের কড়াকড়ি ও আতঙ্কে মানুষ কাছে না যাওয়ায় কেউ প্রকৃত ঘটনা খুলে বলতে পারেনি। পরদিন বৃহস্পতিবার মহিন উদ্দিনের করোনা ভাইরাস রিপোর্টে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। অর্থ্যাৎ সে করোনায় আক্রান্ত হয়নি। সংবাদটি ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশের পর গ্রামের সচেতন মহল সাংবাদিকদের ফোন করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে অনুরোধ জানান।
এরই প্রেক্ষিতে রোববার দুপুরে সংবাদকর্মীরা মহিন উদ্দিনের বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রী রুবিনা আক্তার, মা মনকির বেগম ও চাচা কবির উদ্দিনসহ এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে মৃত্যুর পেছনের ঘটনা জানতে পারে। তারা সকলেই সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন, ‘জাহিদ নামে কাদঘর গ্রামের এক সন্ত্রাসী মহিন উদ্দিনকে মারধর করে তার মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নেয়। মারধরের পরই সে বুকে মারাত্মক জখমসহ আহত হয়। মেম্বারকে বিষয়টি জানালে তিনি প্রতিদিনই মিমাংশা করে দিবে বলে জানালেও এরই আগেই মহিন উদ্দিনের মৃত্যু হয়’।
ইউএনও ইউপি মেম্বার আবদুল মান্নানকে লকডাউনকৃত মহিন উদ্দিনের পরিবার ও বাড়ির লোকজনে ত্রাণ-নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু এরপরও মেম্বার তাদের খোঁজ নেয়নি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে শুভপুর ইউপি মেম্বার মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, ‘৩১ মার্চ মহিন কাদঘরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তার মোটর সাইকেলটি কোথায় কেউ জানে না। লকডাউন ঘোষণার পর ইউএনও’র নির্দেশের পরও মহিনের পরিবারকে কোন ত্রাণ দেওয়া হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, মহিন উদ্দিন একজন মাদকসেবী ছিল’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা