অনলাইন ডেস্ক
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, ৬১ বছর বয়সী ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাসের দায়িত্ব পালনকালে বেশির ভাগ সময়ই সুড়ঙ্গে কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে। সার্বক্ষণিক তার চার পাশে থাকতেন নিজস্ব দেহরক্ষী। এছাড়া তার অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য ইসরাইলি জিম্মিদেরও তার পাশে আটক রাখা হয়েছিল। বলা হচ্ছে জিম্মিদের ‘আত্মরক্ষার ঢাল’ হিসেবে রাখা হয়েছিল সিনওয়ারের পাশে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে দক্ষিণ গাজায় সিনওয়ারের অবস্থান চিন্থিত করতে সক্ষম হয়েছিল ইসরাইলি সেনারা। সেখানে তাকে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত করা হয়। তবে কোনো জিম্মিদের পাওয়া যায়নি।
সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে বিশদ উঠে আসতে সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হল।
রুটিন টহল
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তাদের ৮২৮ তম বিগ্রেডের একটি ইউনিট বুধবার রাফাহ অঞ্চলের তাল আল-সুলতানে টহল দিচ্ছিল। সেসময় সেনারা তিন যোদ্ধাকে চিন্থিত করে এবং তাদের হত্যা করে। পরে সেখানে গোলাগুলিতে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেটাকে উল্লেখযোগ্য কিছু মনে না করেই ইসরাইলি সেনারা স্থানটিকে গুরুত্ব দেয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় ইসরাইলের টহল দেয়া সেনারা সেখানে উপস্থিত হন। তখন তারা মৃতদেহগুলো পরিদর্শন করে। মৃতদেহগুলোর একজনকে হামাসের শীর্ষ নেতা সিনওয়ারের মতো দেখাচ্ছিল। সন্দেহ দূর করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মৃতদেহের একটি আঙ্গুল কেটে ইসরাইলে পাঠানো হয়।
পরে এলাকাটি নিরাপদ থাকায় সিনওয়ারের মৃতদেহটি ইসরাইলি পাঠানো হয়। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, তার বাহিনী জানত না যে সিনওয়ার সেখানে ছিলেন, তবে তাদের অভিযান অব্যাহত ছিল। হাগারি আরও বলেন, তার সেনারা তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছিলেন। সিনওয়ার হিসেবে চিহ্নিত ওই ব্যক্তি ‘একটি ভবনের মধ্যে একাই দৌড়ে গিয়েছিলেন’। পরে ড্রোনের মাধ্যমে তার অবস্থান চিন্থিত করে তাকে হত্যা করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে ইসরাইলি জিম্মিদের ‘ঢাল হিসেবে’ ব্যবহার করেছিল হামাসের যোদ্ধারা।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, সিনওয়ার পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছিলেন। পরে মারধরের সময় মারা গিয়েছেন সিনওয়ার। তিনি একজন কমান্ডার হিসেবে মারা যাননি। ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, আমাদের সকল শত্রুর কাছে এটি আমাদের স্পষ্ট একটি বার্তা যে, সিনওয়ার একজন কমান্ডার হিসেবে মারা যাননি, ধরা পড়ার পর পালানোর চেষ্টাকালে তাকে নিহত করা হয়েছে। তার দাবি, নিজেকে আত্মরক্ষার সময় ধরে পড়ে মারা যান সিনওয়ার।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ড্রোন ফুটেজে সিনওয়ারের নিহত হওয়ার আগের মুহূর্তগুলো দেখানো হয়েছে। বেশিরভাগ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের খোলা জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ওই হত্যাকাণ্ডের ফুটেজ সংগ্রহ করেছে ইসরাইলি ড্রোন। ফুটেজে এক লোককে একটি আরামচেয়ারে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল লোকটি আহত অবস্থায় ছিলেন। পরে ড্রোনের দিকে একটি লাঠি ছুড়ে দেন ওই লোকটি। এরপরই ফুটেজটি শেষ হয়।
যেভাবে সিনওয়ারের মৃত্যু নিশ্চিত করলো ইসরাইল
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনওয়ার নিহত হয়েছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইসরাইল প্রথমে ঘোষণা করেছিল যে, তারা সম্ভাব্য হত্যার তদন্ত করছে। ঘোষণার কিছু সময়ের মধ্যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিগুলিতে হামাস নেতার সাথে খুব মিল রয়েছে এমন এক ব্যক্তির দেহ দেখা যায়। যার মাথায় ক্ষত ছিল। তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা তখন বলেছিলেন, তখনও নিহত তিন ব্যক্তির কারো পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি তারা।
এর কিছুক্ষণ পরেই ইসরাইল বিবিসিকে জানিয়েছে যে তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। তবে তারা বলেছেন, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করতে হবে। পরীক্ষা করতে বেশি সময় নেয়নি ইসরাইল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই ইসরাইল ঘোষণা করেছিল যে তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে।
বড় লক্ষ্য অর্জন কিন্তু এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি
সিনওয়ারকে হত্যা করা ইসরাইলের জন্য একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল, গত ৭ অক্টোবরের হামলার পরপরই তাকে মৃত্যুর জন্য চিহ্নিত করে হয়েছিল। সে লক্ষ্য অর্জিত হলেও এখনও গাজা যুদ্ধ শেষ হয়নি বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, হামাসের হাতে ১০১ জিম্মি উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। ইসরাইলের প্রধনমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘মন্দকে’ কঠিন আঘাত দেওয়া হয়েছে। নেতানিয়াহু এবং গাজা যুদ্ধ সমর্থনকারী ইসরাইলিরা সিনওয়ারের হত্যাকে একটি অপ্রতিরোধ্য বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেননা নেতানিয়াহু বার বার বলেছেন তিনি হামাসকে রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে ধ্বংস করে জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা