অনলাইন ডেস্ক
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর ইমরানের হাতে দুটি সুযোগ ছিল। ভোটের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া না হলে তাকে পদত্যাগ করতে হতো। ইমরান শেষ বল পর্যন্ত খেলতে চাওয়ায় আইন প্রণেতাদের ভোটেই তার বিদায় নিশ্চিত হয়। নাটকীয়তার এই ভোটে রাজনৈতিক মৃত্যু হলো ক্রিকেটার থেকে মাঠকাঁপানো রাজনীতিক ইমরানের, যার পেছনে দুটি বাস্তবতা ছিল। পার্লামেন্টের ভেতর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) জোটসঙ্গীদের সমর্থন হারায়, যার ফলে অনাস্থা ভোটে জিততে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেননি ইমরান। পার্লামেন্টের বাইরে সাবেক এ অলরাউন্ডার দৃশ্যত সেনাবাহিনীর সমর্থন হারান।
২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জিততে সেনারা ইমরানকে সহায়তা করে বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। সেই সেনাবাহিনীই ইমরান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে কিছু নিয়োগ এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত ইস্যুতে। যদিও ইমরানের সঙ্গে ‘বিচ্ছেদের’ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাহিনীটি।
পাকিস্তানে গত কয়েক সপ্তাহে খানকে গদিচ্যুত করতে প্রধান দুই বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। পিটিআই নেতৃত্বাধীন জোটের মিত্ররা ইমরানের প্রতি অসন্তোষের বিষয়ে সোচ্চার হতে থাকেন।
মার্চের শেষের দিকে পিটিআইয়ের জোটসঙ্গী বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সিনেটর আনোয়ার উল হক কাকর বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত সুশাসনের ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’ ইমরানের জোটত্যাগী দলটির এ নেতা আরও বলেছিলেন, গত দুই বছর ধরে অসন্তোষ চলছিল। কেন্দ্রীয় সরকারে নিজেদের অবস্থান এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসংখ্যা নিয়ে দল (বিএপি) অসন্তুষ্ট ছিল।
পিটিআইয়ের সঙ্গে তেতো সম্পর্কের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আফজাল চানের বক্তব্যে, যিনি মার্চের শুরুতে ছেড়ে আসা পিপিপিতে নতুন করে যোগ দেন। ইমরানের নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার কারণ হিসেবে চান বলেছিলেন, ‘(ইমরান) খানের দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাটফর্মে প্রভাবিত হয়েছিলাম। একই সঙ্গে বিদ্যমান পরিস্থিতির ওপর ত্যক্ত ছিলাম, কিন্তু তারপর আমি দেখলাম, খান বাইরে গরিবদের নিয়ে কথা বললেও অন্দরে তিনি সম্পদশালী বিনিয়োগকারী বেষ্টিত।’
অর্থনৈতিক সংকট
পাকিস্তানে ইমরানের প্রতি অসন্তোষ বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয় গভীরতর অর্থনৈতিক সংকটকে। তার শাসনকালের বড় সময় দুই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি দেখেছে পাকিস্তান।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিরোধীরা এককাট্টা হওয়ার পর বৈশ্বিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার মধ্যেও অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম কমানোর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান। একই সঙ্গে জুনে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দাম নির্দিষ্ট রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ইমরানের এ সিদ্ধান্ত ধারাবাহিক অর্থ ঘাটতি এবং দেনা-পাওনার ভারসাম্যজনিত সমস্যায় থাকা পাকিস্তানের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। চলতি সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে ঐতিহাসিক অবনমন হয় রুপির। এমন বাস্তবতায় এক জরুরি বৈঠকে সুদের হার ব্যাপকভাবে বাড়ায় স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান।
এ সংকট নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্ল্যাভাৎনিক স্কুল অফ গভর্নমেন্টের অর্থনীতিবিদ শাহরুখ ওয়ানি আল জাজিরাকে বলেন, ‘এটার একাংশ আগের সরকার সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে এবং আরেক অংশ অবশ্যই কোভিডের কারণে, তবে সরকার কৌশলী না হয়ে সমস্যা সমাধানে তড়িঘড়ি শুরু করে এবং সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কখনও।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা