অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ওয়ার্ল্ড আলঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বিশ্বে ৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত। ২০৫০ সাল নাগাদ এটি ১৫ কোটি ছাড়াবে। এ ছাড়া প্রতি সেকেন্ডে নতুন করে ৬৮ জন এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রতি নয়জনে একজন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব আলঝেইমারস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘ডিমেনশিয়া সম্পর্কে জানুন, আলঝেইমারস সম্পর্কে জানুন’। দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের এডিনবরা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, ২১ সেপ্টেম্বর হবে বিশ্ব আলঝেইমার দিবস। সেই থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে এই বিশেষ দিবস পালন।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিস্কের কোষ বা নিউরনগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। ফলে স্মৃতিলোপ পায়। আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ার বিশেষত্ব হলো ভুলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটে। মস্তিস্কের সামনের অংশ ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। আলঝেইমারস রোগে এই অংশের ক্ষতি হয়। ফলে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটে। পঁয়ষট্টি বছরের পর থেকেই অনেকে আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত হন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৮০ বছরের পর থেকে মস্তিস্কে ছোট ছোট স্ট্রোকের ফলে কোষ শুকিয়ে যেতে থাকে; তখন এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
বাংলাদেশে এ রোগের বিস্তার জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও আইসিডিডিআর,বি এক যৌথ গবেষণা পরিচালনা করে। দেশের আটটি বিভাগের দুই হাজার ৭৯৬ মানুষের ওপর এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এদের দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ এলাকায় এবং এক-তৃতীয়াংশ নগর এলাকার বাসিন্দা।
নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সেলিম শাহী গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছরের ওপরের বয়সী মানুষের মধ্যে ৮ দশমিক ১ শতাংশ আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। তবে যেসব এলাকায় বেশি মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে, সেসব স্থানে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। এ কারণে এলাকাভেদে সংখ্যাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ রোগী রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা। এরপর পর্যায়ক্রমে রংপুরে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, খুলনায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, বরিশালে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলেটে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ঢাকায় সবচেয়ে কম ২ দশমিক ৯ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে।
ডা. সেলিম শাহী বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, লিভার ও কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড ও হরমোনাল সমস্যা থাকলে সেই ব্যক্তির আলঝেইমারস বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। সুতরাং এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা নিতে হবে। একই সঙ্গে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ আলঝেইমার সোসাইটি বলছে, রোগটির তেমন চিকিৎসা নেই। কিন্তু শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, রোগটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালগুলোতে ডিমেনশিয়া কর্নার তৈরি করার দরকার। পাশাপাশি ডাক্তার ও নার্সদের তাদের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। পারিবারিকভাবে সচেতনতা তৈরি হলে রোগীরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে করুণ পরিণতি থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা