জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণ। এসব লক্ষণ শরীরে নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে কমপক্ষে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই রকম উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরের বিরামপুরে দুই যুবক, সুনামগঞ্জে এক নারী এবং শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে এক শ্রমিক।
তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে এরই মধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জে ওই নারীর দেহ দ্রুত দাহ করে ফেলায় তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে যশোরে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক শিশু এবং হোম কোয়ারেন্টিন শেষ করা মালয়েশিয়াফেরত এক ইউপি সদস্যের মৃত্যু হলে তাঁদের মৃত্যুর সঙ্গে করোনাভাইরাসের লক্ষণের মিল নেই। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আরেক শিশুর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ালেও এ মৃত্যু করোনাভাইরাসে নয় বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।
কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাসের লক্ষণ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগে এক ইজি বাইক চালকের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওই ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকজন কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
দিনাজপুরের বিরামপুরে গতকাল ভোরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে ভুগে এক যুবক (৩০) মারা গেছেন। বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সোলায়মান হোসেন মেহেদী জানান, এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সন্দেহে ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় তিন-চারজন মিলে পাশের কবরস্থানে ওই যুবকের লাশ দাফন করা হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাস সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া তিন চিকিৎসকসহ আশপাশের প্রায় ৫০টি বাড়ির লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শরীরে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগার এক সপ্তাহ পর সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব নতুনপাড়া এলাকায় এক নারীর (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। স্বজনরা এ ঘটনায় তড়িঘড়ি করে ওই নারীকে দাহ করে। স্বাস্থ্য বিভাগ ওই পরিবারের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে। পাশাপাশি জ্বর ও সর্দিতে ভোগা তাঁর স্বামীকে করোনা পরীক্ষার জন্য সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় নতুনপাড়া এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শেরপুরে তিন দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগে গত রবিবার রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় নিজ বাড়িতে মারা গেছেন এক পাইলিং শ্রমিক (৫৫)। পরে গতকাল সকালে সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফের নেতৃত্বে চিকিৎসকদল তাঁর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এ নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। করোনা উপসর্গে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের আরো ১০টি বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি এক কন্যাশিশু (১২) গতকাল ভোরে মারা গেছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, গত রবিবার বিকেলে এনায়েতপুর গ্রামের ঠিকানা দিয়ে এক ব্যক্তি মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েটির জ্বর, সর্দি ও কাশি থাকায় তাকে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। মেয়েটির লক্ষণ নিয়ে আইইডিসিআরের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, মেয়েটির করোনায় আক্রান্তের সব লক্ষণ নেই। ফলে তার নমুনা পাঠানোর প্রয়োজন নেই। এদিকে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, মেয়েটি নিউমোনিয়ায় মারা গেছে।
এদিকে যশোরে হোম কোয়ারেন্টিন শেষ করার পর বিদেশফেরত এক ব্যক্তির (৬০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি ঝিকরগাছার একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ১৪ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী মজুমদার বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন শেষ করা ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ ছিল না। তবু মৃত্যুর পর চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, স্ট্রোকজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জ্বরে ভুগে এক শিশুর (১২) মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, তার মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ ছিল। সে উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, জ্বর নিয়ে গত রবিবার রাতে সোহাগকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার বেশ জ্বর ছিল, তবে শ্বাসকষ্ট বা সর্দি-কাশি ছিল না। বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানালে তারা করোনার উপসর্গ নয় বলে নিশ্চিত করে।
বগুড়ায় শিবগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া ব্যক্তি (৪৫) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন। মৃত ব্যক্তির সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকায় পাঠানোর পর গতকাল দুপুরে বগুড়ার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পৌঁছে। এদিকে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেয়ে এলাকা ‘লকডাউন’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে করোনা সন্দেহে বগুড়ায় তিনজনকে সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে ঠাকুরগাঁওয়ের একই পরিবারের পাঁচজনকে রংপুর মেডিক্যালে নমুনা সংগ্রহের পর আবারও ঠাকুরগাঁওয়ে ফেরত আনা হয়েছে। গত রবিবার রাতে ওই আক্রান্তদের ঠাকুরগাঁওয়ে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তরা সবাই সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর আগে শনিবার বিকেলে তাদের ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যালে পাঠিয়েছিলেন। রবিবার সকালে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা করোনায় আক্রান্ত কি না।
জামালপুরের ইসলামপুরে উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নারীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের জীবাণু পায়নি আইইডিসিআর। গত রবিবার বিকেলে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছিল উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই নারীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নেগেটিভ এসেছে বলে গতকাল রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দেওয়া এক ই-মেইল বার্তায় নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ। নিশ্চিত হওয়ার পর ওই নারীর বাড়িসহ ১০টি বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
বরিশালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বাবুগঞ্জে এক যুবককে (৪২) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর তাঁর বাড়িসহ আশপাশের তিনটি বাড়ির সব সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
গাইবান্ধায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সুন্দরগঞ্জে বিদেশফেরত এক দম্পতি আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। গত রবিবার ওই দম্পতি করোনায় আক্রান্তের লক্ষণ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে গতকাল তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
শরীয়তপুরে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা ওই নারীর শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন।
চুয়াডাঙ্গায় করোনা সন্দেহে গত রবিবার রাতে এক নারীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়েছে।
গাজীপুরে গাজীপুরে করোনাভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি যুবকের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিঠি দেওয়ার পরও কেউ না আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
যশোরের কেশবপুরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে এক সপ্তাহ পর অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় গতকাল দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বরগুনায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বরগুনার এক চিকিৎসক সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা