এবারের একুশে পদক পাচ্ছেন ‘সায়েবাস মেথড’ এর স্রষ্টা দেশের কিংবদন্তি চিকিৎসক ডা. সায়েবা আক্তার। এবার একুশে পদকের জন্য ২০ জনকে মনোনীত করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিসরূপ তাদের এ পদকে ভূষিত করা হচ্ছে।
বুধবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। এ ছাড়া এবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটও পাচ্ছে একুশে পদক।
সারা বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ। এই চিরাচরিত ভয়ঙ্কর চিত্রটি বদলে দিতে বিস্ময়কর অবদান রাখেন বাংলাদেশের চিকিৎসক ডা. সায়েবা আক্তার।
‘সায়েবাস মেথড’ নামের এই পদ্ধতি আজ অজস্র নারীর জীবন বাঁচানোর এক মোক্ষম উপায় হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকার এক ডজন দেশে সরকারি কর্মসূচির অংশ হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতি। নেপাল ও পূর্ব তিমুরেও এটা ব্যবহৃত হচ্ছে।
চিকিৎসায় একুশে পদকে মনোনিত হওয়ার পর ডা. সায়েবা বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে, আবার ভয়ও করছে। ভয় এজন্য করছে যে, কারণ আমাকে এ পুরস্কারের মাধ্যমে যে বিশেষ সম্মান দেয়া হয়েছে- আমি এর কতটুকু প্রতিদান দিতে পারব সেটা নিয়ে টেনশন করছি’।
তিনি বলেন, ‘আমি এ পুরস্কারের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, এ বিশেষ গৌরবময় পুরস্কার আল্লাহ রহমত ছাড়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না। এছাড়া আমার বাবা-মায়ের দোয়া, শিক্ষক ও রোগীদের দোয়া আছে। বিশেষ করে আমার রোগীদের দোয়ার জন্য আমি আজকের এই অবস্থানে এসেছি। আপনাদের কাছে আমি দোয়া চাই যে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন আমার রোগীদের সেবা করে যেতে পারি’।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের একুশে পদকে মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একনজরে ডা. সায়েবা
২০০৯ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত ব্রিটিশ জার্নাল অব অবসটেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজিতে সায়েবাস মেথডের ওপর পর্যালোচনা ছাপা হয়। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টসের পক্ষ থেকে তাকে তার উদ্ভাবনের জন্য সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। চাকরি থেকে অবসরের পর রাজধানীর মগবাজারে ‘মামস ইন্সটিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেনস হেলথ’ নামের একটি চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
নিজের অবসর ও প্রভিডেন্ড ফান্ডের সবটুকু (৩৩ লাখ টাকা) দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। এখানে তিনি গরিব দুস্থ ফিস্টুলা রোগীদের পরম মমতায় চিকিৎসা করেন।
ডা. সায়েবা যুগান্তরকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রচুর দরিদ্র মানুষ আসছেন। এই রোগীদের দিকে তাকানো যায় না। গরিব মানুষ। এদের চিকিৎসার জন্য আমার চিকিৎসক ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রচুর হেল্প করছে। কোনো চিকিৎসকই এখান থেকে কোনো সম্মানি বা টাকা নেন না।
তিনি বলেন, এখানে ভাড়া করা ভবনে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগীদের জন্য জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। এখানে ২০টি বেড রয়েছে। অনেক সময় রোগী ৪০জন হয়ে যায়। তখন প্রতি বেডে কষ্ট করে দুজন করে রোগী রাখতে হয়। আমি বিত্তবানদের এ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা