‘উত্তর বাংলা’ শব্দ দুটি অবশ্যই পৃথক। ‘উত্তর বাংলা কলেজ’-এর নামকরণের শুরুতে যা আলাদাভাবেই লেখা হয়। এই শব্দ দুটোকে যেমন একসঙ্গে করার সুযোগ নেই তেমনি ইংরেজি বানানে ‘UttarBangla’ লেখারও কোনো সুযোগ নেই!
উত্তরের সাফল্যের বাতিঘর খ্যাত উত্তর বাংলা কলেজ ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মান কোর্স চালু করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বিভাগে তালিকাভুক্ত হয়। যার কলেজ ইআইআইএন নম্বর ১২২৮৯১।
বর্তমানে উত্তর বাংলা কলেজে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলেজ পারফরম্যান্স র্যাংকিং-২০১৭-এ উত্তর বাংলা কলেজ রংপুর বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করে।
আর শুধু রংপুর বিভাগের বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে এটি হয় প্রথম। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ (২০১৭) তালিকা অনুযায়ী, সারা দেশের বেসরকারি পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি কলেজের মধ্যে উত্তর বাংলা কলেজের অবস্থান তৃতীয়।
উত্তর জনপদের জীবন্ত কিংবদন্তি, স্কটল্যান্ডে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ স্ট্রেথক্লাইডের অর্থনীতি বিভাগের খ্যাতনামা অধ্যাপক, বহুগুণে গুণান্বিত শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক স্যার অবহেলিত এই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ৭ জুলাই ১৯৯৪ সালে ‘উত্তর বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
করোনাভাইরাস: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত বিকালে
যার এই অসাধারণ কীর্তির কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মহৎ হৃদয়ের অধিকারী এম এম হক কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় নামকরণের ক্ষেত্রে নিজ নাম ব্যবহার করতে পারতেন, নিজ পিতা বা কোনো পূর্বপুরুষের নামে করতে পারতেন কিংবা বংশ পদবি ব্যবহার করেও নামকরণ করতে পারতেন।
এছাড়াও ইতিহাস ঐতিহ্যের ‘কাকিনা’ নাম সংযুক্ত করেও করতে পারতেন। কিন্তু অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দার্শনিক প্রতিভার অধিকারী প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক গোটা উত্তর জনপদের কথা চিন্তা করে কলেজের নামকরণ করেছেন ‘উত্তর বাংলা কলেজ’। যা অত্যন্ত সুন্দর ও অর্থবহ একটি নাম।
অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কলেজটির দাপ্তরিক নাম হলো ‘উত্তর বাংলা কলেজ’। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজকাল জনপ্রিয় এই শিক্ষাঙ্গনের নাম দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দ্বারাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে লেখা হচ্ছে! ‘উত্তর বাংলা কলেজ’কে কোথাও ‘উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ (Uttar Bangla University College), ‘উত্তরবাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ (UttraBangla University College), ‘উত্তরবাংলা কলেজ’ (UttarBangla College) নামে লেখা হচ্ছে। এক সময় ‘উত্তর বাংলা ডিগ্রি কলেজ’ও লেখা হতো!
এখানে লক্ষণীয় যে, ‘উত্তর বাংলা’ শব্দ দুটি অবশ্যই পৃথক। ‘উত্তর বাংলা কলেজ’-এর নামকরণের শুরুতে যা আলাদাভাবেই লেখা হয়। এই শব্দ দুটোকে যেমন একসঙ্গে করার সুযোগ নেই তেমনি ইংরেজি বানানে ‘UttarBangla’ লেখারও কোনো সুযোগ নেই!
ভরসার শেষ জায়গা রেলপথও কি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল?
সাধারণত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো কলেজ বা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ বা ইনস্টিটিউট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজ, মেডিকেল কলেজসমূহ, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ প্রভৃতি।
কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো কলেজ অন্তর্ভুক্ত হলে সেই কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ সংযুক্ত করা কি আদৌ যৌক্তিক কিংবা জরুরি? এটা নিতান্তই আদিখ্যেতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। যথেষ্ট দৃষ্টিকটুও বটে!
যদি উত্তর বাংলা কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হয় সেক্ষেত্রে ‘উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা যেতে পারে, যেমন জগন্নাথ কলেজ পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রিয় এই শিক্ষাঙ্গনের নাম পরিবর্তন বা নামের হাস্যকর উপস্থাপনের প্রতি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের অবশ্যই আশু সুদৃষ্টি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ‘উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ নয় পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপে ‘উত্তর বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
শাহ্ আনোয়ারুল অনু
সাবেক শিক্ষার্থী, উত্তর বাংলা কলেজ।
anwarul.anu005@gmail.com
Like & Share our Facebook Page: Facebook