অবৈধ ম্যাসাজ পার্লার: প্রভাবশালীরা কতটা জড়িত?

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই পুলিশ অভিযানে নেমেছে ম্যাসাজ পার্লারগুলোর বিরুদ্ধে । পুলিশের দাবি, এসব ব্যবসা বেআইনিভাবে পরিচালিত হচ্ছিল।

কয়েকটি ম্যাসাজ পার্লারে পুলিশের অভিযান ও আটকের পর সোমবার এই সেবা-কেন্দ্রগুলো ছিল কর্মীশূন্য। একটি পার্লারের কর্তাব্যক্তি জানান, নিয়মিত সেবাগ্রহীতারাও তাদের বুকিং বাতিল করেছেন।

‘ক্ষমতার অপব্যবহার, অপকর্ম ও দুর্নীতি কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবেনা’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারির পর ঢাকায় গত কয়েকদিন অবৈধ জুয়ার ব্যবসার বিরুদ্ধে ক্লাবগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারই ধারাবাহিকতায় গত রোববার গুলশানের কয়েকটি ম্যাসাজ ও স্পা পার্লারে অভিযান চালায় পুলিশ। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে স্পা ও ম্যাসাজ সেন্টারের নামে অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

কাদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয় এই প্রতিষ্ঠানগুলো? এমন প্রশ্নে গুলশানের জোনের উপ পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন সবদিকে যেমন শুদ্ধি অভিযান চলছে তেমনি তারাও শক্তভাবে অবৈধ কাজ দমনে নিয়োজিত হয়েছেন।

“গুলশানের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আমরা অবৈধ কাজের প্রমাণ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্তে জানা যাবে, কারা এর সাথে জড়িত।”

সুদীপ কুমার জানান, “এখন পর্যন্ত আমরা কোন প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততা পাইনি। তবে তেমন কেউ যদি থেকে থাকে যতো চাপই থাকুক, আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেব”।

পার্লারগুলো জনশূন্য

গুলশানে পুলিশের ওই অভিযানের প্রভাব পড়েছে বৈধভাবে পরিচালিত ম্যাসাজ ও স্পা কেন্দ্রগুলোতেও। গুলশানের কয়েকটি ম্যাসাজ পার্লারে খোঁজ নিতে গেলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

গত রোবাবার তিনটি স্পা সেন্টার থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়। এর পর সোমবার এই সেবা-কেন্দ্রগুলো ছিল কর্মীশূন্য।গুলশানের একটি ম্যাসেজ পার্লারের ব্যবস্থাপক জানান, নিয়মিত সেবাগ্রহীতারাও তাদের বুকিং ক্যান্সেল করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের আশেপাশের পার্লারে এসব ঘটনা দেখে আমরাও অস্বস্তিতে আছি।”

ম্যাসাজের নামে সেক্স?

“তারা ম্যাসাজের নামে সেক্সও অ্যালাও করতো। আমাদের এখানে এমন কিছু নেই। তারপরও আমাদের ক্লায়েন্টরা এখন আসতে চাচ্ছেনা” জানান ওই ম্যাসাজ পার্লারের ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, “ব্যবসাতে তো অলরেডি অনেক প্রভাব পড়েছে। আজকে তিনটা বুকিং ছিল তিনটাই ক্যান্সেল হয়ে গেছে। এভাবে ব্যবসা কিভাবে চালাবো বুঝতে পারছিনা।”

ঢাকায় গত ১৫ বছর ধরে এমনই একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন রাহিমা সুলতানা। সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলোর পুরো শিল্পটির ওপর প্রভাব ফেলেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এগুলোর পেছনে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পৃক্ততা না পেলেও, রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক ছত্রছায়া ছাড়া ঢাকার এমন একটি ব্যস্ত এলাকায় এ ধরণের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন স্পা ও ম্যাসাজ পার্লার ব্যবসায়ীরা।

রাহিমা সুলতানা জানান, “কিছু প্রভাবশালীর ভূমিকা তো আছেই। তারা হয়তো টাকা পয়সা দিয়ে এতদিন এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ম্যাসাজ পার্লারের নামে ভেতরে কী চলছে – সেটা এতদিন পরে কিভাবে বের হল বলেন? এগুলো আগেও ছিল।”

তবে এসব ব্যবসার পরিচালকরা যতোই ক্ষমতাবান হোন না কেন সরকার যেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন দাবি জানান সুলতানা। তিনি বলেন, “এই হাতেগোনা কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের কারণে আমরা যারা বৈধভাবে ব্যবসা করছি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তেমনি যারা সেবা নিতে আসেন, তারাও আস্থার সংকটে ভুগছেন। ”

‘কোনো নীতিমালা নেই’

কিন্তু বাংলাদেশে সেই ধরণের মনোভাব গড়ে না ওঠা, এবং এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের কোন নীতিমালা না থাকার ফলে বৈধতার ব্যানারে অবৈধ ব্যবসা জেঁকে বসেছে বলে মনে করেন সুলতানা।

বিশ্বব্যাপী স্পা বা ম্যাসাজ একজন পেশাদারি থেরাপিস্টরা দিয়ে থাকেন। তিনি নারী বা পুরুষ যে কেউ হতে পারেন।

“বিদেশে গেলে দেখবেন বেশিরভাগ থেরাপিস্ট মেয়েরাই থাকে। তারা ছেলে মেয়ে সবাইকেই সার্ভিস দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষদের সেই মন মানসিকতা গড়ে ওঠেনি যে তারা একজন ফিমেল থেরাপিস্টের সার্ভিসটা শুধুমাত্র সার্ভিস হিসেবেই নেবেন। তাছাড়া আমাদের ধর্মীয় কিছু বিধানও আছে।”

“মূল সমস্যা হল আমাদের কোন নীতিমালা নেই যেখানে বলা থাকবে কোন স্পা বা ম্যাসাজ পার্লার গড়ে তুলতে হলে কী ধরণের নিয়ম মানতে হবে।”

বর্তমানে যে অভিযানগুলো পরিচালিত হচ্ছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি নীতিমালার আওতায় আনা প্রয়োজন বলে সুলতানা মনে করেন। বিবিসি বাংলা।