অনলাইন ডেস্ক
নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে সহায়তা পেলেও মধ্যবিত্ত তো তা পাচ্ছে না। কোথাও গিয়ে হাত পাতাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। গত মে মাসে নারায়ণগঞ্জের এক ব্যক্তি সরকারি তথ্যসেবা নম্বর ৩৩৩-এ কল করে খাদ্য সহায়তা চেয়ে উল্টো জরিমানা দিয়েছিলেন। যদিও পরে তদন্ত করে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি তাঁর ভাই-বোনদের সঙ্গে পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। চারতলা ওই বাড়ির তিনটি কক্ষের মালিক তিনি। তাঁর সত্যি খাদ্য সহায়তার দরকার ছিল।
সাইদুর ও রাকিবদের মতো চাকরি হারানো তরুণের সংখ্যা বাড়ছেই। তাঁদের কেউ কেউ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই না করলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় দিশাহারা শিক্ষিত বেকাররা। করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে নতুন করে বেকার হওয়াদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কর্মহীনদের সংখ্যাও কম নয়। এই দুইয়ে মিলে দেশে বেকারের সংখ্যা যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙেছে।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে চাকরি করতেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রাকিব হোসাইন। গত এপ্রিলে যখন নতুন করে আবার লকডাউন শুরু হয়, তখন তিনি চাকরি হারান। রাকিব হোসাইন বলেন, চাকরি হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে। আশা ছিল, করোনার প্রকোপ কমলে আবার চাকরি ফিরে পাবেন। কিন্তু আবার লকডাউন শুরু হওয়ায় সেই আশাও শেষ হয়ে গেল।
রাকিবের মতো চাকরি হারিয়ে রাজধানী থেকে বাড়ি চলে গেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাইদুর রহমান (৪৫)। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। চাকরি হারিয়ে তিনি এখন গ্রামে গিয়ে মাশরুম চাষ করছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছেন (২৭.৩৯%)।
ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার তথ্য বলছে. করোনা মহামারিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরে ৭৭ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক আয় কমেছে এবং ৩৪ শতাংশ পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এ সময়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ৬২ শতাংশ কমে গেছে, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরিবারগুলোর ৬১ শতাংশেরই অন্তত একজন সদস্য করোনা দুর্যোগের কারণে চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। আবার গ্রামাঞ্চল বা মফস্বল শহরে ফিরে আসা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের প্রায় ৭৭ শতাংশ মনে করে কাজ বা চাকরি খুঁজে পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনেকের ঋণ বেড়েছে। কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছে।
লকডাউন প্রসঙ্গে ড. ফাহমিদা বলেন, ‘আমাদের লকডাউন অপরিকল্পিত, কোনোটার সঙ্গে কোনোটার সমন্বয় নেই। এটা কোনো কার্যকর লকডাউন নয়। স্মার্ট লকডাউন দিতে হবে।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত একটি জরিপের তথ্য বলছে, মোট জনগোষ্ঠীর ৪২ শতাংশ এখন দরিদ্র। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) আরেকটি জরিপ অনুসারে, মহামারির প্রভাবে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। স্পষ্টতই মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ এর মধ্যে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘যাঁরা নিম্নমধ্যবিত্ত ছিলেন, তাঁরা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। এ মুহূর্তে তাঁদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দরকার। নতুন করে যাঁরা দরিদ্র হয়েছেন, বাজেটে তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, রাষ্ট্রের অবকাঠামো ও এডিপিতে বড় বড় আর্থিক খরচ হচ্ছে। এ সময়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় কিছু প্রকল্প সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) সঙ্গে অতি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে হবে। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো অল্প পুঁজির হলেও সেখানে প্রচুর মানুষ নিজের কর্মসংস্থান নিজেই করতে পারে। সহজে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এমএসএমইয়ের ভূমিকা অনেক বেশি।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা