অনলাইন ডেস্ক
একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান দেবদাস আর নেই (ইন্না..রাজিউন)।
মজিবুর রহমান দেবদাস (৯০) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ছিলেন।
তাঁর দ্বিতীয় ভাইয়ের স্ত্রী রোকেয়া বেগম এ তথ্য জানান।
বেলা সাড়ে ১১টায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকশ দল তার মরদেহে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এই বুদ্ধিজীবীকে।
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ২০১৫ সালে এই গুণীকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক প্রদান করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেবদাসের পক্ষে তাঁর ভাতিজী দিলরুবা খানম বিউটী প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করেছিলেন।
মজিবর রহমান দেবদাস ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি মিলিটারীদের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। চোখের সামনে পাকিস্তানিরা এ দেশের বাঙ্গালী মুসলমানদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। জীবন রক্ষার্থে অনেকেই যখন হিন্দু নাম বাদ দিয়ে মুসলিম নাম রাখা শুরু করেছিল তখন এর প্রতিবাদ ও ক্ষোভে পিতা-মাতার দেয়া ইসলামী নাম মজিবর রহমান পরিবর্তন করে রাখেন ‘দেবদাস’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে নিয়ে বৈদ্যুতিক সক, লোহার রড দিয়ে পেটানো, শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গা ও চোখের কোনায় সুঁচ ঢুকানো থেকে শুরু করে বিরতিহীন ভাবে তাঁর ওপর চালানো হয়েছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতা। এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতে পাবনা ও নাটোর জেলখানায় নিয়েও তাঁর ওপর চালানো হয় নির্যাতনের ষ্ট্রিম রোলার। পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে অধ্যাপক মজিবর রহমান তখন ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
স্বাধীনতার পরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকায় মজিবর রহমানের কেউ খবর রাখেনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও স্মরণ করেনি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাক বাহিনীর হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া এই বুদ্ধিজীবীকে পাগল বলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার নামে আরও নির্যাতন চালায়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৯৮ সালের ২ আগস্ট মজিবর রহমান দেবদাসকে বিশাল সংবর্ধনা প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্মম নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারানো মহান এই মানুষটিকে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য দীর্ঘ ৪৪ বছর পর হলেও একুশে পদক প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাঁর স্বজনরা।
অতি সাধারণ মানুষ হয়েও সময়ের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে হয়ে ওঠেন অসম সাহসী পুরুষ।
জয়পুরহাটের সদর উপজেলার মহুরুল গ্রামে নিজ বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে নিংসঙ্গ জীবন কাটছিল বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মজিবরের। দেখভাল করতেন দ্বিতীয় ভাইয়ের স্ত্রী রোকেয়া বেগম, নাতনী অর্থিসহ অন্যরা।
বিছানা ছেড়ে কখনো হুইল চেয়ারে ঘরের বারান্দা পর্যন্ত বিচরণ সীমাবদ্ধ। কখনও কখনও বির বির করে আনমনে কথা বলতেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। কথা স্পষ্ট করে বলতে না পারলেও এই বুদ্ধিজীবী নিয়মিত পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে খাওয়া-দাওয়া করতেন ও ঘুমাতেন।
চিরকুমার মজিবর রহমান দেবদাসের মৃত্যুর খবরে জেলার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে আসে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা