অনলাইন ডেস্ক
উত্তরবঙ্গের ১৩টি জেলার হাজার হাজার লোক এই ঘাট দিয়ে পার হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যেত। দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ময়মনসিংহ অঞ্চলের যোগাযোগের সেতুবন্ধের এই ঘাটটি যমুনার দুই পারের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিল, কিন্তু নাব্যতা সংকট এবং যমুনা নদীর গতি-প্রকৃতি বারবার বদলে যাওয়াসহ নানা কারণে এবং বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর ২০০৫ সালের ১৫ জুন এই ফেরিঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়।
এর পর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই নদীপথে চলাচল করছে । প্রতিকূল পরিবেশে ও আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় বহু লোক নৌকা ডুবে প্রাণ হারিয়েছে। ছোট ছোট নৌকায় শত শত যাত্রী খরস্রোতা যমুনা নদী দিয়ে পার হচ্ছে। দুই পারেই বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে। এভাবেই চলছে যমুনার দুই পারের লোকজনের যাতায়াত।
২০১৩ সালের ২৯ মার্চ বিআইডাব্লিউটিএ-এর প্রশাসনসংক্রান্ত এক সভায় নৌরুটটি আবারও চালু করে ফেরিঘাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালের ১২ মার্চ এখানে আসেন নৌমন্ত্রী, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে ফেরি চালুর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। তার আলোকে ডিপিডি প্রস্তুত করা হয়।
২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প দুইবার সংশোধন করে ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি দুই লাখ টাকা ধরা হয় এবং ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।
প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে এসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কারিগরি টিম গঠন করে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এপ্রিল-মে মাসে এসে এই কমিটি সরেজমিনে এই নৌরুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে নৌরুটের নাব্যতা সংকট, ২৬ কিলোমিটারের বিশাল দূরত্বের নৌপথ, একবার পার হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগা এবং স্টেকহোল্ডার অ্যানালিসিস ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করে প্রকল্পের স্থান নিরূপণ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে এই রুট ফেরি চলাচলের উপযোগী নয় বলে মতামত দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে দুই প্রান্তের ফেরিঘাট অন্যত্র স্থানান্তরসহ নির্মিত স্থাপনা অন্য কাজে লাগানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিআইডাব্লিউটিএর কারিগরি কমিটির এই সিদ্ধান্তে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রকল্পের ১৩৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা খরচ করে বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ব্যারাকসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ করার পর কারিগরি কমিটি হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত প্রদান করায় বিআইডাব্লিউটিএর কাজের ভূমিকা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
অনেকের অভিযোগ, আগে সম্ভাব্যতা যাচাই না করে কাজ শুরু করে শেষ পর্যায়ে এসে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট প্রকল্পটি বাতিল করা ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট এরিয়ার জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বাহাদুরাবাদ বালাসী ফেরিঘাটটি চালু করার জন্য যা কিছু করা দরকার তা-ই করব। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে এলে দুইজন মিলে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ফেরিঘাট চালু হবে, এটি এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল। ফেরিঘাট চালুর স্বপ্নে আশায় বুক বেঁধে ছিল সবাই- এ ঘটনায় আশাহত হয়েছে। নৌরুট পুনরায় চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রসিদ জানান, এই ফেরিঘাট চালু হলে মানুষের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হবে এবং এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। আমি আশা করি কারিগরি কমিটি আবার সমীক্ষা চালিয়ে কিভাবে নৌরুটটি চালু করা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- আমি সেই প্রত্যাশা করছি।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা