অনলাইন ডেস্ক
তাও যেনতেন আবিষ্কার নয়- একেবারে করোনার জিন রহস্য। প্রথমবারের মতো তৃতীয় বিশ্ব বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে করোনার জিন রহস্য আবিষ্কার করলেন প্রখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ড. সেজুঁতি সাহা।
এ আবিস্কারের ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানান গবেষকরা। বাবা ও মেয়ে দু’জনেই চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত। এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাসটির রূপান্তরও বোঝা যাবে।
যা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। কাজে লাগবে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারেও।চাইল্ড রিসার্চ হেলথ ফাউন্ডেশন জানায়, তারাই সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছে।
করোনার জিন রহস্যের মাধ্যমে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি নির্ণয় করতে পারবেন গবেষকরা। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন আধিকারীক লন্ডনে কর্মরত ডা. সেজুঁতি সাহা গণমাধ্যমকে জানান, আমরা শুধুমাত্র একটি জিনোম সিকোয়েন্স বের করতে সক্ষম হয়েছি। আগামী সপ্তাহে আরও একটি জিনোম সিকোয়েন্স শেষ হবে।
তিনি জানান, প্রথমবারের মতো করা জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ভাইরাসটির সঙ্গে তাইওয়ান, সুইডেন, শ্রীলঙ্কা ও রাশিয়ার করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে। এই ভাইরাসটির এখন পর্যন্ত ৯ বার মিউটেশন হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে ঘরের বাইরে অবস্থানকালে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া, বয়স্কদের বাসায় অবস্থান করা এবং অন্য সকলকেও পারতপক্ষে বাসা থেকে বের না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. সেজুঁতি সাহা।
এই অণুজীব বিজ্ঞানী বলেন, আমরা গবেষণা করে দেখেছি ২০ সেকেন্ডের কম সময় সাবান ব্যবহারে এই জীবাণু ধ্বংস হয় না। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে কাজ করেন ডা. সমীর সাহা। তারা চাঁদপুরের সন্তান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য আগে থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দুই বিজ্ঞানীর বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। অর্জনের খাতায় আছে আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, জিনোম সিকোয়েন্স ভাইরাসটির গতি, প্রকৃতি ও ধরণ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা দেবে।
এর ফলে জানা যাবে আমাদের এখানে ভাইরাসটি মোকাবেলায় কোন ধরনের ভ্যাকসিন বা ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর আগে ডেঙ্গুসহ বাংলাদেশের অন্যান্য রোগেরও জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছে।ডিসেম্বরে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটিতে তেমন পাত্তা দেয়নি।
অনেক দেশই ধারণা করেছিল, এটি একটি চিনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ হয়ত ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়বে না। এজন্য সেখানকার দেশগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সেজন্য খেসারতও দিতে হচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় সরকার নড়েচড়ে বসেছে। সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে তা দফায় দফায় লকডাউন বাড়িয়ে চলেছে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ১৬২ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৬৯ জনের ও আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮২২ জন।
এর আগে ড. সমীর সাহা বাংলাদেশে মেনিনজাইটিস এবং নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী দুটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন প্রয়োগে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। এটি দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
শিশু বিশেষজ্ঞের শীর্ষস্থানীয় গবেষক হিসাবে তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আক্রমণাত্মক শৈশব রোগের উপর নজরদারি করে চলেছেন।ড. সাহা ২০১৭ সালে ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজির গবেষণার জন্য আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (এএসএম) পুরস্কার লাভ করেন।
এই বছর তিনি ইউনেস্কো কার্লোস জে মাইক্রোবায়োলজিতে ফিনলে পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এই জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সহায়তা করছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং চ্যান জুকারবার্গ বায়োহাব ইনিশিয়েটিভ।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর এর সহায়তায় এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ)। এবার এই কাজে এগিয়ে এসেছে বিল গেটস ও জুকারবার্গ।
বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের যে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে ইউরোপের ভাইরাসের। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এটি ইউরোপের মতোই মারাত্মক হবে কিনা সেটা জানতে গবেষণা চলছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের নমুনা থেকে আরও কিছু ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করা হবে।
ড. সমীর কুমার বলেন, ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে ৮ জনের গবেষক দল করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের কাজ করেছে। আইইডিসিআরের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. এ এস এম আলমগীর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের ১৬ হাজার ৪৫১টি জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এবারই প্রথম করা হলো। এতে আমরা জানতে পারব করোনাভাইরাসের তিনটি ধরনের কোনটি আমাদের দেশে রয়েছে। ভাইরাসটির কোনো মিউটেশন হয়েছে কিনা তাও জানা যাবে। ফলে ভ্যাকসিনেশনের সময় আমরা বুঝতে পারব এবং এটি তখন ভূমিকা রাখবে।
fblsk
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা