অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা
ফজলুল বারী
বাংলাদেশের মানুষের আনন্দে কান্নার সুযোগ খুব কম। মাঝে মাঝে এই সুযোগটা করে দেয় ক্রিকেট। নেতৃত্বের কারনে জাতীয় ক্রিকেট দল ইদানীং পথহারা-দিকহারা। কিন্তু এই জাতীয় দলই বাংলাদেশকে অনেক আনন্দ মর্যাদা দিয়েছে। ফুলেফেঁপে টাকার কুমির বানিয়েছে নির্দিষ্ট কিছু লোককে। বাংলাদেশের দলের খেলা দেখতে আমি যখন বিভিন্ন দেশে যাই তখন উড্ডিন লালসবুজ পতাকাটি যে কী আনন্দ-মর্যাদা অনুভব দেয় তা বলে বোঝানো যাবেনা। এটা শুধু অনুভব করা যায়। লাল সবুজ রঙের কারনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা যেমন রঙিন-বর্নিল তেমনি বাংলাদেশের জার্সিটাও গ্যালারিতে বিশেষ এক জীবন্ত রঙিন চলচ্চিত্রের সৃষ্টি করে। এই চলচ্চিত্রের নাম তিরিশ লাখ শহীদের রক্তে কেনা দেশ-বাংলাদেশ।
বিদেশের নানা ভেন্যুতে একা একা দাঁড়িয়ে যখন জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করি তখন চোখ ভিজে আনন্দের কান্নায়। চোখের জলকনাকে পবিত্র মনে হয়। এক্রিডিটেন করে গেলে ক্রিকেটারদের খুব কাছে থেকে দেখি। দর্শক হয়ে গেলে গ্যালারিতে বসে দেখা তারা দূরের তারকা মানুষ। মাশরাফি বিন মর্তোজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার এরা সহ জাতীয় দলের সব ক্রিকেটার আমাদের ক্রিকেট রত্ম। রবিবার রাত থেকে সারা বাংলাদেশ, বিশ্বের যেখানে বাঙালি আছেন সেখানে শুধু আকবর আলীর নাম। আকবর দ্য গ্রেট। বোনের মৃত্যুর কান্না বুকে চেপে রেখে দলের দেশের জন্যে খেলে সে আমাদের জন্যে অধরা একটি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছে! এসব পড়ে জেনে কি আমাদের চোখ শুকনো থাকে বাংলাদেশ? আমরা মোটেই এমন পাষান কেউ নই।
টেলিভিশনে টিএসসির জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রিয় প্রজন্ম বাহিনীর একসঙ্গে খেলা দেখা-উচ্ছাসে ফেটে পড়া দেখে স্মৃতিকাতর হই। বাংলাদেশ যখন কুয়ালালামপুরে আইসিসির ট্রফি জেতে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারায় সে রাতের কথা মনে পড়ে যায়। অফিসের ফটোসাংবাদিক কারও মোটর সাইকেলের পিছনে চড়ে চলে গেছি টিএসসি। ফেরার সময় তরল রঙে পুরো মুখ-পোশাক রঙিন। আনন্দে রঙ ছিটাছিটির শিকার হয়ে অফিসে ফিরে ঝটপট লিখেছি রঙিন রিপোর্ট। সেখান থেকে ক্রমশ হেঁটে ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের এক নাম্বার জনপ্রিয় খেলা। সারা দুনিয়ার দেশে দেশে সবার একটি এক নাম্বার জনপ্রিয় খেলা থাকে যেটির কখনও পরিবর্তন হয়না। একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ! এখানে একদা ফুটবল এক নাম্বার জনপ্রিয় খেলা ছিল। সেটি এখন ক্রিকেট। বিশাল এক ইন্ডাস্ট্রিরও নাম ক্রিকেট। একদিন ভারতের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট ইন্ডাস্ট্রি হবে দ্বিতীয় বৃহত্তম।
বাংলাদেশের সোমবারের সব দৈনিক-অনলাইন পড়ে পড়ে চোখ ভিজেছে আনন্দ কান্নায়। এত ছোট ছোট কয়েকটি ছেলে! কয়েকটি দাঁড়ি গোঁফ পর্যন্ত প্রথমবার সেভ পর্যন্ত করেনি। সেই ছেলেরা কত দায়িত্বশীল খেলে আমাদের জন্যে এতবড় সম্মান বয়ে এনেছে! খেলার মাঝে এবং খেলার শেষে ভারতীয়দের স্লেজিং, পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টার রিপোর্টগুলো পড়ে হেসেছি। ওইগুলোওতো ভারতীয় পিচ্চি। কাপটা তাদের হাতে থাকতে এক রকম যেন তাদের পৈত্রিক ভাব চলে এসেছিল! সেই কাপটা বাংলাদেশের হাতে চলে যাচ্ছে বা গেলো দেখে একটু মাথা গরম করা আর কী! কিন্তু ওই ঘটনাও তাদের বিপক্ষে গেছে। ভারতীয় মিডিয়াও তাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। আইসিসির শাস্তিও তাদের অবধারিত।
সোমবার বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে খুব স্বাভাবিক বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয় প্রসঙ্গ উঠে আসে। বাংলাদেশে খেলাধুলা, ক্রিকেটের আজকের যত অগ্রগতি এর অন্যতম কারন দেশের ক্রীড়া-ক্রিকেট প্রেমিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাগলের মতো তিনি খেলা দেখেন। পারলে চলে যান মাঠে-স্টেডিয়ামে। সর্বশেষ দেশের দলের খেলা দেখতে কলকাতা পর্যন্তও তিনি চলে গিয়েছিলেন। মাশরাফি-সাকিবদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক ব্যক্তিগত-পারিবারিক। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর আনন্দ প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেছেন, খেলোয়াড়রা ফেরার পর তাদের সম্বর্ধনা দেবে সরকার। আমারতো ধারনা বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটাররা ফ্লাট উপহার পেতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। যা তিনি হরহামেশা করেন। এটা তাদের প্রাপ্য। এরমাঝে জাতীয় সংসদেও এমন একটি দাবি উঠেছে।
বুধবার বিশ্বকাপ বিজয়ী জুনিয়র টাইগাররা দেশে আসছে। তাদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান হবে। অনেক আদর-শুভকামনা থাকবে প্রিয় প্রজন্মদের জন্যে। একটা অনুরোধ করবো। এই ছেলেদের ধরে রাখার উদ্যোগটি হবে সবচেয়ে বড় পুরষ্কার। আমাদের অনেক ক্রিকেটার এসেছে গেছে। ধরে রাখা যায়নি। মোস্তাফিজ, মেহেদি হাসান মিরাজ এরাও এরমাঝে যেন সোনালী অতীত সংঘের সদস্য! এই ছেলেদের কিভাবে ধরে রাখা যায় সে ব্যাপারে ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতামত নিয়ে একটা কর্ম পরিকল্পনা নেয়া হোক। আমরা আমাদের এই ছেলেদের হারাতে চাইনা। অভিনন্দন বাংলাদেশ। অভিনন্দন প্রিয় প্রজন্ম। জয় বাংলা।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা