অনলাইন ডেস্ক
স্বাস্থ্যখাতকে অবহেলা ও গুরুত্ব না দেয়ার ফল আমরা করোনায় পেয়েছি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে ২৪তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে আমরা কতটা অসহায়, সেটা দেখেছি।
শুধু আমরাই নই, পৃথিবীর কোনো দেশই স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেয়নি। আমি মনে করি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য আমাদের আরো বেশি এগিয়ে আসা দরকার।
করোনা আমাদের দেখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবার যদি বিপর্যয় ঘটে, তাহলে মানুষের কী অবস্থা হয়। দেশের সব উন্নয়ন থেমে যায়, দেশে শান্তি থাকে না, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যখাতে আমাদের বাজেট জিডিপির মাত্র ০.৯%। আমরা কাজ করছি জিডিপিতে এটাকে ৯/১০ শতাংশ করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক।
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। করোনা মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও ভালো কাজ করছে। তারা আলাদা করে বড় একটি করোনা ইউনিট স্থাপন করেছে। এখানে টিকা কার্যক্রমও সফলতার সঙ্গে চলছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ আমরা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামলে নিয়েছিলাম। বর্তমান সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ সম্পর্কে আমরা সচেতন না হলে সামনে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ চলে আসতে পারে। তখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এ কারণে করোনার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে দেশের প্রতিটি মানুষকে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যখন করোনায় মৃত্যু তিন-চার জনে নেমেছিল, তখন মানুষ ভেবেছিল করোনা দেশ থেকে চলে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষ অনীহা দেখাচ্ছিল। কক্সবাজার, সিলেটসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ভ্রমণ করেছে। অধিক হারে বিয়ের অনুষ্ঠান, পিকনিকসহ নানা রকম সামাজিক অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এসব কারণেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। দিনে প্রায় শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সময় মতো সরকার ‘লকডাউন’ ঘোষণা করায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব হয়ত সামনেই কমে যাবে।
টিকা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা শুরুতে খুব ভালোভাবেই টিকা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাঝ পথে ভারত টিকা বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের থেমে যেতে হয়েছে। আপনারা জানেন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবু বিকল্প হিসেবে আমরা রাশিয়ার টিকা অনুমোদন দিয়েছি, যেন আমাদের টিকা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারি। এছাড়া কেউ যদি দেশে টিকা বানাতে চায়, সে সুযোগও আমরা দিচ্ছি।
আমরা বলেছি, যে কেউ টিকা বানালে আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আমাদের দেশে কয়েকটি ফ্যাক্টরি রয়েছে, যেখানে তারা টিকা তৈরি করতে পারে। আমরা চাই তারা টিকা বানিয়ে আমাদের দেশের মানুষকেও দিক এবং দেশের বাইরেও রফতানি করুক।বিএসএমএমইউ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং চিকিৎসা গবেষণায় যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা জানি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা হয়, হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে উচ্চশিক্ষা লাভ করে ডাক্তার হয়। এখান থেকে চিকিৎসক হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই প্রতিষ্ঠানটিতে পাস করে চিকিৎসকরা বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সম্মানজনক অবস্থায় তারা কাজ করছেন। আমরা গর্বিত এ প্রতিষ্ঠানের জন্য। বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন অনেকে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা আরও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে যাক। যতো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা লাগে আমরা করব।সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে উঠেছে।
আগামী দিনে শুধু দেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা ও গবেষণায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই এ দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হলো আমরা যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবো।তিনি আরো বলেন, বিশ্ব দরবারে চিকিৎসা শিক্ষা, সেবা ও গবেষণার মানদণ্ডে রোল মডেলে পরিণত করতে এখানে কর্মরত সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
চিকিৎসার জন্য রোগীদের যাতে দেশের বাইরে যেতে না হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম. ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, সার্জারি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, নার্সিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, শিশু অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জুলফিকার আহমেদ আমিন প্রমুখ।এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যবৃন্দ, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী প্রতিনিধিগণ ভার্চুয়ালি অংশ নেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান।
আরোও পড়তে পারেন : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ