অনলাইন ডেস্ক
দু’জনেই নোবেল জয়ী। বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন জার্মানীর উলম নামক একটি ছোট্ট শহরের এক ইহুদি পরিবারে ১৯৭৯ সালের ১৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন শহরে আমেরিকান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। আইনস্টাইন মোট বেঁচেছিলেন ৭৬ বছর। অপর দিকে বিশ্বখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল ইংল্যান্ডের মন্মথশায়ারের ট্রেলাক গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান পরিবারে ১৮৭২ সালের ১৮ মে জন্মগ্রহণ করেন। অগাধ পান্ডিত্য, প্রখর যুক্তিবোধ, অসাধারণ মনীষা ও অপূর্ব রচনাশৈলীর এই মহান দার্শনিক ১৯৭০ সালের ২ ফ্রেব্রুয়ারি ৯৭ বছর বয়সে ওয়েলস ক্যায়নার কনশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন।
আইনস্টাইন নোবেল প্রাইজ পান ১৯২২ সালে। ১৯২১ সালের নোবেল প্রাইজ ১৯২২ সালে ঘোষিত হয়। ১৯১০ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ৭ বার আইনস্টাইনের নাম নোবেলের জন্য উঠে আসে। কিন্তু বার বারই ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কোন তত্ত্বই নয়। শেষ পর্যন্ত তাকে ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট ওপর নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়। সেই ইফেক্ট ও আপেক্ষিকতাবাদ ১৯০৫ সালে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন।
উল্লেখ্য, নোবেল প্রাইজ গ্রহণ করার জন্য আইনস্টাইন সশরীরে উপস্থিত হননি। সেই সময় তিনি জাপানে লেকচার ভ্রমনে ছিলেন। নোবেল প্রাইজের বিষয়টি ছিল ‘Services to the theony of physics, especially for the law of photo electic effect’| অনেক বিশেষজ্ঞ অভিমত দিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় বিভিন্নমুখী গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য আইনস্টাইনের কমপক্ষে ৭ বার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। প্রায় ১৯১০ সাল থেকেই যখনই নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা চিন্তা করছিলেন ততবারই নোবেলের ঘোষণার মধ্যে সংশয় দেখা যায়। আলফ্রেড নোবেল বলে গিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাবেন আবিষ্কারক আর সেই আবিষ্কার যেনো মানুষের কল্যাণে লাগে। আইনস্টাইনের বেলায় বিতর্ক দেখা দিল তার আপেক্ষিক তত্ত্ব যুগান্তকারী হলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা মানুষের কোনো কাজে লাগবে না। আশ্চর্য হবার কথা তো বটেই। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। সমস্ত আবিষ্কার ও গবেষণায় শুধুমাত্র কাগজ কলমই ছিল সম্বল। আর সঙ্গে ছিল বেহালা। পরে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন মাধ্যাকর্ষণের কারণে আলোর পথ বেঁকে যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আইনস্টাইন ‘একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব’ এর উপর কাজ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, আপেক্ষিক তত্ত্বের পান্ডুলিপি নিলামে উঠেছিল ৬৮ লাখ ডলারে। আইনস্টাইন ঐ ডলার যুদ্ধ ফান্ডে দান করেছিলেন। সেই আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য তিনি নোবেল পাননি। দুঃখ কোথায় রাখা যায়। আইনস্টাইনের আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার কমিটি প্রতিবারই মনোনয়ন দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন কমিটির প্রভাবশালী সদস্য জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ফিলিপ লেনার্ড বরাবরই বিরোধিতা করেছেন। শেষ পর্যন্ত নোবেল কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ১৯২০ সালে শুধুমাত্র আইনস্টাইনকে নোবেল দেয়ার জন্য একটা বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দেখা গেলো সেই বিশেষ কমিটির বিচারকরাও আইনস্টাইনের জটিল গাণিতিক গবেষণাপত্রগুলো বুঝতেই পারছেন না। ১৯২১ সালে আইনস্টাইনকে নোবেল দিতেই হবে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তার যে তত্ত¡টা কিছুটা সহজে বোঝা যায় সেই ১৯০৫ সালের ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট (আলোক-তড়িৎ ফল) এর জন্য নোবেল দেয়া হয় আইনস্টাইনকে। তাও আবার ঘোষিত হয় ১৯২২ সালে। একই সালে পদার্থবিদ নিল্ বোহরকেও নোবেল দেয়া হয়। সেটি ১৯২২ সালের জন্য। নোবেল কমিটির এই সব কান্ডকারখানা শুনলে কে না অবাক হয়ে পড়ে। আইনস্টাইনের গাণিতিক গবেষণা নোবেল বিজয়ীরা বুঝতে পারেননি। কি তাজ্জব ব্যাপার।
এবার আসি দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নোবেল পুরস্কার নিয়ে তথ্য সম্পর্কে। রাসেল সারা জীবনে ৭৫টির উপর বই লিখেছেন। প্রায় ৮ বছর ধরে (১৯০২-১৯১০) প্রফেসর হোয়াইট হেডের সঙ্গে যৌথবাবে গবেষণা করে প্রকাশিত হয় প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা যা ছিল গণিত সম্পর্কীয় যুগান্তকারী রচনা। গণিতের ইহা একটি অমূল্য গ্রন্থ। এর আগে ১৯০৩ সালে ‘অংক শাস্ত্রের নীতি’ (The Principles of Mathematics) প্রকাশ করেন। অংক শাস্ত্রের ভিত্তির ওপর রচিত এই কাজ। এতে তিনি প্রমাণ করেছেন অংক শাস্ত্র এবং যুক্তিবিদ্যা এক এবং অভিন্ন। এই বই দু’টির মাধ্যমে রাসেল এই ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেন।
রাসেল ছিলেন যুদ্ধ বিরোধী। প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাসেলকে জরিমানা দিতে হয়েছিল। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে যুদ্ধ বিরোধী প্রকাশনায় আমেরিকার বিরুদ্ধে লিখায় রাসেলকে ৬ মাস জেল খাটতে হয়েছিল। এর ফলে ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদটি হারান। কারাগারে বসেই রাসেল ‘Introduction to Mathematical Philoshopy’ বইটি লিখেন। জীবন চলার পথে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯২৯ সালে রাসেল জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত বই ‘Marriage and Morals’ অর্থাৎ ‘বিবাহ ও নৈতিকতা’ প্রকাশ করলেন। এই বইয়ের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অধ্যাপক পদে গ্রহণ করেননি।
একজন বিশপ বিচার বিভাগে রাসেল ধর্ম ও নৈতিকতা বিরোধী বলে অভিযোগ আনলেন এবং এ জন্য বিচারক রাসেলকে অভিযুক্ত করেন। বিচারক রায় দিলেন রাসেল যা লিখেছেন তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মা বলেন, রাসেলের মত মানুষ শিক্ষক হলে আমার মেয়ের সর্বনাশ হবে। এ প্রসঙ্গে আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেণ যে এই সুন্দর পৃথিবীতে যাজকেরাই মানুষকে বার বার উত্তেজিত করে আর প্রতিভাবানরা হয় নির্বাসিত। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের দিকে তাকালে ধর্ম ব্যবসায়ীদের তাণ্ডব দেখলে আইনস্টাইনের কথা বার বার মনে পড়ে এবং আমরা গভীরভাবে তা উপলব্ধি করতে পারি।
রাসেলের দেয়া উইলিয়াম জেমস্ স্মারক বক্তৃতাগুলোই সংকলন করে ‘পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস’ বইটি রচিত হয় যেটি ছিল যাবৎকালের পাশ্চাত্য দর্শনের উপর যতগুলো বই লিখা হয়েছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বই। অথচ এসব বক্তৃতা মোটেই উন্নতমানের নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। যেমনি বলা হয়েছিল আইনস্টাইনের বেলায় ১৯৪৮ সালে ‘Human Knowledge; its scope and limite’ নামক আরেকটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
যেই Marriage and Morals এর জন্য রাসেল সর্বত্র সমালোচিত হলেন ১৯৫০ সালে সেই বইয়ের জন্যই বার্ট্রান্ড রাসেলকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো। আশ্চর্য তো হতেই হয়। The Nobel Foundation eitation এ লিখেছেন যে ‘The prize recognaized his varied and significant writing in which he champions humanitarian ideals and freedom of thoought not for any particular work’ অর্থাৎ মানবতার আদর্শ ও মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্রে একজন অগ্রগামী সৈনিক হিসেবে তার বিভিন্ন মুখী ও গুরুত্বপূর্ণ লেখনির জন্য এই নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো কোনো একটি বিশেষ কাজের জন্য নয়। সারাটা জীবন রাসেল মানবতার আদর্শ লালন করেছেন এবং মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করেছেন।
রাসেলকে যেমন Principia Mathematics এর জন্য নোবেল দেয়া হয়নি তেমনি যুগান্তকারী আবিষ্কার আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য আইনস্টাইনকেও নোবেল দেয়া হয়নি। আইনস্টাইন ও রাসেল দুই দিকপালই ছিলেন ঘোরতর যুদ্ধ বিরোধী। আইনস্টাইন ১৯৩০ সনে ‘Why War’ বইতে আইনস্টাইন ও সিগমন্ড ফ্রয়েডের মধ্যে পত্রালোচনা ছাপানো হয়। ‘The Fight Against War’ বইতে আইনস্টাইনের যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন, লিখা, বক্তৃতা বিবৃতির সংকলন ছাপানো হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে আইনস্টাইন শান্তির ওপর অনেক বক্তব্য দেন।
আমার বহু লেখায় আগেও বলেছি লিও শিলার্ডের পরামর্শে পরমানু বোমা তৈরি করার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে চিঠি লিখাটা ছিল আইনস্টাইনের জীবনের বড় ভুল। এর ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পেরে ১৯৪৫ সালের ২৫ মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে আরেকটা চিঠি লিখেছিলেন যেটি রুজভেল্টের হাতে পৌঁছেনি। ১১ এপ্রিল রুজভেল্ট মৃত্যু বরণ করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রুমেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হোন। ঐ চিঠি আর প্রেসিডেন্টের টেবিলে যায়নি। এদিকে জুলাই মাসে মেক্সিকোর আলমো গোরডো মরুভূমিতে আমেরিকা সফলভাবে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরীক্ষা চালায়। জাপানের জন্য দু’টো বোমা, একটি ইউরেনিয়াম ২৩৫ বোমা লিটল বয় এবং অপরটি প্লুটোনিয়াম ২৩৯ বোমা ফ্যাট ম্যানও প্রস্তুত হয় যেগুলো আগস্ট ৬ ও ৯ তারিখে যথাক্রমে হিরোশীমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত হয়। জাপান ১৪ আগস্ট ১৯৪৫ সালে (জাপান ১৫ আগস্ট) আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ দলিলে জাপান সম্রাট সহি করে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়। এই বছর আইনস্টাইন অবসর নেন।
নিউইয়র্কের স্টার হোটেলে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় আইনস্টাইন বলেছিলেন, যুদ্ধে জয় লাভ হয়েছে কিন্তু শান্তি অর্জিত হয়নি। ১৯৪৬ সালে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন আইনস্টাইনের ওপর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ম্যাগাজিনে ‘পারমাণবিক বোমার সুপার ফাদার’ আখ্যা দেখা হয় আইনস্টাইনকে এবং সমীকরণ E=mc2 কে দায়ী করা হয়। এই পর্যায়ে আইনস্টানের নেতৃত্বে এই বছরের ২২ মে The Emergency Committee of Atonic Scientists (ECAS) নামে পরমাণু বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন গঠিত হয়।
আইনস্টাইনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই সংগঠন ১৯৫০ সাল পর্যন্ত কাজ করে এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠনে সোচ্চার হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলে এবং আমেরিকা হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করে। পরমাণু বিশ্বের বিস্তৃতি বাড়তে শুরু করে। কে কার কথা শুনে।
১৯৫০ সালে এসে বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেল পুরস্কার পাবার পর আইনস্টাইনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে যায়। আইনস্টাইনের স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন হিরোশিমা নাসাগাকিতে এটম বোমার বিধ্বংসী রূপ দেখে আইনস্টাইন খুবই বিচলিত হয়েছিলেন এবং এটাই স্বাভাবিক কারণ এটার হোতা তো তিনি এবং তার ঐ একটা চিঠি। তিনি লিখেছেন, পারমাণবিক শক্তি মানব জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে সে রকম মনে হয় না। এই শক্তি মানবজাতির প্রকৃত ভয়ের কারণ হয়তো পরোক্ষভাবে তা ভালোই করবে। ভয় ছাড়া মানবজাতি তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা চালু করবে। ভয় ছাড়া মানুষ বোধহয় কখনোই শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।
১৯৪৭ সালে আইনস্টাইন জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্ব সরকার গঠনের পক্ষে মত দেন বিশ্বব্যাপী মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সুস্পষ্ট মত দেন। ১৯৪৮ সালে আইনস্টাইনের শরীর ভেঙ্গে পড়ে। আইনস্টাইন ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর সমর্থক। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন আইনস্টাইনের শান্তির নায়ক। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম ঘটছে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করে।
উল্লেখ্য, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মহাত্মা গান্ধীর নাম পাঁচবার প্রস্তাবিত হয়েছিল। কিন্তু তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি। ১৯৪৮ সালে কাউকেও নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়নি। বস্তুতপক্ষে আইনস্টাইন, রাসেল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী এসময়কালের বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব যারা শান্তির সপক্ষে প্রতিনিয়ত তাদের সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ‘রাসেল-আইনস্টাইন মেনিফেস্টো’ তৈরি হল এবং আইনস্টাইন ১৯৫৫ সালের ১১ এপ্রিল এই মেনিফেস্টোতে সহি করেন এবং ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইন মহাপ্রয়াণ করেন। আইনস্টানের ইচ্ছে অনুযায়ী তার দেহকে পোড়ানো হয় এবং দেহভস্ম দেলোয়ার নদীতে ছিটিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যুর পর একজন প্যাথোলজিন্ট Dr. Harvey আইনস্টাইনের ব্রেইনটি ব্যবচ্ছেদ করে রেখে দেন। আরেকজন চক্ষু ডাক্তার আইনস্টাইনের চোখ দু’টি নিয়ে নেন। আইনস্টাইন নেই, কবিগুরু নেই, মহাত্মা গান্ধী নেই। রাসেল একা। তারপরও দার্শনিক রাসেল থেমে নেই। ঐ মেনেফিস্টোতে ১১ জন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি সহি করেছিলেন। রাসেল ১৯৫৫ সালের ৯ জুলাই ঐ মেনিফেস্টো বিশ্বজনতার সামনে উপস্থাপন করলেন যুদ্ধ নয় শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালানোই হবে উত্তম পন্থা।
এই মেনিফেস্টোর কথা কেউ কর্ণপাত করেছে বলে মনে হয়নি। অস্ত্র প্রতিযোগিতা, রাজনীতি এমন জিনিস যা রাষ্ট্র ও ব্যক্তিকে অন্ধ করে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছে তা আজও অব্যাহত। মূলত: পৃথিবীতে শান্তিবাদী নেতৃত্ব বলতে সক্রিয়ভাবে বার্ট্রান্ড রাসেলই বেঁচে আছেন। পৃথিবী থেকে পারমানবিক অস্ত্র নিশ্চিহ্ন করার জন্য গঠিত হল ‘Cauipaign for Nucloar Disarmament (CND)’ । রাসেল হলেন এর সভাপতি। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে এই সংস্থা গঠিত হয়।
ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৃটেন, আমেরিকা ও রাশিয়ার রাষ্ট্র প্রধানকে অহেতুক পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অংশ না নেয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন কিন্তু তারা কেউ রাসেলের ডাকে সারা দেননি। রাসেল তার ৯০ বছর বয়সে গঠন করলেন ‘বার্ট্রান্ড রাসেল পিস ফাউন্ডেশন’। রাসেল তার জীবনের উপার্জিত অর্থ তুলে দিলেন এই ফাউন্ডেশনে। রাসেল ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন এবং লিখলেন ‘ওয়ার ক্রাইম ইন ভিয়েতনাম’। দার্শনিক রাসেল প্রতিবাদী, যুক্তিবাদী, জ্ঞান সন্ধিৎসু অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী। মানবদরদী অসাধারণ মনীষার ছাপ দিয়ে মানজাতির সামনে রেখে গেলেন অবিস্মরণীয় অবদান।
আইনস্টাইন ও রাসেল দু’জনেই জীবদ্দশায় পরমাণুমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং বিশ্ব শান্তি স্থাপনে তাদের অবদান বিশ্ববাসী কোনোদিন ভুলবে না। এই দুই মহান ব্যক্তির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও প্রাবন্ধিক, চ.বি. এর পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা