আইসিডিডিআর’বির আন্ত্রিক জীবাণু-সংক্রান্ত গবেষণাকে ২০১৯ সালের বিশেষ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে সায়েন্স জার্নাল
সম্মানজনক সায়েন্স জার্নালের ১৯ নভেম্বর প্রকাশিত এক বিশেষ সংখ্যায় আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়কে অপুষ্টি মোকাবেলায় জীবাণুর (মাইক্রোব) ভূমিকা-সংক্রান্ত গবেষণাকে ২০১৯ সালের বিশেষ ১০টি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ২০ লক্ষ শিশু কৃশকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজনবিশিষ্ট), ১ কোটি ৭০ লক্ষ শিশু মারাত্মক রকমের কৃশকায় এবং ১৫ কোটি ৭৫ লক্ষ শিশু খর্বকায় (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতাবিশিষ্ট)। অনেক দেশই অপুষ্টি বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সমূহ অর্জন করতে সক্ষম হবে না।
অপুষ্টির শিকার অনেক শিশুই পরবর্তীতে পর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ সত্ত্বেও সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। এর ফলে তাঁদের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ঘটে না এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাদের আন্ত্রিক জীবাণু বা গাট মাইক্রোব অপরিপক্ক থাকার ফলে এমন ঘটে। আইসিডিডিআর,বি এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগণ মনে করেন যে, এটিই শিশুদের অপর্যাপ্ত বিকাশের কারণ এবং সব ধরনের খাবার এই সমস্যা সমাধানে সমান কার্যকর নয়।
তাঁরা শিশুদের সুস্থ অন্ত্রে থাকা প্রধান প্রধান ব্যাকটেরিয়ার ওপর গবেষণা করেছেন। এছাড়াও, তাঁরা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে দেখেন কী ধরনের খাবার গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী জীবাণুদেরকে উজ্জীবিত করে তুলতে সক্ষম। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুর এলাকার ১২-১৮ মাস বয়সী ৬৮টি শিশুকে নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় গবেষকগণ বিভিন্ন খাদ্য বিন্যাস পরীক্ষা করে দেখেন। তাঁরা অন্ত্রের ওপর সেসব খাদ্যবিন্যাসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন কিভাবে উপকারী জীবাণু ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। এই গবেষণার আরেকটি প্রধান ফলাফল ছিলো শিশুদের দেহে উৎপন্ন প্রোটিনের ওপর খাদ্যবিন্যাসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সায়েন্স জার্নালে দু’টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা যায়, কিছু সুনির্দিষ্ট পুষ্টিকর সম্পুরক খাদ্য বিশেষ করে কাঁচা কলা, ছোলা (চিকপি), সয়াবিন এবং চীনাবাদামের গুঁড়া (পিনাট ফ্লাওয়ার) প্রদানের মাধ্যমে এসব শিশুর অন্ত্রের উপকারী জীবাণুদেরকে পুনরূজ্জীবিত করা সম্ভব। এসব খাদ্য বিন্যাস ব্যবহার করে বড় মাপের ক্লিনিক্যাল গবেষণা বর্তমানে আইসিডিডিআর,বি-তে চলমান অবস্থায় রয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি গর্ডন ২০১৪ সাল থেকে এই গবেষণা পরিচালনা করে আসছেন।
অধ্যাপক গর্ডন বলেন, “এই গবেষণার লক্ষ্য হলো জীবাণুদেরকে সারিয়ে তোলা। জীবাণুসমূহ কলা বা চীনাবাদাম চিনে না – তারা কেবল পুষ্টিগুলির মিশ্রণকে চিনে যা তারা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার ও ভাগাভাগি করতে পারে।”
এছাড়াও তিনি বলেন, “এসব খাবার কেন ভালো কাজ করেছে তা ঠিক বোঝা যায়নি, এই প্রক্রিয়ায় শিশুদের ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে এসব খাদ্যবিন্যাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেখার জন্য একটি বড় গবেষণা চলমান রয়েছে।”
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশুদের অপুষ্টি নিরাময়ে প্রচলিত কার্যক্রমে পুষ্টিকর খাবারকে কাঁচা কলা, ছোলা (চিকপি), সয়াবিন এবং চীনাবাদামের গুঁড়া (পিনাট ফ্লাওয়ার) সমৃদ্ধ খাদ্যবিন্যাসের সাহায্যে উজ্জীবিত করা হলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি এবং অপুষ্টি সংক্রান্ত ভয়াবহ জটিলতা রোধ করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ যদি চলমান বড় পরিসরের গবেষণা আমাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলকে সমর্থন করে তবে এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হবে এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশুদের অপুষ্টি লাঘবে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।”
সায়েন্স হলো আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর জার্নাল। ১৮৮০ থমাস এডিসন এর আর্থিক সহায়তায় এটি প্রতিষ্ঠা হয়, তখন থেকেই এটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা