তাসকিনা ইয়াসমিন : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ৩৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জন ঢাকার বাসিন্দা। ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই অবস্থায় ঢাকাবাসীর মধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকায় বসবাসকারি বস্তিবাসীদের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত বলে মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, কলামিস্ট আফসান চৌধুরী।
তিনি লাল সবুজের কথা’কে বলেন, ভাবা হচ্ছিল যে, ঢাকার বাইরে সব অভিবাসীরা চলে গেছে তাই ঢাকায় ততটা রোগী পাওয়া যাবে না। কিন্তু হিসাবে তো দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকাতেও যথেষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যাদেরকে সনাক্ত করা হচ্ছে এরা প্রবাসী বা প্রবাসীদের সংস্পর্শে আসা আত্মীয়স্বজন। ঢাকার বাইরেও এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন একটা জিনিস লক্ষণীয় ৩৩ জনের মধ্যে তিনজন মারা গেছে। তার মানে দশ জনে একজন মারা যাচ্ছে। এই রেটটা অনেক হাই। বিশ্বে কিন্তু মৃত্যুর এত রেট না। ৩ লাখ ২০ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ১৪ হাজার মারা গেছে। তার মানে ৫ ভাগ মারা গেছে। আমাদের এখানে এই রেট ১০ ভাগ। আমার মনে হচ্ছে, আমরা খুবই প্রথম পর্যায়ে রয়েছি। এই ধাক্কাটা এখনই শুরু হবে। আর দ্বিতীয় যে বিষয়টা আমার মনে হচ্ছে। ঢাকার বাইরে আমরা যথেষ্ট টেস্ট করিনি।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা টেস্ট করিনি সেখানে আমরা বলতে পারি না যে, আমাদের কতজন হয়েছে এবং আমাদের টেস্টের ক্ষমতা দূর্বল। আজকে ব্রিফিংয়ে বলা হলো, ১ লাখ টেস্টিং কিট রয়েছে। কিন্তু এতদিন আমরা শূনে এসেছি বাংলাদেশের কাছে ১৭শ টেস্টিং কিট রয়েছে। তাহলে অপ্রতুলতার বিষয়না, আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম। তবে, এই বিষয়টি খেয়াল করা দরকার, আমাদের দেশের সরকার সবাইকে গালি দিচ্ছে। অপ্রস্তুত সবাই ছিল। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি, বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। আমাদের দেশেও আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম। এখন যেটা মনে হচ্ছে, ঢাকার সবচেয়ে নাজুক কোন যায়গাটা হবে। আমি গত কয়েকদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে দেখছি – ঢাকার নাজুকতা দুই ধরণের হবে। আমরা ঢাকার বস্তিবাসী সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমরা ধরেই নিচ্ছি। তাদের কাছে বিদেশী আত্মীয়স্বজন আসছে না। তাদের কিছু হবেনা। কিন্তু বাস্তবে যেটা হচ্ছে বস্তির মানুষেরা দুই যায়গায় কাজ করছে। তারা বিভিন্ন বাড়িতে কাজে যাচ্ছে। যেখানে বিদেশ থেকে ফেরা মানুষেরা থাকছে। অর্থাৎ বস্তিবাসীর পক্ষে ভাইরাসটা গ্রহণ করাটা খুবই সোজা। মেয়েরা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে। পুরুষরা বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। বায়ারের কাছ থেকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এই ভাইরাস পেতে পারে।যারা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়ে গেছে, তারা যে সামাজিক সংক্রমণ ঘটাবে না এটা কিভাবে বলব! কমিউনিটি লেভেলে ছড়ানোর ক্ষেত্রে বস্তিবাসীর সবচেয়ে বেশি অবদান হবে। কারণ তারা সব যায়গায় সব লেভেলে যায়। তারা শুধু রুজির জন্য এসব যায়গায় যায়। এই যে রুজিটা বন্ধ হয়ে গেল বা অনেকক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেইক্ষেত্রে এরা কি করবে! এরা যেকোন যায়গায় যাবে। যদি বাস-ট্রেন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এরা ঢাকাতেই থাকবে। মানুষ যদি একবারও বের হয় তাহলেও সে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন যদি পাড়ায় পাড়ায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকে তাহলে এই সংক্রমণ কিভাবে ঢাকা আটকাবে। এই পরিকল্পনা আমাদের নাই। এই পরিকল্পনাটা এখনও অপ্রতুল মনে হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই প্রায়োরিটি ঠিক করতে হবে। বস্তিবাসীকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, এই পরিকল্পনার সীমাবদ্ধতা আমি মনে করি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার, এই সরকারের নিয়ত নেই বা সরকার তাচ্ছিল্য করছে তা নয়। এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা দেখানোর ক্ষমতা সরকারের নেই। আমরা ডেঙ্গুতেই কতটা কাহিল হয়েছি। করোনা ভাইরাসের মধ্যে কতটা কাহিল হবো সেটা অনুমান করা যায়। তারপরও সংগঠিত যেসব বাহিনী রয়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী সহায়তা করবে এটা সুসংবাদ।
তিনি বলেন, গণহারে আমাদের এখন টেস্টিংটা শুরু করে দেয়া উচিত। এর বিকল্প নাই।ছুটি বলার কোন মানে আছে। ছুটি না বলে সরকার তো লকডাউন দিয়েই দিতে পারত। সেটা দিলে তো কোন অসুবিধা হতো না। মানুষ এটা চাইছে। যতক্ষণ না লকডাউন হবে মানুষ ঘুরবে। আর যদি বলে দেয়া হয় পাড়ায় পাড়ায় সেনাবাহিনীর লোকজন যাবে তাহলে লোকজন অনেক বেশি সংযত হয়ে চলবে। তা না হলে বাঙালির যে চরিত্র দেখা গেল গত ৭/১০ দিনে এতে মনে হয়না যে বাঙালি সংযত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বড় আকারে ভাইরাসের আক্রমণ হবে এটা নিশ্চিত। সেই আক্রমণ কতটা কমিয়ে আনতে পারব সেটা সরকার কোনকিছূ বলতে পারবে না। যারা এসব বিষয়ে কথা বলেন তারা যদি রাশ টেনে কথা বলেন এটা ক্ষতির কিছু নাই। তারা যদি আটকাতে না পারেন, আমরা যদি শুনি যে ১০ লাখ মানুষ মারা যাবে। সেটা ৩০ লাখ হতে পারে। এই দেশে যেখানে মানুষ এত উচ্ছৃঙ্খল সেখানে সংযত হয়ে সবার কথা বলা উচিত।
তিনি বলেন, এখন ইতালিতে কমা শুরু করেছে। তার মানে যতই উপরে উঠুক কমবেই। চীনে উঠেছিল কমে গেছে। আমাদের চীন সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত। আমাদের সহায়তা করতে দেয়ার জন্য। শুধূ টেস্টিং কিট না। হয়ত আমরা জানি না কিভাবে করতে হয়। যারা সুরক্ষার কাজে জড়িত চিকিৎসক, নার্স, সরকারের একজন কর্মকর্তা মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক বলে বসলেন, আমাদের অর্থের অভাবে মাস্ক দিতে পারছিনা। এরচেয়ে অদ্ভূত কথা কেউ বলতে পারে এই সময়ে ভাবা যায়না। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, এরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছেনা। পাবলিক তো সিরিয়াসলি নিচ্ছে না, স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছেনা। স্বাস্থ্যখাতের মানুষেরা যদি বিষয়টি সিরিয়াসলি না নেয় তাহলে বিপদ আরো বেড়ে যাবে। আর সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে। এখন ওবায়দুল কাদের কম কথা বললে ভাল হয়। তিনি বলেছেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। তাহলে অন্যরা কি করছে? এখন ছুটি ঘোষনা করেছে। লকডাউন মানে কি? বাড়িতে থাকতে বলছে। এই ঘোষনাটা দিতে অসুবিধা কোথায়? এই ক্রাইসিসের মধ্যে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ একে অন্যকে গালি দিচ্ছে। এতেই বোঝা যায়, এদের অবস্থানটা কোথায়?
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা