অনলাইন ডেস্ক
এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহজাদপুর পৌর শহরের বিসিক বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ অবরোধ চলাকালে শত শত পাবলিক ও পুলিশের সামনে আবিদ নামের এক ছাত্র হাতের রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমিনুর রহমান শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় পিপিডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সহপাঠীদের একের পর এক আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিকে এ অবরোধ চলাকালে পাবনা-ঢাকা সহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় আটকাপড়া যানবাহনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠাতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা নাকোচ করে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর পৌনে ১টার দিকে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়মন আহমেদ শাহীন কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। এরপর শিক্ষার্থীদের জামায়াত-বিএনপি আখ্যা দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের ২ নভেম্বরের উপনির্বাচন বানচালের চেষ্টায় এ সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এরপর অবরোধে বাধা দিয়ে তাদের মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে ওই নেতা দলবল নিয়ে অবরোধ এলাকা ত্যাগ করেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুলিশের অনুরোধে তারা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে রবির একাডেমিক ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এরপর তারা একাডেমিক ভবনের প্রধান গেটে তালা দিয়ে রবির রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র আবু জাফর বলেন, রবি প্রশাসন আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চায় না। তারা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে রক্ষায় নানা অজুহাতে লুকোচুরি খেলছে। শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হলেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাব। পরীক্ষায়ও অংশ নেব। অথচ রবি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই গত শুক্রবার সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করে আমাদের অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এতে আমাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে আমাদের অনেকেই হাত কেটে ও বিষপানে আত্মাহুতির চেষ্টা করেছেন। তিনি মহাসড়ক অবরোধকালে ছাত্রলীগ নেতা শাহীনের অতর্কিতে চড়াও হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মারুফ হোসেন সুনাম বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চড়াও হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা দলের কোনো সিদ্ধান্ত না। শাহীন ব্যক্তিগতভাগে এ কাজ করে থাকতে পারেন। অচিরেই দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে মহাসড়ক অবরোধ শেষে আমাদের একাডেমিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছে, আমরা বাইরে বের হতে পারছি না। ফলে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারছি না।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত ভিসি) আব্দুল লতিফ জানান, সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত মূলতবি করা হয়েছে। কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ বাকি রয়েছে। খুব শিগগিরই ফের সিন্ডিকেট সভা বসবে এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক শিক্ষার্থী “অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার” চেষ্টা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সকল পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তাল ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে। ওইদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
পরে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। অবশেষে এ অচলাবস্থা নিরসনে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সিন্ডিকেট মিটিং শেষে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করা হয়। এরপরও প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আশ্বাসে তারা ২ অক্টোবর অবরুদ্ধ প্রশাসনিক ভবন খুলে দেন। তবে চুল কেটে দেওয়া ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান করবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা