তাসকিনা ইয়াসমিন
এখানে নির্বাচনের যে কালচার দাঁড়িয়ে গেছে, সেটা হলো কেউ ক্ষমতায় থাকলে তার বিপক্ষে নির্বাচনে জেতার দৃষ্টান্ত খুব একটা নাই। এটা বিএনপিই থাকুক, আওয়ামী লীগ থাকুক এটার দৃষ্টান্ত নেই। দলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক এত ঘনিষ্ট এর বাইরে নির্বাচন করলে নির্বাচনে জেতা খুব সম্ভব না। এটা বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও সম্ভব হতো না, আওয়ামী লীগ থাকলেও বিপক্ষে দল করে নির্বাচনে জেতা প্রায় সমান কঠিন। এগুলো অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।
এমনিতে নির্বাচনের যতটুকু উচ্ছাস ছিল সেটুকু কমে গেছে। মানুষ ভাবে যে আমি ভোট দিলে যারে দেব সে পাস করতে পারবেনা। সুতরাং ঝামেলার মধ্যে যাব কেন? এটা তারা চিন্তা করে যে, বিপক্ষে দলের হয়ে ভোট দিতে গেলে একটু ভয়ও পায় মানুষ। ভয় ভয় একটা পরিবেশ বিরাজ করে। এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। ভোট দিতে একটা দলের লোকজনের প্রার্থী, প্রতীক, লোকজনের চলাচল বেশি দেখা যায়। আর একটা দল অনুল্লেখযোগ্য থাকে। তাদেরকে দেখায় যায়না।
এমনি আমি হেঁটে হেঁটে যতটুকু দেখেছি এতে অন্য দলকে দেখা যায়না। ভোটের টার্ন আউট হয়ত ১৫ এর মধ্যেই থাকবে। হয়ত, ভোটকে উল্লেখযোগ্য করানোর জন্য ৩০ পর্যন্ত দেখানো হতে পারে। লোকজন ভোটের ব্যাপারে কিছুটা বিশ্বাস কমে গেছে। তার প্রভাব পড়তে পারে এবং এই ইলেকশনে পড়েছে বলে আমার মনে হয়।
ঢাকা শহরে আমরা যে কষ্টের মধ্যে থাকি প্রায় সব সেকশনের মানুষ তা এটা কোন মেয়রের পক্ষে সামলানো বা এটার সমাধান করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র রুডি জুলিয়ানি, সে শহরের যেকোন কাজ করার তার পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে।
এখানে মেয়রের একটা সিটির কাজের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা খুব সীমিত। তাকে প্রায় ১৫-২০ টা মিনিস্ট্রির আন্ডারে, সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে যে কাজকর্ম করতে হয় এটা দিয়ে মেয়রের পুর্ণাঙ্গ শহর পরিবর্তনের ক্ষমতাও নাই। আর অপজিশন থেকে যদি কেউ পাস করে তার তো আরও কোন ক্ষমতা থাকার কথা না।
সুতরাং, যেই শহরের মধ্যে আমরা বাস করে আসছি এই শহরের যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটবে এটা আশা করা যায়না।
আমি তো বলছি, একটা লম্বা ফুটপাত ক্লিন করার ক্ষমতাও মেয়রদের হাতে নাই। ফুটপাতে বিভিন্ন স্বার্থের লোকজন থাকে। একটা ফুটপাতও ক্লিন করা মেয়রদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ তার সঙ্গেও বহুমাত্রিক ব্যাপার, কারো না কারো দখলে থাকে। কিম্বা একজন উল্লেখযোগ্য দোকানদার উনি সামনের যায়গাটা ভাড়া দেন। এখান থেকে অনেক লোক ভাড়া ওঠায়।
এখন আমরা হাঁটতে পারিনা কোন ফুটপাতে। ফুটপাত সাত ফুট ছিল এটা কমতে কমতে কোথাও তিন ফুট, কোথাও জিরো ফুট। নো ফুটপাত। এটাকে ক্লিন করা এবং এসব ফুটপাতের দোকানদারি থেকে এত যায়গায় টাকা যায়, এটা একবার ওবায়দুল কাদের সাহেব চেষ্টা করেছিলেন। উনি মাঝে মধ্যে ভাল চেষ্টা করেন।
এলিফ্যান্ট রোডে পরে তিনি আর ইমপ্লিমেন্ট করতে পারলেন না। সুতরাং যেটা বলা যায়, আনিসুল হক যেটা করতে পেরেছেন, তেজগাঁওয়ের ট্রাক স্ট্যান্ড দূর করার জন্য একেবারে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে গেছিল। যেসব ট্রাক ড্রাইভার দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি সেখানে পার্ক করত। এখন এতটা ঝুঁকি নিয়ে কেউ হাতাহাতি করবে না।
আনিসুল হক বেঁচে থাকলেও যে এখন তিনি সেই পর্যায়ে ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারতেন এটা হয়ত সম্ভব হতো না। উনি প্রথম প্রথম চেষ্টা করেছেন। তার হয়ত চেষ্টা করার মতো শক্তি, কয়েকজন মন্ত্রী এমপিকে সঙ্গে নিয়ে গেছিলেন, ওখানকার ট্রাক রিমুভ করার ব্যাপারে। এই যে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ভাল কিছুর করার দৃষ্টান্ত এটাকে স্বাভাবিক প্রত্যাশায় এখন স্বাভাবিকভাবে যারা নির্বাচিত তাদের কাছে অতটা আশা করাও যায়না।
এখন তবে, ইলেকশনের সময় তারা কিছু কিছু বাড়তি কথা তারা বলেন। ইলেকশনের সময় একটু একটু মিথ্যা কথা তারা বলতেই পারেন। মানুষ এখন আর এগুলো বিশ্বাস করেনা। আমরাও বিশ্বাস করিনা এই শহরের কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এই মেয়ররা করতে পারবেন! অনেক ভেস্টেড ইন্টারেস্ট এখানে। তারা সেটার ক্ষমতাও রাখেননা।
বরং তারা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা ডুবে আছেন সামহাও।
আমি আসলে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াটার মধ্যে যেটা বলব, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে একটু চিন্তা যদি করা হতো। এটা যদি আর একটু কম্পিটিটিভ করা হতো, এই শহরগুলোকে মেয়রের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। শহর এখন মেয়রের হাতে না। মেয়রের হাতে ছেড়ে দিয়ে যদি ফ্রি নির্বাচনী অংশগ্রহণের প্রক্রিয়াটা যদি আরও ভাল করা হতো তাহলে ভাল হতো।
এই শহরের মেয়র করা উচিত ছিল প্রফেসর সিরাজুল ইসলামের মতো মানুষকে। এটা আমার ইউটোপিয়ান কল্পনা আরকি! এই মানুষ এই শহরকে নিয়ে ভাবে। এই শহরের অনেক চমৎকার মানুষ আছে যারা শহরটাকে ভালবাসে। এইসব লোক যাতে ইলেকশনে পার্টিসিপেট করতে না পারে তার জন্য ইলেকশন প্রসিডিউর বন্ধ করা আছে।
এই যায়গাগুলোয় যদি দরজা জানালা খোলা রাখা যায়, ভাল মানুষের, যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল, দলীয় লোকজনের বাইরে অনেক লোকজন আছে। মেয়র ইলেকশনটা এইসব লোকজনের হাতে ছেড়ে দিলে হয়ত কিছুটা পরিবর্তন হতেও পারে।
# ড. শেখ বাতেন – মুক্তিযোদ্ধা, সহ সভাপতি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা, সমাজতত্ত্বের শিক্ষক, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
# তাসকিনা ইয়াসমিন – সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা