অনলাইন ডেস্ক
দিনের শুরুতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমনের আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্থাপন করা হয় ঘট, করা হয় বিশেষ পূজা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। দেবীর আরাধনা সূচিত হয় এ মহালয়ার মাধ্যমে। পুরাণে আছে; দুর্গোৎসবের তিনটি পর্ব- মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা।
মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে দেবীর আরাধনা প্রতিপদ থেকে শুরু হয়। একে বলে দেবীপক্ষ। শেষ হয় পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষ সূচনা হয়। আর এদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপূজা শুরু হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।
মহালয়া ‘শব্দটির অর্থ- মহান যে আলয় বা আশ্রয়।মহালয় শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই দিনেই পিতৃপক্ষের অবসান হয় এবং অমাবস্যার অন্ধকার দূর হয়ে আলােকময় দেবীপক্ষের শুভারম্ভ হয়। এখানে দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয় বা আশ্রয়।
দেবীকে আমন্ত্রণ জানা বাদ দিয়েও এর পেছনে মহালয়ার একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় যে পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়। প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-পিণ্ড প্রদান করে তাদের ‘তৃপ্ত’ করা হয় বলেই মহালয়া একটি পূণ্য তিথি।
সনাতন ধর্ম মতে এই সময়ে অর্থাৎ এই কৃষ্ণপক্ষকালে যমলোক বা পিতৃলোক থেকে পূর্বপুরুষদের প্রেত মর্ত্যলোকে বসবাস করে নিজের পরিজনদের সঙ্গে। এরপর তারা আবার পিতৃলোকে ফিরে যান। এই সময়ে প্রয়াত পরিজনদের আত্মার যে সমাবেশ ঘটে তাকে বলা হয় মহান লয়। সেই শব্দ থেকেই এসেছে ‘মহালয়’ শব্দটি।
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী চার যুগে বিভক্ত করা হয়েছে। যুগগুলো হলো সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলি যুগ। রামায়ণ অনুযায়ী, ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। মূলত দুর্গাপূজা হত বসন্তে, সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। শ্রী রামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয়।
সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বদের সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে খুশি করা। ভগবান শ্রী রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন। এদিন তর্পন করলে পিতৃপুরুষেরা আমাদের আশীর্বাদ করেন। এছাড়াও এদিনে দেবী দুর্গার বোধন করা হয়, বোধন অর্থ জাগরণ। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের (শুক্লপক্ষের) প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করা হয়।
সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরণ করে, পূর্বপূরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া।
সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে একবার পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে পিণ্ড দান করতে হয়, সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে উনারা প্রয়াত হয়েছেন। সনাতন ধর্মের কার্যাদি কোন তারিখ অনুসারে করা হয় না। তিথি অনুসারে হয়। মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্মার শান্তির জন্য, তাহারা শুধু পূর্বদের নয়, পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন।
পণ্ডিত সতীনাথ পঞ্চতীর্থ বলেছেন, মহালয়ায় যে তর্পণ করা হয়, তা শুধুই পিতৃপুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দেব তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য-পিতৃ তর্পণ করতে হয়। সঙ্গে থাকে রাম তর্পণ ও লক্ষ্মণ তর্পণ। সেখানে ত্রিভুবনে সমস্ত প্রয়াতকে জলদানের মাধ্যমে তৃপ্ত করার কথা বলা আছে। এমনকী তাদেরও উদ্দেশে তর্পণ করা হয়, জন্ম-জন্মান্তরে যাদের আত্মীয়-বন্ধু কেউ কোথাও নেই। এই ভাবে যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সকল প্রয়াতকে জলদান করে তাদের আত্মার তৃপ্তি সাধন করা হয়।
প্রসঙ্গত, আগামী ১ অক্টোবর (১৪ আশ্বিন) ষষ্ঠী পূজা দিয়ে এবারের দুর্গাপূজা শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর (১৮ আশ্বিন) বিজয়া দশমী দিয়ে শেষ হবে। এবার উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজামণ্ডপে উদযাপন করা হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা