আবু মোহাম্মদ মাছানী
প্রশ্ন: কেমন আছেন? করোনাকালে দিনগুলো কাটছে কিভাবে?
উঃ:ভালো আছি। তবে খুব ভালো নেই। খুব ভালো থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আশেপাশে প্রিয় মানুষগুলো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, আরও কিছু মানুষ ভালো নেই। প্রিয় মানুষগুলো যখন ভালো থাকেনা, তখন একা একা ভালো থাকা যায় না। তারপরেও নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছি ভালো থাকার। ভালো থাকাটা জরুরি আমার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আশেপাশের মানুষের জন্য। বিশেষ করে মা, বউ, সন্তান,বোন এবং বন্ধু-বান্ধবের জন্য। তাদের জন্য আমার ভালো থাকা লাগে। কারণ তারা আমার কাছ থেকে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি পায়। সেজন্য আমি চেষ্টা করি এই মানুষগুলোর জন্য ভালো থাকতে।
প্রশ্ন: কেমন পৃথিবী দেখতে চান করোনা পরবর্তী সময়ে?
উঃ:আমার দৃঢ়বিশ্বাস একসময় করোনা চলে যাবে। আমরা আবার একটা সুন্দর পৃথিবী দেখব। আবার প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারব। এখন যেমন একটা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স মেইনটেইন করতে হচ্ছে। আমরা সামাজিক জীব, আমরা সামাজিক দুরত্ব মেইনটেইন করব এ ভাবনাটাই ছোটকাল থেকে কোনদিন আমাদের সমাজ কল্যাণে শেখানো হয়নি। আমরা পারিবারিকভাবেও শিখিনি। আমরা সবসময় মানুষকে কাছে টেনে নেয়া, সহমর্মিতা, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া শিখেছি। আর সেটাই আমাদের জন্মগত অধিকার। আর সেই মানুষগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে সেটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। অবশ্যই আমি করোনা পরবর্তী আগের সেই পৃথিবী ফেরত চাই। আগের মত মানুষকে দেখে আতঙ্কিতগ্রস্ত হবোনা, আমাকে দেখে আতঙ্কিত হবে না। তারা আমার কাছে আসবে, ভালোবাসবে, আমি তাদেরকে ভালোবাসবো। মানুষের কাছ থেকে যেন হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। কারণ আমরা এই করোনা পরিস্থিতিতে বুঝেছি যে এই বিশাল পৃথিবীতে আমরা কত তুচ্ছ একটা প্রাণী। আমাদের চাহিদাও কম। অল্পতেই আমরা থেকে খেয়ে বাঁচতে পারি ।সেজন্য অন্যেরটা ছিনিয়ে নেয়ার প্রয়োজন নেই। হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সারা পৃথিবী শাসন করতে হবে সে সব ভাবনা ভুলে গিয়ে সবাই সবার পাশে সুন্দরভাবে থাকতে পারি আমি এরকম একটা পৃথিবী চাই। আমি এরকম একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পৃথিবীতে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারব সেরকম পৃথিবী চাই। সেরকম পৃথিবী চাই যে পৃথিবীতে আপনজনকে পাশে পাব। এই পৃথিবীতে আমার সাথে ফুল, ফল এবং পশুপাখি যারা আছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট যে জায়গা আছে তারা সেখানেই থাকবে। পৃথিবীটা আমার একার নয়। প্রকৃতি আমার কাছে মনে হয় প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমি সঠিকভাবে একটা সুন্দর পৃথিবী চাই!
প্রশ্ন: এখনতো লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরো সহজতর হবে হয়তো। আপনার বক্তব্য কি?
উঃ:আসলে লকডাউন শিথিল না করে কোনো উপায়ও নেই। কারণ জীবন আগে না জীবিকা আগে? আমরা তো কোন কম্প্রোমাইজ এ যেতে পারছিনা। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন যেমন আছে, তেমনি প্রয়োজন আছে কর্ম। কাজ করতে হলে তো আপনাকে বাইরে যেতেই হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ তো ঘরে বসে করা যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বাইরে যেতে হবে। খাদ্য আহরণের জন্য বাইরে যেতে হবে। সারা পৃথিবীতে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। অনেকে এই শিথিলতা কি তা ভুল বুঝে বিয়ে করতে চলে যাচ্ছেন। অনেকে শপিং করতে চলে যাচ্ছেন। অনেকে অযাচিতভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক সময় লকডাউন কি তা দেখার জন্য মানুষ বের হচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন ছাড়া আমরা ঘরের বাইরে যাব না, আমরা চেষ্টা করব ঘরে থাকতে, পরিবারের সঙ্গে থাকতে। কারণ এটাই হলো করোনা কে প্রতিহত করার সহজ উপায়। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা যদি নিজেদের রেকটিফাইড না করি তাহলে করোনা থেকে বেরোতে পারবোনা।
প্রশ্ন: শুনলাম চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হবে নিয়মকানুন মেনে? শুটিং শুরু করবেন?
উঃ:চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু বলা হয়েছে যে নিয়ম-নীতি মেনে যেন শুটিং করা হয়। সেই অর্থে এখন পর্যন্ত দুই একটি সিনেমার কাজ হয়েছে। সেভাবে শুরু হয়নি, ঈদ নিয়ে উত্তেজনা, সেটাও নেই এই মুহূর্তে। কেউ সাহস করছে না বাইরে যেয়ে শ্যুটিং করতে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে অনেক মানুষের প্রয়োজন হয়। নানান জায়গা থেকে নানান রকম লোক আসে। প্রোডাকশন থেকে শুরু করে ক্যামেরা এবং নানান ডিপার্টমেন্ট আছে। সেখান থেকে শতাধিক মানুষের সমাগম। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে আর একটু দেখে বা জুলাই মাস শেষ হবার পর সিদ্ধান্ত নিব।
প্রশ্ন: যদি শুটিং শুরু করেন তবে কীভাবে সম্ভব তা।যেহেতু এটা একটা বিশাল মাধ্যম, প্রচুর লোকের প্রয়োজন
উঃ:এরমধ্যে আমার সিনেমা যেগুলো আছে সেই সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক আছেন তারাও এখন সেইভাবে চান না শুটিং শুরু। তারা সবাই যথেষ্ট সচেতন। সবাই তো আসলে বিপদগ্রস্ত। সবাই সবার ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি।আমি চাইলে ও আমার সহশিল্পী হয়তো চাইবে না, আবার সহশিল্পী চাইলে হয়তো টেকনিশিয়ান চাইবে না। সে ক্ষেত্রে আমি আরো কিছুদিন দেখবো, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো যে কি করা যায়। আবার আমার কাছে আপাতত দৃষ্টিতে দেশের সার্বিক অবস্থায় মনে হচ্ছে যে কোরবানি ঈদের আগে হয়তোবা সেই অর্থে শুটিং করার কোন সম্ভাবনা নাই। আমার ‘গাংচিল’, ‘জ্যাম’ ছবিগুলোর কাজ চলছিল। আমার প্রোডাকশনের ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ ,’গন্তব্য’ তো কমপ্লিট হয়ে আছে। নতুন কিছু ছবি শুরু হবার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক এ অভিনয় করার কথা আছে। তো সবকিছু থমকে আছে। সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারবো।
প্রশ্ন: শুনেছি করোনার এই ক্রান্তিকালে অসহায় শিল্পীদের পাশে ছিলেন। একটু খুলে বলবেন কি?
উঃ:আসলে শিল্পীদের আমার অসহায় ভাবতে ভালো লাগে না। তাদেরকে দুস্থ বলতেও আমার কষ্ট হয়। কারণ শিল্পীরা শিল্পী। একটা শিল্পী হওয়া বা একটা শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তি মানুষকে কিছু সময়ের জন্য অন্য জায়গায় নেওয়া, মানুষের মধ্যে একটা নতুন ভাবনার সৃষ্টি করা একটা কঠিন কাজ। এই কঠিন মাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে অন্যের বিনোদনের খোরাক যোগান সেই সব মানুষগুলোকে আমি অসহায় ভাবতে চাইনা। সাময়িকভাবে কিছু শিল্পী, বেশকিছু কলাকুশলী অসহায় হয়ে আছে। বিশেষ করে যারা দৈনন্দিন কাজ করতেন। সেই মানুষগুলো একটু বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাক্ষণ আমাদের পাশে থাকেন। সরকার সহযোগিতা দিয়ে যান। এর মধ্যে কিছু শিল্পী আছেন, কলাকুশলী আছেন যারা বাকিদের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তেমন কিছু শিল্পীদের আমি সাহায্য করেছি। তারা আমার জন্য প্রাণভরে দোয়া করেছেন। সেই মানুষগুলোর জন্য যতটুকু সম্ভব করেছি এবং যতদিন পারবো আমি করে যাব এবং আমি আরো চাই যাদের ক্ষমতা আছে তারাও যেন তাদের পাশে দাড়ান। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এই করোনা ক্রান্তিকাল তাড়াতাড়ি চলে যাক বিশেষ করে এই মানুষগুলোর জন্য। এইসব মানুষগুলোর কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। কেননা গত চারটি মাস থেকে এরা কোন কাজ পাচ্ছেন না। চার মাস ধরে ঢাকা শহরের সারভাইব করা কঠিন একটা বিষয়। আমি সবার কাছে ওদের জন্য দোয়া চাচ্ছি।
প্রশ্ন: নায়ক ফেরদৌস সকলের ভাল বন্ধু বিশেষ করে অভিনেত্রীদের? গোপন রহস্য কি?
উঃ:আমি বন্ধুত্ব বিশ্বাসী। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো আমার বন্ধুত্ব। আমার অনেক ভালো ভালো বন্ধু আছে। আমার কাছে এই সম্পর্কটা একটা দারুন আত্মার একটা সম্পর্ক। যেখানে কোনো চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তির আশা নেই। এই সম্পর্ক সহসা ছিন্ন হয় না যদি প্রকৃত বন্ধুত্ব হয়। প্রকৃত বন্ধু প্রকৃত অর্থে যদি আপনার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে জীবনের অনেক ভুলচুক থেকে আপনি সরে আসতে পারেন। একটা বেদনা মধুর সময়ের একটা বন্ধুর সাহচর্য আপনার প্রেরণা হতে পারে। আমার কাছে বন্ধুত্ব অনেক জরুরী। আমার জীবনের চলার পথে বেশ কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছি। আমার নিজেরই মনে হয় আমি খুব বন্ধু প্রাণ। আমার চলচ্চিত্র যেমন ভালো বন্ধু আছে, সাংবাদিক ভালো বন্ধু আছে, প্রযোজক-পরিচালক ভালো বন্ধু আছে। চলচ্চিত্রের বাইরে যে বন্ধু আছে তাদের কথা বললাম না, তাদের সাথে আমার একটা অদ্ভুত মায়াজালের সম্পর্ক। আমার মা আমার ভালো বন্ধু, আমার মেয়েরা ও আমার বন্ধু, আমার স্ত্রী আমার বন্ধু। আমি যেকোনো সম্পর্কের সাথে বন্ধুত্বটা কে বেশি গুরুত্ব দেই। আমি যে নায়িকাদের সাথে কাজ করি আমি মনে করি আমার ফেরদৌস হয়ে ওঠার পেছনে প্রত্যেকটা নায়িকার অবদান আছে। সেই নায়িকারা যদি আমার সাথে সাবলীলভাবে অভিনয় না করত আমি কখনো এককভাবে কাজ করতে পারতাম না। তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের কাছে আমি অনেক কিছু শিখেছি, শিখছি, শিখতে থাকবো। আমি চেষ্টা করছি সময়ে-অসময়ে, বিপদে তাদের পাশে থাকতে। সবসময় শারীরিকভাবে পাশে থাকতে পারিনা, কিন্তু মানসিকভাবে আমি চেষ্টা করেছি। আমার যারা সহশিল্পী ছিল সবার খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি এই করোনা কালে। এই যে মানসিকভাবে তাদের পাশে থাকা এটা একটা বড় সাপোর্ট। আমি অনেক সিনিয়র শিল্পীদের খবর নেয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন কাজের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেই আজকে কাকে কাকে ফোন করব। আপনি ভালোবাসার মানুষকে ফোন করে তার খবর নিলে সে যে দোয়াটা করে এটা এক ধরনের প্রশান্তি একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। আমি একজনের সিক্রেট আরেকজনের কাছে শেয়ার করি না । আমি কখনো কারো খারাপ চাই না।
আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি সেটা হলো আমি একজনকে উপকার করতে না পারি কিন্তু আমার দ্বারা কারো ক্ষতি হোক সেটা চাইনা। আমি জ্ঞানত কারো ক্ষতি করেছি বা করার চেষ্টা করেছি সেটা মনে হয় না। আর এই কারণে সবাই আমার প্রতি আস্থাশীল। নতুন যারা শিল্পী আসে তাদের সাথে আমার অদ্ভুত ধরনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আমি মনে করি বন্ধুত্ব দিয়ে পৃথিবীটাকে আরো সুন্দর করা যায়। এক দেশের সাথে আরেক দেশের সম্পর্ক উন্নত হয় বন্ধুত্বের কারণে। বন্ধুত্বটা যদি স্বার্থের ঊর্ধ্বে হয় তাহলে আমার মনে হয় পৃথিবীটা আরো অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন: প্রথমে অভিনেতা, পরবর্তীতে প্রযোজক, এরপর কি হিসেবে দর্শক আপনাকে দেখবে?
উঃ: আমি প্রথমে অভিনেতা এরপর অভিনেতা তারপরও অভিনেতা। আমি প্রযোজনা এসেছিলাম অনেকটা শখের বশে। কিছু গল্প ছিল আমার পছন্দের যেগুলো নিয়ে কেউ ছবি করার সাহস পায় না। সেই কারণে আমার প্রযোজনায় আসা। আমি নিজেকে কখনো প্রযোজক হিসেবে মনে করি না। কারণ আমি প্রযোজ্নার চেয়ে বেশি এনজয় করি অভিনয়। হয়তো আমি আরো প্রযোজনা করব। এরপর অন্য রূপে নিজেকে আর দেখাতে চাই না। কিন্তু পরিচালনায় আসতে চাই না। কারণ পরিচালক হল ক্যাপটেন অব দা শিপ। সো ক্যাপটেন অব দা শিপ হয়ে অভিনয় করা খুবই কঠিন। আমি খুব সেলফিশ প্রযোজক। কারণ আমি যেসব ছবি প্রযোজনা করি, সেসব ছবিগুলোর চরিত্র খুবই অসাধারণ। তাই এসব চরিত্রে আমি অভিনয় না করে থাকতে পারবো না। আমি শুধু নায়ক ফেরদৌস কে নিয়ে ভাবি। আমি যতদিন প্রযোজনা করব, ততদিন নায়ক ফেরদৌস কে নিয়েই ছবি করব। সেক্ষেত্রে আমাকে সেলফিশ ভাবতেই পারেন। আমি ডিফারেন্ট কনটেন্ট নিয়ে আসতে চাই, যে কনটেন্টগুলোর সাথে মানুষ রিলেট করতে পারবে। আস্থার জায়গা তৈরি হবে, বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে। আমি প্রচুর সিনেমা দেখি, সেসব ছবি দেখে নানান ভাবনায় তাড়িত হই এবং ভাবি এমন ছবি কেন আমাদের দেশে হয় না। আমার ইচ্ছা আছে এমন একটা কাজ করা যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা হবে। আমি আসলে সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
প্রশ্ন: বর্তমানে ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রের অশ্লীলতা নিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের, অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন আপনার বক্তব্য কী?
উঃ:ওয়েব সিরিজ সাম্প্রতিক বিশ্বের লেটেস্ট ট্রেনড। সারা পৃথিবীতে ওয়েব সিরিজ হচ্ছে। একে এক ধরনের স্বাধীন চলচ্চিত্র বলা যায়। একজন মানুষের স্বাধীন ভাবনা বিকাশ করার জায়গা ওয়েব সিরিজ। আপনি একা বসে কি দেখবেন আর কি দেখবেন না সেটা ডিসাইড করবেন। এটা একটা নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে, নতুন প্লাটফরম তৈরি করেছে। কিন্তু ওয়েব সিরিজ মানে যে অশ্লীল হতে হবে দ্যাট আই ডোন্ট বিলিভ।
কেননা অশ্লীলতা বা ভালগারিজম ছাড়াও পৃথিবীতে অনেক অসাধারণ সৃষ্টি আছে। তাই বলে যে চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজ সেক্স বিবর্জিত হবে সে ধারাতেও আমি বিশ্বাসী নই। গল্পের প্রয়োজনে বা চরিত্রের প্রয়োজনে যদি আসে তা যদি সেরকম বিশ্বাসযোগ্যভাবে, শালীনভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং কোন শিল্পী যদি সে দৃশ্য অভিনয় করেন, সে যদি সেই জায়গার উপর আস্থা রেখে, বিশ্বাস রেখে অভিনয় করে, তবে সেটাকে খারাপ দেখায় না। তবে সাম্প্রতিক আমাদের দেশে যে দুই চারটা কাজ হয়েছে সেগুলো খুবই ইমপোজড লেগেছে। সেই কারণে দর্শক রিয়েক্ট করেছে। কেননা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম অনেক স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম। সেখানেই ইউ হ্যাভ টু রাইট টু সিলেক্ট কি দেখবেন আর কি দেখবেন না। সো আমাদের কন্টেন্টে এমন কিছু ছিল যা দর্শক বিরক্ত হয়েছে। তারা হয়তো সেগুলো দেখতে চায় না। আমার মনে হয় পরবর্তীতে যারা ওয়েব সিরিজ তৈরী করবেন এবং যদি সেক্স, ভায়োলেন্স আনতে চান তারা যেন শালীনভাবে, রুচিসম্মতভাবে আনেন। এবং তা আমাদের মতো করে, আমাদের মানসিকতা ঠিক রেখে উপস্থাপনা করেন। তবে আমার মনে হয় এটা নিয়ে আর কোন আপত্তি থাকবেনা।
প্রশ্ন: যার কারণে আজ আপনি ফেরদৌস, এত যশ-খ্যাতি, সেই বিখ্যাত পরিচালক বাসু চ্যাটার্জি ওপারে চলে গেলেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছু বলেন?
উঃবাসুদা আমাকে দ্বিতীয়বার চলচ্চিত্রে জন্ম দিয়েছেন। সে হিসেবে তিনি আমার পিতৃস্থানীয়, পিতার মত। তার চলে যাওয়াটা আমার পিতৃবিয়োগের মত। আমার বাবা ২০০০ সালে আমাকে ছেড়ে চলে যান। তারপর ২০ বছর পর আমার চলচ্চিত্র পিতা চলে গেলেন।এটা দুঃখজনক একটা ব্যাপার আমার জীবনের জন্য, চলচ্চিত্রের জন্য। আমি যদি ভালো কিছু কাজ করে থাকি সে ভালো কাজ গুলি তাঁর সাহায্যেই। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘টক-ঝাল-মিষ্টি’, ‘চুপিচুপি’, ‘হঠাৎ সেদিন’। আর তার লেখা গল্প নিয়ে করেছিলাম ‘এক কাপ চা’। নানানভাবে মানুষটার সাথে আমার সম্পৃক্ততা। আমি চেষ্টা করব আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন যেন আমি তাকে শ্রদ্ধাভরে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারি। আমার সৃষ্টিগুলোর সাথে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আমি আসলে ভাবতেও চাইনা যে বাসুদা চলে গেছেন। এখনো তার একটা একটা গল্প আমার কাছে আছে- ‘বিয়ের ফাঁদে’। সেটা নিয়ে আমার ছবি করার কথা ছিল। আসলে আমার চলচ্চিত্রের এই দুই দশকের ক্যারিয়ারে কিছু মানুষের সঙ্গে আমার সবসময় যোগাযোগ ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাসুদা। তার সাথে হয়তো আমি সারাজীবন কাজ করতাম না কিন্তু সব সময় যোগাযোগ থাকতো। তার চলে যাওয়া এখনো আমি মানসিকভাবে মেনে নিতে পারিনি। আমি চাইবো বাসুদা তার ,’হঠাৎ বৃষ্টি’ দিয়ে বাঙালির জীবনে অমর হয়ে থাকবেন। তার প্রথম বাংলা সিনেমা অনেক যত্ন ভালোবাসা দিয়ে কাজ করেছেন। এই মানুষটার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কিভাবে চলচ্চিত্র কে ভালবাসতে হয়, কিভাবে প্যাশনেট হতে হয়, কিভাবে সময় মানতে হয়, কিভাবে কমিটমেন্ট রাখতে হয়, এ ধরনের সব কিছু আমাকে শিখিয়েছেন। উনি কখনো আমার বাবা, কখনো আমার ভাই, কখনো আমার বন্ধু, কখনো কখনো আমার ফিলোসোফার কখনো শিক্ষক। নানানভাবে উনি আমার মধ্যে আছেন, থাকবেন। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ই-মেইল:abumasani2016@gmail.com
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা