এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন প্রবীণ কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন এবং নবীন কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন। তাঁরা পুরস্কার হিসেবে পাবেন যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং এক লাখ টাকা। এছাড়া প্রদান করা হবে ক্রেস্ট, উত্তরীয় এবং সার্টিফিকেট।
২০১৯ সালের পুরস্কার বিজয়ী দুজনের নাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় রবিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে, শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাকক্ষে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এবং এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স এন্ড ব্র্যান্ডিং ডিভিশন, মি. সঞ্জীব চ্যাটার্জি। প্রবীণ এবং নবীন এই দুই শ্রেণির কথাসাহিত্যিকদেরই অনুপ্রাণিত করতে ২০১৫ সালে চালু হয়েছে এই পুরস্কার।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এই দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী এবং সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক এবং স্বকৃত নোমান। অন্যদিকে ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে। আর ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান এবং ফাতিমা রুমি।
উল্লেখ্য, ১২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।
রাবেয়া খাতুন
ছয় দশক ধরে রাবেয়া খাতুন লিখছেন। মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের দরুন জীবন ঘষে আগুন জ্বেলেছেন, বাংলা সাহিত্যে রেখেছেন প্রোজ্জ্বল স্বাক্ষর। তাঁর কয়েকটি বই ধ্রুপদী সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। তাঁর লেখায় এ দেশের সর্ববিত্ত মানুষের জীবন ফুটে উঠেছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। গল্প-উপন্যাসের বিষয়বস্তু হিসেবে এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও নানা সম্প্রদায় বারবার ফিরে ফিরে এসেছে। রাবেয়া খাতুনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর, বিক্রমপুরের পাউসার গ্রামে, মামাবাড়িতে। বাবা মৌলবী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ, মা হামিদা খাতুন। স্বামী চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক ফজলুল হক। চার সন্তান সাগর, কেকা, প্রবাল ও কাকলী। লেখালেখির পাশাপাশি একদা রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতাও করেছেন। রাবেয়া খাতুনের উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : মধুমতী (১৯৬৩), মন এক শ্বেত কপোতী (১৯৬৫), অনন্ত অন্বেষা (১৯৬৭), সাহেব বাজার (১৯৬৯), রাজারবাগ শালিমারবাগ (১৯৬৯), ফেরারী সূর্য; বায়ান্ন গলির এক গলি (১৯৮৪), মোহর আলী (১৯৮৫), নীল নিশীথ; বাগানের নাম মালনিছড়া (১৯৯৫), ই ভরা বাদর মাহ ভাদর (১৯৯৫)। বাংলা সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাবেয়া খাতুন পেয়েছেন বহু পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো একুশে পদক (১৯৯৩), স্বাধীনতা পদক (২০১৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫), শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৬), নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩)। কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯’ পাচ্ছেন রাবেয়া খাতুন।
সাদাত হোসাইন
এ সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন। তার লেখা নান্দনিক দ্যুতিতেও উদ্ভাসিত। জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে। বাবা হেদায়েতউল্লাহ বেপারি । মা নাসরীন আলো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। তার কাছে জীবন ও গল্প একাকার। প্রথম গ্রন্থ ‘গল্পছবি’ (২০১৩)। এখানে তার তোলা আলোকচিত্র এবং সেগুলো তোলার গল্প ঠাঁই পেয়েছে। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘জানালার ওপাশে’ (২০১৪)। তবে তাকে পাঠকদের মণিকোঠায় ঠাঁই দেয় ‘আরশিনগর’ (২০১৫) উপন্যাসটি। এর পরে তিনি পর্যায়ক্রমে লিখেছেন ‘অন্দরমহল’, ‘মানব জনম’, ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ এবং ‘নির্বাসন’। লিখেছেন ‘যেতে চাইলে যেও’, ‘আমি একদিন নিখোঁজ হবো’ এবং ‘কাজল চোখের মেয়ে’-র মতো পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। চলচ্চিত্রেও সাদাত গল্প বলে সমাদৃত হয়েছেন। নির্মাণ করেছেন ‘বোধ’, ‘দ্যা শ্যুজ’, ‘প্রযত্নে’সহ তুমুল জনপ্রিয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এই সূত্রে তিনি লাভ করেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার। বাংলা কথাসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাদাত হোসাইন পেয়েছেন এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮)। এবার ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে এবছরের ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯’ পাচ্ছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা