তাসকিনা ইয়াসমিন : দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ জনে উন্নীত হওয়া এবং একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) । এই ঘোষণার পর দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জরুরী অবস্থা ঘোষণা দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, এই অবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দ্রুত সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এই রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
তবে, এই মুহুর্তে জরুরী অবস্থা ঘোষনার প্রয়োজন নেই বলছেন কোন কোন চিকিৎসক। তারা বলছেন, সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। তাহলেই করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এখনই যদি সরকার দেশের হাসপাতালগুলোর আউটডোর বন্ধ করে না দেয় এবং করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-নার্সদের বিশেষ ইউনিট তৈরি না করে তাহলে বিপদ আরও বাড়বে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে এখণ ১৪ জন আক্রান্ত বলা হচ্ছে বাস্তবে এই আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।
চিকিৎসক নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সবাই কে দায়িত্বশীল ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
কাজী বেন্নুর বলেন, চিকিৎসা দেবার জন্যই ডাক্তার হয়েছি। কিন্তু নিজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একচুলও ছাড় দেবো না। বক্ষব্যাধি, আই.সি.ইউ, মেডিসিন বিভাগের সকলে সহ যে সব চিকিৎসকরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছি, সবার জন্য পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকিউপমেন্ট (PPE) চাই। আমার জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে সমর্পিত।
সিনিয়র চিকিৎসক চিন্ময় দাস বলেন, সরকারের উচিত ছিল নিজস্ব তত্বাবধানে কোয়ারেনটাইন করা এতে ছড়িয়ে পরার সম্ভবনা অনেক কম হতো। এবং এটা সম্ভব ছিল খালি বাকুয়াজি কম করে কিছু প্রতিষ্টানকে কোয়ারেনটাইন সেন্টার ঘোষনা করে সেখানে বাইরে থেকে যারা আসছেন তাদের রাখা যেতো। হোম কোয়ারেনটাইকে পাবলিক হেলথ এর ভাষায় লিমিটেড কোয়ারেনটাইন বলে যা আমাদের মত দেশে পুরোপুরি বাস্তবায়ন অসম্ভব।
বিষয়টি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত চিকিৎসক শাইখ মাহবুব সেতু বলেন, সরকার যে পদ্ধতিতে এখন করোনার সনাক্তকরণ পরীক্ষা করছে। এটা করতে পিসিআর মেশিন লাগবে। সব যায়গায় এটা করা সম্ভবনা। আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা রোগিদের মধ্যে করোনার মতো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। এই সব রোগীদের করোনার টেস্ট করার জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা জানতে চেয়েছে বিদেশ ফেরত কারো সঙ্গে কন্টাক্ট আছে কিনা! রোগী বা রোগীর লোকজন কারো সঙ্গে বিদেশ ফেরত কারো যোগাযোগ না থাকলে তারা টেস্ট করতে চায়নি। সরকার বারবার বলছে আতঙ্কিত হবেননা কিন্তু আমরা চিকিৎসকেরা যা দেখছি বাঙালি আতঙ্কিত না হলে কিছুই মানতে চায়না।
স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই ৮/১০ লাখ মানুষ লক্ষ্মীপুরে জমায়েত হয়েছে। তাদের মধ্যে যে ৮/১০ বিদেশ ফেরত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিল না এটা কে বলবে। গতকাল আমরা আতশবাজি ফোটানো দেখার জন্য বহু মানুষের জমায়েত দেখেছি। এখানেও ঝুঁকি বেড়েছে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, করোনায় আক্রান্ত যে রোগী আজ মারা গেল, বাংলাদেশে, সে বিদেশ থেকে আসেনাই। তার ট্রাভেল হিস্টোরি নাই। আইইডিসিআর কি এখন ট্রাভেল হিস্টোরির বাইরে গিয়ে টেস্ট করা শুরু করবে? নাকি এখনো করবে না? করোনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এখনো যদি ট্রাভেল হিস্টোরি নিয়ে পড়ে থাকি, সবাই আক্রান্ত হয়ে পড়বে।আর চিকিৎসকরা আক্রান্ত হবে সবার আগে। আক্রান্ত হবে আরো হাজার হাজার রোগী। আরো হাজার হাজার সুস্থ মানুষ।
তিনি বলেন, এখন হাসপাতালগুলোর আউটডোর বন্ধ করে দেয়া দরকার। হু বলছে এটিপিক্যাল নিউমোনিয়া (শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ যেগুলো দেখা যায়) এটা হলে সাসপেক্টেড কোভিড -১৯ ধরে নিয়ে টেস্ট করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে এই ধরণের কিছুই ঘটছে না। গত ১০ দিনে আইসিইউ এর কোন রোগীর কোভিড ১৯ টেস্ট করা হয়নি। এখনও যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে ধীরে ধীরে এই রোগ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। যা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, আমরা যারা চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা দেব তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও ভাবা দরকার। ১ জন ডাক্তার যদি আক্রান্ত হন তিনি কয়েক হাজার রােগির মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে দেবেন। তাই, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার । আমরা উহানের ক্ষেত্রে দেখেছি যে চিকিৎসক-নার্সেরা রোগীর সেবা করেছে তারা টানা দুই মাস বাড়ি যায়নি। তারা দিনের পর দিন হাসপাতালে থেকেছে। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেছে। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশকেও করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের একজন বিজ্ঞানী এই রোগ সনাক্তকরণ কীট নিয়ে গবেষণা করেছেন। এটার জন্য যে কেমিক্যাল লাগে সেটা সুইজারল্যান্ড থেকে নিয়ে আসতে হবে। এটি আনার জন্য তাকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এখনও অণুমতি দেয়নি। এটা যদি না দেয় আর আমরা একসঙ্গে ২০০০-৩০০০ রোগীর টেস্ট করতে সক্ষম না হই তাহলে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। আমি মনে করি, দ্রুত দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা দরকার।
তবে, এ ব্যাপারে ভিন্নমত আছে। সিনিয়র চিকিৎসক নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, করোনা ডিজাস্টার মোকাবিলায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। আমি তীব্রভাবে এ-ই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি। এ-ই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা এখনো আমাদের সক্ষমতার ব্যবহার পুরো প্রয়োগ ই করি নাই। এখন আমরা যে যেখানে আছি সবার উচিত হবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা। আমাদের সরকার, জনগণ ও চিকিৎসকদের যে সম্মিলিত সক্ষমতা আছে তা বিশাল এবং সক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার করে এ-ই পরিস্থিতি উত্তরনে আমরা সক্ষম হবো ইন শাহ আল্লাহ। করোনা মোকাবিলায় নির্ধারিত কোয়ারান্টাইন জোন, হাসপাতাল,এম্বুলেন্স, প্রশিক্ষিত মেডিকেল টিম,পর্যাপ্ত পরিমাণ PPE র জরুরি ব্যবস্থা চাই।
চিকিৎসক ,মারুফুর রহমান অপু বলেন, এটা করলে তো আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। তাদের বিষয়টি ভাবা দরকার।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা