তাসনিমা ইয়াসমিন নিমা : হঠাৎ করেই বিকেলে সিদ্ধান্ত হলো কাল আমরা দুপুরে সিনেমা দেখতে যাব। কিন্তু কী সিনেমা হলে চলছে? আমরী কী সিনেমা দেখবো? আমি মন খারাপ করে বললাম যে কাঠবিড়ালী দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজতো হলে কাঠবিড়ালী সিনেমাটা চলছেনা। কিন্তু মনে একটি আশা ছিল গত সপ্তাহে যেহেতু অন্য সিনেমা ছিল তাই এখন বা আজ এই শুক্রবার সিনেমা আসতে পাওে কাঠবিড়ালী। হয়ে গিয়ে তাই দেখলাম! কাঠবিড়ালীর পোস্টার। অনেক বেশী উত্তেজনা নিয়ে সিনেমা দেখার প্রহর না পেরুনোর সময়গুলো ঘড়ির কাঁটায় বাধা পড়ছে। সময় যেন কাটতেই চাইছেনা। অবশেষে সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা সিনেমার জন্য বড় পর্দায় চোখ রাখতে পারলাম।
সিনেমা শুরু হতেই একটি ঝুলন্ত লাশের চিত্র সামনে এসে গেল। এরপর একটি একটি করে চরিত্রগুলো আসতে শুরু করলো। সিনেমার ভিতরে প্রবেশ করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু মন বসছিল না। তাই বাম পাশে আপ্পি ও ডান পাশে বসা আমার বন্ধুকে সমানে বিরক্ত করতে শুরু করলাম। আপ্পি ধমক দিয়ে বলল, চুপ করে বসে সিনেমা দেখ। আর আমার বন্ধু বললো কী হলো সিনেমা দেখছ না? উত্তর দিলাম হুম দেখছি। বলে পর্দায় আবার চোখ রাখলাম। আবার বৃথা চেষ্টা সিনেমায় মন দেবার। আসামীকে আড়াল করে পুলিশের অন্যায়ভাবে টাকা উপার্জনের বর্তমান চিত্রটা পর্দায় ভেসে উঠলো। অন্যায় করেও প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের ছেলে হওয়ার কারণে বুক ফুলিয়ে আসামী জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, পুলিশ চেয়ারম্যানকে অপরাধীকে আড়াল করবার উপায় বলে দেয়। ঘটনাটির সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার পাওয়া হয়না ভুক্তভোগী পরিবারটির। অপরাধীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে আড়াল করতে। গল্পের মূল চরিত্র কাজল ও হাসুর প্রেম তখন পাকাপোক্ত হয়ে বিয়েতে রূপ নিল। এরপরই চলে আসে অন্য ঘটনা। হাসু ও কাজলের জীবনের নতুন ইতিহাস। তাদের জীবনের অন্যতম উপার্জনের সমস্যাসহ তাদের নিজেদের বোঝাপড়ায় আসে নানা প্রতিকূলতা। তাদের একজন অন্যজনের মতো হলেও তাদের অন্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে একজনের অপরাগতা প্রকাশ পায়। তারপর হাসুর জমিটাকেও সে না বুঝেই অন্যের হাতে তুলে দেয়। হাসু তার অপরাগতা মেটাতে নানা উপায় অবলম্বন করে যা মোটেও সঠিক ছিলনা। সংসারের চাপ আর টাউট বন্ধুর কথাতে হাসু অর্থ উপার্জন করতে শহরে পাড়ি জমায়। এরপর সিনেমায় দেখা যায়, হাসুর বন্ধুর সাথে তার স্ত্রী কাজলের অবাধ মেলামেশা চলতে থাকে। এভাবে সময় ভালই যাচ্ছিল তাদের। হঠাৎ করেই একদিন হাসুর বন্ধুর হাতে রুমাল দেখে কাজল বুঝতে পারে সে শুধু তার দ্বিতীয় নয়, তার তৃতীয় ও চতুর্থ বলে কেউ আছে!
এই ঘটনার পর কাজল তার নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং হাসুর বন্ধুর সাথে যথেষ্ট চিৎকার করে তাকে নিষেধ করে দেয়। তাঁর বন্ধু চলে যাবার সময় কাজলকে হুমকি দিয়ে যায় (যে সে তাকে দেখে নিবে)। এমন সময় চেয়ারম্যানের ছেলে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে। কাজলের খোঁজে কাজলের মায়ের কাছে যায়, পরে হাসুর বাড়িতে আসে। কাজল প্রচণ্ড চিৎকার করে চেয়ারম্যানের ছেলেকে দেখে এবং তাকে চলে যেতে বলে। সেই রাতেই চেয়ারম্যানের ছেলে একগুচ্ছ রশি হাতে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর দিন গাছের সাথে কাজলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে গ্রামবাসী। কে জানত হাসুর অভিমান জমে পাহাড়সম হয়েছে!
হাসুর অভিমান অন্য কিছু নয়। এটা ছিল তাঁর পরিপূর্ণ ভালবাসার মানুষের ধোঁকা। এরপর চলতে থাকে পুলিশের অনুসন্ধান। সেই অন্যায় কাজ করা পুলিশকে আবার দেখা যায় পর্দায়। তাঁর মুখে শোনা যায়, ন্যায়ের বাণী (অবশ্য এখানে অপরাধী গরীব ও প্রমাণহীন)।
হাসু বর্তমান পরিস্থিতি না বুঝেই তাঁর পূর্বের অভিমানের জের ধরে সে অন্যায় করল। তার বন্ধুকে রাতের বেলা মাছ ধরার নামে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলল। আর তার স্ত্রীকে ভালবাসার ছলনায় বালিশ চাপা দিয়ে সে তার মনের জ্বালা মেটায়। শেষ পর্যায়ের দৃশ্যে পুলিশি অনুসন্ধানেও না, ময়নাতদন্তে প্রকাশ পায় প্রাণ গেছে আরও এক নিষ্পাপ শিশুর। কাজলের মায়ের একমাত্র সন্তান, একমাত্র সম্বল হারা কান্নার সাথে মিশে ছিল হাজারও দু:খ। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘হাসু তোমার কাজল আর নেই।’ কাজলের মা কোনদিন জানতেও পারবে না যে, কাজলের হত্যাকারী তার নিজের স্বামী এবং (কাজলের মায়ের) তার নিজের মেয়ের জামাই। অপরাধীর অপরাধের কোন প্রমাণ না থাকায় পূর্বের অপরাধের জের ধরে পরে অপরাধ না করেও শাস্তি পায় চেয়ারম্যানের ছেলে।
পুরো সিনেমাটা বলাকা সিনেমা হলে দেখতে বেশ ভালই লেগেছে। আমরা দর্শক ছিলাম মাত্র কয়েকজন। সামনের সিটগুলো পুরো ফাঁকা। পরিচালক ছবিতে বাংলাদেশের গ্রামের দৃশ্য দেখাতে গিয়ে মাঝে মাঝে চারপাশের পরিবেশ ঘোলাটে করে দেখাচ্ছিলেন তখন বেশ বিরক্ত লাগছিল। তারপরও আমার মতো, আমাদের মতো দর্শকের স্বজনদের সঙ্গে বসে দেখার জন্য কাঠবিড়ালী একটি সুন্দর, নির্মল বিনোদনের ছবি।
# লেখক, বাংলা সিনেমার একজন ভক্ত।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা