আবু মোহাম্মদ মাছানী
তার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। সবাই যাকে পিয়া নামে জানে, চেনে। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু মিস বাংলাদেশ দিয়ে তার যাত্রা শুরু, তাই মিডিয়াতে বিচরণ করাটাই স্বাভাবিক। তার পূর্বসূরিরা তাই করে এসেছে। কিন্তু না, তিনি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলেন না, তার ব্যাপতি ছড়িয়ে দিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তিনি কিভাবে এই টিনসেল টাউনে এলেন এসব তার ভক্ত বা বিনোদনপ্রেমীদের কাছে সবই জানা। অনেকটা এমন এলাম, দেখলাম, এবং জয় করলাম।
সম্প্রতি জনপ্রিয় এই সুপার মডেল এর সাথে এই প্রতিবেদক এর কথা হয় তার কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। এই করোনা কালে তার জীবন যাপন, ভবিষ্যৎপরিকল্পনা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ ছিল। নিচে প্রশ্ন উত্তর পর্ব হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্র: কেমন আছেন? করোনাকালে কেমন দিন কাটল জানতে চাই বিস্তারিত।
উঃ করোনার মধ্যে যতটুকু ভালো থাকা সম্ভব ততটুকু ভাল আছি।এই কারণে বলছি যে লাইভের সব কিছু আটকে আছে ঘরের মধ্যেই। যা যা ডেইলি লাইফ এ করতাম সব এখন বাসা কেন্দ্রিক।কিছু লাইভ প্রোগ্রাম করছি, ব্র্যান্ডের নতুন প্রমোশন করছি, জিম করছি বা কফি খেতে ইচ্ছা করলো, বাসায় খাচ্ছি। খারাপ বলব না। আমার বাসা ভাড়া চিন্তা করতে হচ্ছে না আবার খাবারের ও চিন্তা করতে হচ্ছে না। আমি প্রিভিলেজড, আই এম গ্রেটফুল টু আল্লাহ, ভালো আছি।
প্র: এখনতো সীমিত আকারে অফিস চলছে মন্তব্য কি বিশেষ করে গণপরিবহন চলছে সে ব্যাপারে?
উঃ দেখুন একটু আগে আমি বলেছি আমি প্রিভিলেজড। আমার বা আপনার মত সবাই প্রিভিলেজড না। অনেকেরই হয়তো অথবা আপনাদেরও অফিস করতে হচ্ছে, তো সেখান থেকে সবার কি সম্ভব সিএনজি বা যদি আবার উবার চলত অফিস করা? প্রতিদিন এত ব্যয় করে যাওয়া কি সম্ভব হতো। তাই অনেকদিন তো লকডাউন ছিল। আর কতদিন থাকবে এই লকডাউন? আমার মনে হয় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা ফ্যান্টাস্টিক পদক্ষেপ । নিয়ম-নীতি দিয়ে দেয়া হয়েছে গণপরিবহনে। বাকিটা জনগণের সচেনতা লাগবে।
প্র: যতদূর জানি করোনাকালে শিল্পীরা অনেক আর্থিক সাহায্য দিয়েছে, আপনার ভূমিকা কি ছিল?
উঃঅনেক লোক, বিশেষ করে মিডিল ক্লাস লোকদের সাহায্য করেছি ব্যক্তিগতভাবে ও বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে।অনেকেই হয়তো ত্রাণ দিচ্ছে, খাবার দিচ্ছে, বাজার দিচ্ছে সেটা কিন্তু মিডিল ক্লাস লোকদের পক্ষে যেয়ে আনা সম্ভব না। সেখান থেকে আমি যতটা গোপনীয়তা রক্ষা করে সাহায্য করা যায় সেটাই করছি এবং সাহায্য করতে যেয়ে আমি অনেক অভিনব, অভিনব ঘটনার কথা শুনেছি বা দেখেছি যা চিন্তার বাইরে। যতবার ভাবি এসব, তখন মনে হয় আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, জীবনে এর থেকে বেশি কিছু চাওয়া, পাওয়া থাকতে পারে না মানুষের।
প্র: করোনা পরবর্তী কেমন পৃথিবী দেখতে চান?
উঃ করোনা পরবর্তী আবারো একটা সুস্থ সুন্দর পৃথিবী দেখতে চাই। যেখানে সবাই আবারো নরমাল চলাফেরা করতে পারবে আর এমন মহামারী অবস্থা আল্লাহ না করুক আবার যদি চলে আসে সে ক্ষেত্রে আমাদের আরও শক্তভাবে মোকাবেলা করার সামর্থ থাকবে এটা আশা করি।
প্র:আপনি একাধারে সুপার মডেল, অভিনয়শিল্পী একজন আইনজীবী ও একজন ব্যবসায়ী। ভবিষ্যতে নিজেকে কি হিসেবে দেখতে চান?
উঃ দেখুন আমি মডেল, আইনজীবী, বিজনেস ওমেন সোশ্যাল ওয়ার্কার কিন্তু লাইফে এমন একটা সময় পার করছি যে এখানে অলরাউন্ডার হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। অলরাউন্ডার হতে হবে তো সেখানে থেকে সবকিছু ব্যালেন্স করে চলেছি এবং চলব। যদি এখন আমি মডেলিং ছেড়ে দেই তার মানে কি এতদিন আমি যে কাজ করছি সেটা কে মূল্যায়ন করলাম না জাস্ট বিকজ আমি আইনজীবী হয়েছি বলে? আমার মনে হয় সবকিছু ব্যালেন্স করে চলাটাই বড় স্মার্টনেস। আর ততদিনই আমি কাজ করব যতদিন মনে হবে আমি কাজ করতে পারব। আর ততদিন আমি ডিগনিটির সহিত করব, সেটা যে মাধ্যমেই হোক।
প্র:বলা হয়ে থাকে যে সুপারমডেলরা অভিনয়ে ব্যর্থ কথাটা কি সত্যি? উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভারতের সুস্মিতা সেন, মুগ্ধা গডসে, মধু সাপরে ও সুমন মিলিন্দ সহ আরো অনেকের নাম।
উঃআমি যদি এভাবে বলি ঐশ্বর্য রায়, দীপিকা পাড়ুকোন এবং আনুশকা শর্মা কিন্তু সুপারমডেল ছিল এবং তারা কিন্তু বেশ ভালো করেই দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তো বিষয়টা হলো যে কিছু মানুষ সাফল্য পায় কিছু কিছু জায়গায়, আবার কিছু কিছু জায়গায় পায় না। তার মানে এই না যে সে মানুষটা অন্য জায়গায় মানে সিনেমায় সাফল্য পায়নি তাই সে তার পার্সোনাল জায়গায় সফলতা পায়নি। ফিল্ম এসে সাকসেস হতেই হবে এমন নয় বা জরুরী নয়। কেউ ফিল্মে হচ্ছে কেউ বা অন্য জায়গায় হচ্ছে।
প্র: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
উঃ আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে বেশ কিছু। আমি ছোটবেলা থেকে একটা গোল সেট করে এসেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। এখন সত্যি কথা বলতে কি মিডিয়া নিয়ে আপাতত কোন প্ল্যান নেই। যতটুকু আসতে চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি এসেছি। তার মানে এই না যে আর কাজ করবোনা। কাজ অবশ্যই করবো। আমার যা কিছু বড় অর্জন তা পেয়েছি এই এই মিডিয়া থেকে।আই এম ভেরি গ্রেটফুল টু মিডিয়া। ইচ্ছা আছে আরো ব্যবসাকে আরো বড় করার। ইচ্ছে আছে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পীদের কপিরাইট ও লিগাল ইসুস নিয়ে কাজ করার। ইচ্ছা আছে যদি আল্লাহ দেয় হসপিটাল তৈরি করার ও ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করার।
প্র: সুপার মডেলদের পোশাক-আশাক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ট্রলের শিকার হতে হয়, তা কেন হয় বলতে পারেন?
উঃআমার মনে হয় এ ব্যাপারে আমাদের সমাজ এখনও প্রস্তুত না বিশেষ করে ফ্যাশন নিয়ে। দেখুন ফ্যাশান কাদের নিয়ে? মনে করুন অলরেডি যাদের ভাত কাপড়ের চিন্তা করতে হয় না তারা আর একটা স্টেপ এ চিন্তা করতে পারে। আর এখন যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে যাচ্ছো এখন সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন ইন্টারনেট অ্যাক্সেস। সে ক্ষেত্রে আমি বলব এরা তো ইন্টারনেটে সঠিক ব্যবহার জানে না। যে কোনভাবে জেনে গেছে সুপার মডেলদের তাইলে সমালোচনা করছে।
প্র: এই করোনা কালে অনেকেরই ক্রিয়েটিভ কিছু দেখা যাচ্ছে। আপনার এমন ক্রিয়েটিভিটি কিছু আছে কি?
উঃ পিয়ানো বাজানো শিখছি। এটা বাজানো খুবই কঠিন কাজ। এটা একটা ক্রিয়েটিভিটি আর তাছাড়া কমবেশি ডেইলি যা করি যেমন বই পড়ছি ও জিম করছি।
প্র: ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
উঃ ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলব যে, কোন কিছু শেয়ার করার আগে প্লিজ যাচাই করবেন বা গুগল করবেন। তথ্যটা অথেন্টিক কিনা এটাও দেখবেন। কারণ সামনে চলে আসলো আপনি শেয়ার করলেন। আর আপনি শেয়ার করে কিন্তু গুজবকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। মনে রাখবেন জিনিসটা কিন্তু অনেক সময় ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে এবং তাতে হিতে বিপরীত হয়। তাই যা শেয়ার করবেন যাচাই করে করবেন।যেহেতু করোনাকালে হাতে অনেক সময় তাই প্রডাক্টিভ কিছু করুন।
এই ছিল বোল্ড এন্ড বিউটিফুল জান্নাতুল পিয়ার সাথে এই প্রতিবেদকের কথোপকথন।
fblsk
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা