অনলাইন ডেস্ক
‘সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন: লেভারেজিং ইনোভেশন অ্যান্ড কাটিং এজ টেকনোলজি’ এই শিরোনামে ইভেন্টটি শনিবার আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তি সমাধানের মাধ্যমে কীভাবে দক্ষিণের দেশগুলোতে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা যায় এ বিষয়ে আলোচনা ও সমাধান বের করে আনা ছিল ইভেন্টের মূল লক্ষ্য। ইভেন্টের মাধ্যমে দক্ষিণের দেশগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহারে টেকসই উন্নয়নে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এই দেশগুলোতে অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নে প্রযুক্তিখাতে কোন কোন পর্যায়ে সমস্যার মুখে রয়েছে এবং সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ, একাডেমিয়া এবং বেসরকারি খাতের বিজ্ঞজনরা সক্রিয়ভাবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এসময় অন্তর্ভুক্তিমূলক ডায়ালগ ও জ্ঞান বিনিময়, সমন্বয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন আলোচকরা।
উচ্চ পর্যায়ের এই অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য প্রাদন করেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত এবং উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মাসুদ বিন মোমেন।
এসময় ‘ই-কোয়ালিটি ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন’এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট- এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী। তিনি ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার কিছু দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে এর সমাধানে ই-কোয়ালিটি সেন্টার বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, ‘‘ই-কোয়ালিটিকে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বা ডিজিটাল সমতা অর্জনের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাতে সামগ্রিকভাবে ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখতে পারে। ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহারের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ডিজিটাল বিভাজন কমাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল নীতি প্রণয়ন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উন্নত সেবা প্রদানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হবে।’’
বিশেষ এই অনুষ্ঠানে ‘সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন: লেভারেজিং ইনোভেশন অ্যান্ড কাটিং এজ টেকনোলজি’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। ডিজিটাল বিভাজন কমাতে ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান আলোচকরা। ই-কোয়ালিটি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের বিকল্প নাই বলে উল্লেখ করা হয়।
ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘‘ডিজিটাল বিপ্লবের সাথে সাথে আজকের বিশ্বে ডিজিটাল বিভাজন সমাজে বৈষম্য তৈরিতে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। তবে, সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে ই-কোয়ালিটি নিশ্চিতে ডিজিটাল উন্নয়ন সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। ডিজিটাল বিভাজন শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে ই-কোয়ালিটি সেন্টার ইনোভেশন (আইথ্রি) কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে আশা করছি।’’
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠাকে কীভাবে আরো কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির আওতায় নিয়ে আসা যায় সে বিষয়টি তুলে ধরেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের শ্রীলঙ্কার স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাউথ সাউথ কো-অপারেশন বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির 21তম অধিবেশনের সভাপতি মোহন পিয়েরিস, এইচ.ই.।
দক্ষিণের দেশসহ অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশনকে জোরদারের কথা উল্লেখ করেন জাতিসংঘ অফিসের সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের পরিচালক মিসেস দিমা আল খাতিব বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এসেছে। একটি বৈষম্যহীন ডিজিটাল রাষ্ট্র নির্মাণ ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো যাতে বাস্তবায়ন হয় সেক্ষেত্রে সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও সহযোগিতার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ জাতিসংঘ।’’
দেশের নাগরিক সেবা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার ফলে সেবা গ্রহণে নাগরিকদের ১৯ বিলিয়ন সময়, ২১.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ এবং ১২.৭ বিলিয়ন যাতায়াত কমেছে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তি-নির্ভর পাবলিক সার্ভিস উদ্ভাবন গ্লোবাল সাউথ-এ অগ্রগামী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বৈশ্বিক সমৃদ্ধি এবং সুযোগ তৈরি হওয়ায়, বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোতে আমদানিকারক থেকে রপ্তানিকারকের ভূমিকায় বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে জ্ঞান ভাগাভাগিকরণ এবং প্রযুক্তিগত কারিগরি সহায়তা প্রদানে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রযুক্তিগত ক্রমবর্ধমান অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল অগ্রগতিকে কার্যকরভাবে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ। জ্ঞান সহায়তা ও উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন দূর করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ফিজিকে প্রযুক্তিনির্ভর ই-গভর্ন্যান্স সমাধান, ফিলিপাইনের বিএআরএমএম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম ‘মাইগভ’ এর সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। সোমালিয়া ও জর্ডানে দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের ম্যাচমেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘নাইস’ এবং তুরস্ক, সোমালিয়া এবং সাউথ সুদানে ই-কমার্স এগ্রিগেটর প্ল্যাটফর্ম ‘এক-শপ’ এর মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশেও এই সাফল্য ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আন্তঃদেশীয় মধ্যস্থতার ওপর ভিত্তি করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি-নির্ভর উৎকৃষ্ট চর্চাগুলো ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক আইসিটি উদ্ভাবন (আই-থ্রি) -এর মধ্য দিয়ে এখন আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই-এর বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ দেশের জনগণের কাছে আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজিকরণ এবং নাগরিকসেবাকে দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় তথ্য বাতায়ন, ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় হেল্পলাইন-৩৩৩, ই-মিউটেশন, মাইগভ, ই-নথি, মুক্তপথ, শিক্ষক বাতায়ন, কানেক্ট, নাইস, একপে এবং একশপ-এর মতো এটুআই-এর উদ্যোগগুলো প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিনের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা