অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাজরীন গার্মেন্টসে হতাহতদের সহায়তা করেনি। দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বুধবার ( ১৩ নভেম্বর) ‘তাজরীন ট্রাজেডিতে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেন বক্তারা এ কথা জানান। ২৩/২ তোপখানা রোড, ঢাকাস্থ নির্মলসেন মিলনায়তনে জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রমিকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক মোঃ বাহারানে সুলতান বাহার।
মোঃ বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশন লিঃ এর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছিলো ১১৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী এবং আহত হয়েছিল প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক। সে সময় অনেক সংগঠন, দেশী-বিদেশী এনজিও, ব্যাংক-বীমা, শ্রম মন্ত্রনালয়, বিজিএমইএ’র আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বুক ভরে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং অতিদ্রুত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনবেন। আমরা অতি দুঃখের মাঝেও সুখের হাসি হেসেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র কয়েকজন শ্রমিককে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিলেন এবং দোষীরা আজও বহাল তবিয়তে রয়েছে।
আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের ৫টি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, আমরা প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী বিভিন্ন ভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছি। কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য সহযোগিতা আমরা পাইনি। তাই আজ নিজেদের জীবন রক্ষার্থে আপনাদের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাদের এ দুঃখ দুর্দশার কথা মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে আমরা যারা এখানো কর্ম অক্ষম হয়ে আছি তাদের পুনর্বাসন ও প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাজরীন দুর্ঘটনার পর ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) সর্বমোট ১৭৩ জন শ্রমিককে আর্থিক সহায়তা করেছিলো। ২০১৬ সালের জুন মাস থেকে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। একইসঙ্গে বিলস এবং সিআরপি আশুলিয়া শাখা কর্তৃক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় নিবন্ধিত ১৭৩ জন শ্রমিককে। প্রথম দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে এই চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তা সিআরপি আশুলিয়া শাখা তত্ত্বাবধান করে।
অন্যদিকে, ওয়ালমার্ট, জারু, কেকে বায়ার, সিএনএ, লিন্কিন, গ্যাপ, একল্যান্ডসহ সর্বমোট ১৬টি বায়ারের কাজ চলত তাজরীন ফ্যাশনে। কিন্তু ঘটনার সময় বায়ারের কাজ চলছিল। পরবর্তীতে বায়ার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তা আজ অবধি দেওয়া হয় নাই। তাছাড়াও অনেক বায়ার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা পায় নি। বিজিএমইএ কিছু শ্রমিককে সামান্য ক্ষতিপূরণ দিলেও আহত শ্রমিকরা কোন সাহায্য পায়নি। ব্রাক ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলো আজও তা দেওয়া হয়নি। তাজরীন ফ্যাশন লিঃ এর মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বললেও সেটা শুধু মিথ্যা আশ্বাস ছাড়া কিছুই ছিলো না।ওশি ফাউন্ডেশন আর্থিক সহায়তার কথা বলে এই সব অসহায় শ্রমিকদের বিভিন্ন লোভ দেখান এবং পরবর্তীতে কোন সাহায্য করে নাই। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা বিভিন্ন ভাবে এই সংগঠনের দ্বারা হয়রানির শিকার হোন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আহত এবং নিহত শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের দাবিতে ২৪ নভেম্বর তাজরীন ট্রাজেডির দিন সকাল সাড়ে সাতটায় সাভারের নিশ্চিন্তপুর তাজরীন গার্মেন্টসে দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্মৃতিস্তম্ভ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন শ্রমিকরা। এদিন সকাল নয়টায় জুরাইন কবরস্থানে নিহত শ্রমিকদের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো হবে। এরপর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দাবী আদায়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সাথে নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট।
সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা, তাজরিন ট্রাজেডিতে আহত শ্রমিক মোঃ মিরাজ, মোঃ সোলেমান, জরিনা, রোখছানা, রেহেনা, নাসিমা প্রমুখ।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা