অনলাইন ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা দলের ১১ সদস্যের মধ্যে আদিবাসী মেয়েদের সংখ্যা ছিল প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ পাঁচজন। বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর দুই শতাংশের কম। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল দলে পরিস্থিতি এমন নয়। যদিও ক্রিকেট, কাবাডি, বাস্কেটবল, ম্যারাথন, ভারোত্তোলন, সাঁতার কিংবা ব্যাডমিন্টনে একই চিত্র দেখা যায় না। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনটি পার্বত্য জেলা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট এবং উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে আদিবাসী মেয়েরা ফুটবলে বেশ নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। আর মেয়েদের ফুটবল দলে কেবল খেলা নয়, বিভিন্ন সময় দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকে আসা মেয়েরা। এমনকি ২২শে ডিসেম্বর সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ এর শিরোপা জেতানো দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মারিয়া মান্ডা। তিনি ময়মনসিংহের সীমান্তঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুরের মেয়ে।
মেয়েদের ফুটবলে কলসিন্দুরের নামডাক আলাদা। এ পর্যন্ত গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষা কলসিন্দুরের ১০ জনের বেশি মেয়ে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলে খেলেছেন। ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল বাছাই পর্বে উতরে মূল পর্বে উঠেছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল, যে দলে ১১ জনের মধ্যে নয়জনই ছিলেন কলসিন্দুরের। ফুটবল সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যায়ে মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলগুলো গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে।
এর আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টেও বিজয়ী হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। তার আগে জিতেছিল অনূর্ধ্ব-১৬ শিরোপা। এছাড়া ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল বাছাই পর্বে উতরে মূল পর্বে উঠেছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। কেবল মাঠে বল পায়ে দৌড়ানো নয়, কোচও হচ্ছেন এই মেয়েরা। জয়া চাকমা বাংলাদেশের প্রথম নারী ফিফা রেফারি হিসেবে স্বীকৃতি পান। সাবেক ফুটবলার মিজ চাকমা ২০১৯ সালে ফিফার পঞ্চম নারী রেফারী হিসেবে যুক্ত হন।
মেয়েদের ফুটবল দলে আদিবাসী মেয়েরা বেশি আসছেন, এমনটি বলতে চাননি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফের নারী ফুটবল বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজা কিরণ। তিনি বলছেন, এখন সমতলের মেয়েরাই সংখ্যায় বেশি আসছে। তবে আমার অভিজ্ঞতায় যেটা দেখেছি তা হচ্ছে পাহাড়ের মেয়ে হবার কারণেই ওদের শারীরিক ফিটনেস ভালো থাকে এবং ওরা খেলাধুলায় অনেক আগ্রহী থাকে। এছাড়া তাদের মধ্যে ধারাবাহিকতা বেশি থাকে এবং ঝরে পড়ার হার কম থাকে। এসব কারণে মেয়েদের জাতীয় এবং বয়সভিত্তিক দলগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়েরা ভালো করছে।
তিনি বলছেন, পাহাড় এবং সমতল সবখানে মেয়েদের মধ্যে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার জন্য বাফুফে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা নারী স্কুল টুর্নামেন্ট’ চলছে গত কয়েক বছর ধরে, মূলত তার মাধ্যমেই গত ৮-১০ বছরে দেশে মেয়েদের ফুটবলে অংশগ্রহণ বাড়ছে। ফুটবল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে ধরণের পোশাকে মেয়েদের ফুটবল খেলায় অংশ নিতে হয়, তা নিয়ে সমাজের রক্ষণশীলদের মধ্যে দ্বিধা এবং বাধা রয়েছে, যা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে কম। একই সঙ্গে, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সামাজিক বাধাও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কম থাকে।
এ বিষয়গুলো সেখানকার পরিবার থেকে মেয়েদের বেশি খেলতে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তবে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বাংলাদেশ আনসার দলের বর্তমান কোচ সুইনু প্রু মারমা বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, পাহাড়ে অন্যান্য খেলাধুলার ব্যবস্থা সীমিত, যে কারণে ফুটবলই বেশি খেলেন সেখানকার মেয়েরা। মেয়েদের জন্য অন্য কোন খেলা তো পাহাড়ে তেমন হয়ও না। হ্যান্ডবল বা অন্য কোন খেলা সেখানে নাই বলেই মেয়েরা বেশি ফুটবল খেলতে আসে।
সুইনু বলেন, এখন জাতীয়ভাবে সারাদেশ থেকে মেয়েদের খুঁজে আনার একটি কর্মসূছি রয়েছে, কিন্তু যখন এসব ছিল না তখনো পাহাড়-সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়েরা ফুটবল খেলেছে অনেক বেশি। ২০১৫ সালে তিনি নিজে যখন জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তখন তার দলের ৮জন সদস্যই ছিলেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকে আসা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা